ব্রাজিলের কোচ হিসেবে দোরিভাল জুনিয়রের যাত্রাটা ছিল সুন্দর। ফার্নান্দো দিনিজের অধীনে সেলেসাও দলটিকে খুঁজে পাওয়া ছিল দুষ্কর। বাছাইপর্বে একের পর এক হার ব্রাজিল দলকে টেনে নিয়েছিল খাদের কিনারায়। এমন অবস্থায় অনেকটা ক্রাইসিস ম্যানের ভূমিকাতেই ব্রাজিলের দায়িত্বে আসেন দোরিভাল জুনিয়র। 

এরপর ইংল্যান্ডকে হারিয়েছেন তাদেরই মাটিতে। স্পেনের বিপক্ষে ৩-৩ গোলের ড্র দিয়ে নিজেদের নতুন যাত্রা শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিল ব্রাজিল। মেক্সিকোর সঙ্গেও বিষ্ময়বালক এন্ড্রিকের গোলে এসেছিল জয়। রীতিমত উড়ন্ত ছন্দে ছিল নতুন যুগের ব্রাজিল। কিন্তু কোপা আমেরিকা শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১-১ গোলের ড্র আর কোপার উদ্বোধনী সূচিতে কোস্টারিকার বিপক্ষে ড্র খানিকটা হলেও ধাক্কা দিয়েছে দোরিভাল জুনিয়রের পরিকল্পনাতে। 

অবশ্য প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ৪-১ গোলের জয় পেয়েছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু আগামীকাল ভোরেই বড় পরীক্ষা দিতে হবে ব্রাজিলকে। এখনো কোপা আমেরিকায় কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত না করা ব্রাজিল মুখোমুখি হবে টানা ২৫ ম্যাচ অপরাজিত থাকা কলম্বিয়ার। বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় শুরু হবে এই ম্যাচ।

সাম্প্রতিক সময়ে এসে বেশ ভালো রকমের জাদুই দেখাচ্ছে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া। একঝাঁক তরুণ আর পরীক্ষিত মুখেদের নিয়ে দারুণ এক দল গড়ে তুলেছেন কলম্বিয়ার আর্জেন্টাইন কোচ নেস্টোর লরেঞ্জো। যে কোস্টারিকাকে গোল দিতে ব্রাজিল হিমশিম খেয়েছে গত ম্যাচে তাদের জালে ৩ গোল পুরেছে লুইস দিয়াজরা। গেল ২ বছর আর ২৫ ম্যাচ হারের মুখ দেখেনি এই দলটি। 

হামেস রদ্রিগেজের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলার নেস্টোর লরেঞ্জোর অধীনে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন নতুন করে। কোপা আমেরিকায় করে ফেলেছেন ৩ অ্যাসিস্ট। দলে আছেন লিভারপুলের বড় তারকা লুইজ দিয়াজ আর রাশিয়ান লিগ মাতানো জন কর্ডোবা। মাঝমাঠে জেফেরসন লেরমা বড় তারকা। তবে রিচার্ড রিওস বা ম্যাথিউস উরিবেও কম যান না। বর্তমানে দলটি আছে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের ১২তম স্থানে। 

ব্রাজিলের জন্য বড় শক্তি তাদের দলের বড় তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের ফর্মে ফেরা। প্যারাগুয়ে ম্যাচেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন পুরোদমে। দুই গোল করে দলের জয়ের মূল পার্থক্য গড়ে দেন তিনি। সঙ্গে লুকাস পাকেতাকে পেনাল্টি উপহার দিয়ে প্রমাণ করেছে নিজেদের দলীয় বোঝাপড়াকে। তবে স্ট্রাইকার রদ্রিগোর গোল না পাওয়া চিন্তায় ফেলতে পারে সেলেসাও ভক্তদের। 

রক্ষণ নিয়ে ব্রাজিল অবশ্য খুব একটা চিন্তিত নয়। ডাবল পিভট রোলে ব্রুনো গিমেরায়েস বা হোয়াও গোমেজ নির্ভরতার প্রতীক। রক্ষণে মার্কিনিওস কিংবা লুকাস বারেলদোরা নিশ্চিতভাবেই ভরসা জোগাবেন তাদের। আর গোলবারের নিচে অ্যালিসন বেকার তো থাকছেনই। 

ব্রাজিলের বড় সমস্যা দলে লো-ব্লক ভাঙার মতো কার্যকরী মিডফিল্ডারের অভাব। রদ্রিগোর সঙ্গে ভিনিসিয়ুস কিংবা রাফিনহার চ্যানেল বন্ধ করতে পারলেই ভোগান্তিতে ফেলা সম্ভব ব্রাজিলকে। নেইমার জুনিয়রের মতো সৃষ্টিশীল নাম্বার টেনের রোল ভালোভাবেই মিস করছে তারা। 

কোয়ার্টারে যাওয়ার লড়াইয়ে এই কলম্বিয়ার বিপক্ষেই মাঠে নামবে তারা। যেখানে জয় ছাড়া ভিন্ন কিছু ভাবতে চাইবে না দোরিভালের শিষ্যরা। ৩ ম্যাচ থেকে ৪ পয়েন্ট পেয়েছে ব্রাজিল। পরের ম্যাচে হেরে গেলে এবং কোস্টারিকা প্যারাগুয়েকে হারালে বিপাকে পড়তে হবে তাদের। যদিও ব্রাজিল ড্র করে ফিরলেও চলে যাবে কোয়ার্টারে। যদিও তাতে অপেক্ষা করছে আরও বড় বিপদ। 

ড্র করলে ব্রাজিল হবে ‘ডি’ গ্রুপের দ্বিতীয় দল। কোয়ার্টারে খেলতে হবে ‘সি’ গ্রুপের সেরা দল উরুগুয়ের বিপক্ষে। মার্সেলো বিয়েলসার অধীনে যে দলটি রীতিমত অপ্রতিরোধ্য। ২০২২ সালের বিশ্বকাপের পর উরুগুয়ের দায়িত্ব নিয়ে তারুণ্যনির্ভর এক দল গড়েন ক্ষ্যাপাটে কোচ বিয়েলসা। 

আর গ্রুপের সেরা হয়ে উঠলে ব্রাজিলের সামনে আসবে অপেক্ষাকৃত সহজ দল পানামা। ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচে বলিভিয়াকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে তারা জায়গা করে নিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে। ব্রাজিলের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রতিপক্ষ নির্ধারণটাও তাই এখন অনেকটা নিজেদের হাতেই। ড্র কিংবা পরাজয় তাদের দাঁড় করাবে উরুগুয়ের সামনে। আর জিতলে তাদের প্রতিপক্ষ হবে পানামা। 

জেএ