ফুটবলে নিজেদের সোনালি অতীতটাও নেদারল্যান্ডস পেরিয়ে এসেছে অনেকটা দিন আগেই। সেই সত্তরের দশকে টোটাল ফুটবল দিয়ে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেয়া। এসি মিলানের 'দ্য থ্রি ডাচম্যান' রুট গুলিত, ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ড আর মার্কো ভ্যান বাস্তেনরা দেশটিকে এনে দিয়েছিলেন তাদের একমাত্র ইউরো শিরোপা। শেষবার তারা সেমিফাইনালে উঠেছিল ২০ বছর আগে। তবে সেসব দুঃসময় পার করে নেদারল্যান্ডস স্বপ্ন দেখছে নিজেদের ফিরিয়ে আনার।

গেল কয়েক বছর ধরেই ভার্জিল ভ্যান ডাইক, মেম্ফিস ডিপাই, কোডি গাকপো, ডেনজেল দামফ্রিসরা নেদারল্যান্ডসকে বড় মঞ্চে মেলে ধরেছেন দারুণভাবে। উয়েফা নেশন্স লিগে তারা খেলেছিল ফাইনালে। এবার ২০০৪ সালের পর প্রথমবার পা রাখল ইউরোর সেমিতে। জার্মানির বার্লিনে তুরস্ককে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে রোনাল্ড কোম্যানের শিষ্যরা চলে গেল শেষ চারে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ গ্যারেথ সাউথগেটের ইংল্যান্ড। 

এই জয়ের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হলো ইউরোর এবারের আসরে সেমিফাইনালের লাইনআপ। প্রথম সেমিতে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা স্পেনের বিপক্ষে লড়বে ফ্রান্স। আর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। সেমির চারদলের মাঝে তিনটিই এর আগে কোনো না কোনো পর্যায়ে ইউরোর শিরোপা ঘরে তুলেছিল। একমাত্র ইংল্যান্ডই এর আগে কখনোই ইউরো জেতার স্বাদ পায়নি। 

বার্লিনে অবশ্য শুরুটা দারুণ ছিল তুরস্কের জন্য। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার সেমিফাইনালে যাওয়ার রাস্তাটা প্রথমার্ধেই খুঁজে পেয়েছিল তারা। সেটাও তরুণ সেনসেশন আর্দা গুলেরের কল্যাণে। গোলদাতা সামিত আকায়দিনের চেয়ে গুলেরের ক্রসটাই এদিন বেশিরভাগ আলোচনায় থাকবে। ৩৫ মিনিটে ডাচ বক্সে জটলার মাঝে যেভাবে সতীর্থ সামিতের মাথা নিখুঁত ক্রসে খুঁজে পেয়েছিলেন, সেটা ফুটবল ভক্তরা মনে রাখতে বাধ্য। 

দ্বিতীয়ার্ধে ডাচরা ম্যাচে ফেরার প্রচেষ্টা চালায়। ধীরে ধীরে ম্যাচে তারা ফিরেও আসে। প্রথম দশ মিনিটে দুরপাল্লার শটেই ছিল আস্থা। তুরস্ককে মনস্তাত্বিক চাপে ফেলার কাজটা তখনই সেরে নেয় দলটা। এর ফল আসে৭০ মিনিটে। মেম্ফিস ডিপাই কর্নার থেকে ওয়ান-টু খেলে বক্সে ক্রস ফেলেন। হেডে গোল করেন ডাচ সেন্টার-ব্যাক স্তেফান দে ফ্রাই। ছয় মিনিট পর আবারও গোল। এবার সেটা এসেছে আত্মঘাতী গোলে।  

৭৬ মিনিটে ডেনজেল ডামফ্রিস ডান প্রান্ত থেকে ক্রস করেছিলেন। তুর্কি রাইট-ব্যাক মের্ত মুলডুর ডাচ তারকা কোডি গাকপোর কাছ থেকে বলটি ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে পাঠিয়েছেন। চলতি ইউরোয় এটি ১০ম আত্মঘাতী গোল।

তুরস্ককে উৎসাহ দিতে এদিন মাঠে এসেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। এছাড়া জার্মানিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তুর্কি অভিবাসীরা ছিলেন গ্যালারি মাতাতে। তুরস্ক থেকেও উড়াল দিয়েছিলেন অনেকে। গোল উদযাপনে রাজনৈতিক বার্তা দিয়ে নিষিদ্ধ ছিলেন তুরস্কের মেরি ডেমিরাল। সেসব উত্তেজনার স্পর্শ দেখা গিয়েছিল মাঠে। তবে সব ছাপিয়ে জয়টা এসেছে ডাচদের ডেরায়।  

জেএ