হারের দায় নিলেন দরিভাল, ব্রাজিলের লক্ষ্য ‘পরবর্তী বিশ্বকাপ’
২০২২ কাতার বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা এর পর থেকে এখন পর্যন্ত সেই হতাশার গ্লানি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। মাঝে ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্সের পর এবার কোপা আমেরিকায়ও তাদের বিদায় হয়েছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। ব্রাজিল দলে ফিনিশিং, মাঝমাঠে দুর্বলতা ও সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে বড় আকারে। এসব ছাপিয়ে এখন পরবর্তী বিশ্বকাপকেই লক্ষ্যে পরিণত করেছে সেলেসাওরা।
সেমিফাইনালে ওঠার কাজটা দরিভাল জুনিয়র শিষ্যদের জন্য যে সহজ হবে না সেটি আগেই জানা ছিল। আজ (রোববার) উরুগুয়ের বিপক্ষে সেসব হিসেব চুকিয়ে দেওয়ার কাজটা করতে পারেনি ভিনিসিয়ুস বিহীন ব্রাজিল। যদিও পুরো ম্যাচে তারা যেমন নিজেরা গোল হজম করেনি, তেমনি প্রতিপক্ষের জালেও বল পৌঁছাতে পারেনি একবারও। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ালে উরুগুয়ে ৪-২ ব্যবধানে জয় নিয়ে ব্রাজিলকে তিক্ত হারের স্বাদ দেয়।
বিজ্ঞাপন
এরপর ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের করুণ দৃশ্য না দেখলেও অনুমান করা কঠিন নয়। হার নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের কেউ হাঁটু গেড়ে মাঠে বসে আছেন তো কেউ দু’হাতে মুখ লুকাচ্ছেন। কারও দৃষ্টি শূন্যে তো কেউ উপুড় হয়ে পড়ে আছেন মাঠে। হারের হতাশা লুকাতে পারছিলেন না কেউই। ফলে আগেভাগেই কোপায় বিদায় নিশ্চিত করা ব্রাজিলের লক্ষ্য এখন ২০২৬ বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে হওয়াই স্বাভাবিক। কোচ দরিভাল ও তরুণ তারকা এন্ড্রিক ফেলিপে–ও সেদিকেই মনোযোগী হওয়ার কথা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ার দায় নিজের বলেও উল্লেখ করেন ব্রাজিল কোচ।
লাতিন অঞ্চলের বাছাইপর্বে ব্রাজিলের বর্তমান অবস্থান ছয়ে। ছয় ম্যাচ খেলে দুই জয় আর এক ড্রয়ে তাদের পয়েন্ট মাত্র সাত। এমন পরিস্থিতি কাটিয়ে বাছাইপর্ব পেরোনোর পথ বের করাই এখন কোচ দরিভালের লক্ষ্য, ‘আবারও বলছি, আমাদের গড়ে ওঠার, বিকশিত হওয়ার ও উন্নতি করার অনেক জায়গা আছে। আপাতত আমাদের মূল লক্ষ্য পরের বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়া। এখন আমরা পয়েন্ট তালিকায় (বাছাইপর্বে) ছয় নম্বরে আছি এবং তা নিয়ে মোটেও স্বস্তিতে নেই আমরা।’
কোপা থেকে বিদায়ের পর ব্রাজিল দলকে গুছিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে নিতে চান দরিভাল। ৬২ বছর বয়সী এই কোচ তিনি বলেন, ‘এই দলটির গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কিংবা পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে এখন। আমি মাত্র আট ম্যাচে দলটিকে কোচিং করিয়েছি এবং এই প্রক্রিয়াটা আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। এই পথচলায় যত প্রতিবন্ধকতা আসবে, সেসব নিয়ে আমরা সচেতন। তবে এটাও আমরা জানি যে, একটি নক-আউট ম্যাচে আমরা হেরে গেছি এবং এটা আমাদের প্রত্যাশিত ছিল না। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে বেশকিছু সমস্যা ছিল, পরে অনেক ভুল আমরা ঠিকঠাক করে নিয়েছি। এই অল্প সময়ে প্রক্রিয়াটা গতিময় করার কাজটি কঠিন ছিল। আমার মনে হয়, সামনে সেই সময়টা আমরা পাব।’
আরও পড়ুন
অন্যদিকে, প্রথমবারের মতো উরুগুয়ের বিপক্ষে ব্রাজিলের মূল একাদশে জায়গা পেয়েছিলেন এন্ড্রিক ফেলিপে, যাকে বলা হচ্ছে সেলেসাওদের ভবিষ্যৎ। তবে প্রথমবার জাতীয় দলের হয়ে কোপা আমেরিকার মতো বড় মঞ্চে পুরো ম্যাচ খেলা তার জন্য বড় সুযোগ ছিল। যদিও তার ‘ফ্লপ’ থাকার দিনে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছে ব্রাজিল। এমন হারের পর নিজের হতাশা লুকাননি ১৭ বছর বয়সী তরুণ, ‘আমি দুঃখিত, শুধু আমরাই নই, পুরো ব্রাজিলিয়ান গোষ্ঠীর মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। এভাবে বিদায় মেনে নেওয়া কঠিন, তাও আবার পেনাল্টি শ্যুট আউটে। কঠিন হলেও আমরা মাথা উঁচু রাখতে চাই, কারণ আমরা ব্রাজিলকে আবারও তাদের শীর্ষস্থানে নিয়ে যেতে চাই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি এখানে হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব, প্রস্তুতি শুরু করব পরবর্তী বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এবং আশা করি এই সময়ে ব্রাজিলিয়ানদের সমর্থন আমাদের পাশে থাকবে। আমরা জানি তাদের জন্য-ও বিষয়টা কঠিন, কিন্তু তাদের সমর্থনই আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। প্রথমবার শুরুর একাদশে খেলার সুযোগ পেয়ে আমি সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই।’
এএইচএস