বার্ষিক সাধারণ সভার অন্যতম বিষয় সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন। সাধারণ সম্পাদক ফুটবল ফেডারেশনের কার্যক্রম ও সামগ্রিক একটি চিত্র প্রতিবেদন আকারে পেশ করেন। বাফুফের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারের রিপোর্টে অসম্পূর্ণতা রয়েছে। 

২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল ফিফা বাফুফের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে নিষিদ্ধ করে। বাফুফে সেই প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশও ছিল। সকল ঘটনাই ঘটেছে ২০২৩ সালের মধ্যে। বাফুফের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ২৯ অক্টোবর ২০২২ সালের পরবর্তী সময় থেকে অদ্যবধি প্রতিবেদন করেছেন। সেই প্রতিবেদনে ফিফার নিষেধাজ্ঞা-সোহাগ কাণ্ড সম্পূর্ণ উধাও। 

বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার ১১ পাতার রিপোর্ট পেশ করেছেন। সেই রিপোর্টে গত দেড় বছরে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন, ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের ফিরিস্তির পাশাপাশি জাতীয় দিবসের নানা কর্মসূচিও বিশেষভাবে উল্লেখ আছে। অথচ ফুটবল ফেডারেশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আবু নাইম সোহাগকে আজীবন নিষেধাজ্ঞা ও তদন্ত বিষয়টি একটি লাইনও দেননি। 

বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার এবং উপস্থাপিত প্রতিবেদন

সোহাগ ও ফিফার ঘটনা রিপোর্টে না থাকার কারণ সম্পর্কে বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের ব্যাখ্যা, ‘সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদেন ফুটবলের নানা টুর্নামেন্ট/লিগ সম্বলিতই থাকে। বিগত বছরের আমি সেই ধারাবাহিকতার রীতিই অনুসরণ করেছি।’ শরীয়তপুর জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক চঞ্চল বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্টে সোহাগ ও ফিফা নিষেধাজ্ঞার অনুপস্থিত বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অন্য কেউ আর এই প্রসঙ্গে কিছু না বলায় বাফুফে কর্তাদের তেমন সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়নি। ফুটবলে ফিফার এমন কাণ্ড ঘটলেও তারা এতটাই নির্বিকার।

আজকের এজিএমে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নারী লিগে কাউন্সিলরশিপ প্রদান। এই আলোচ্যসূচিতে কোনো মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ দেননি ডেলিগেটদের। কেউ চেয়েছিলেন চারটির পরিবর্তে দু’টি দলকে কাউন্সিলর দেয়ার। আবার কেউ পরবর্তী এজিএমে পাঠাতে চেয়েছিলেন। এজিএম পরিচালনা করা সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলরদের এই ইস্যুতে কোনো কথাই বলতে দেননি। তাই তার উপর কন্ঠরোধের অভিযোগ। 

তবে তিনি সেটি  খন্ডিয়ে যুক্তি দাড় করালেন এভাবে, ‘সাধারণ পরিষদ এটা হয় গ্রহণ না হয় প্রত্যাখ্যান করবে। সবাই স্বাধীন মতো হ্যাঁ-না মতামত প্রকাশের জন্য উন্মুক্ত ছিল। এর বাইরে অন্য কিছু বলার সুযোগ নেই। ফিফা-এএফসি’তেও এভাবে প্রস্তাবনা পাশ/বাতিল হয় আলোচনার সুযোগ থাকে না।’ 

নির্বাহী কমিটিতে আলোচ্যসূচিতে সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হলে বার্ষিক সাধারণ সভায় আলোচনার সুযোগ না দিয়ে সরাসরি ভোটাভুটি হওয়ার প্রক্রিয়া অনেক সংগঠকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ। সরাসরি ভোটাভুটি প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হওয়ায় কেউ সবুজ বোর্ড হ্যাঁ ও কয়েক জন লাল বোর্ডে না তুলেছেন। শেষ পর্যন্ত হ্যা জয়যুক্ত হওয়ায় নারী লিগের চার দল (নাসরিন, আতাউর, আর্মি ও সদ্যপুষ্করণী) কাউন্সিলরশিপ পেয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বাফুফে কর্তারা 

নারী লিগের কাউন্সিলরশিপ অনুমোদন পাওয়ার পর আলোচ্যসূচির বিবিধ অংশে  নড়াইল, শরীয়তপুর, যশোর,চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন, বিকেএসপি ও এক ক্লাব প্রতিনিধি সাধারণ কিছু বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। নড়াইল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি আশিকুর রহমান মিকু জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের আর্থিক-অবকাঠামো নানা সমস্যা তুলে ধরে ফেডারেশন থেকে সহযোগিতা পাওয়ার আহ্বান জানান। 

বিকেএসপির পরিচালক (প্রশিক্ষণ) বাফুফে ও বিকেএসপির মধ্যে খেলোয়াড় আদান-প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ ও সহজকরণ নিয়ে বক্তব্য দেন। একজন ক্লাব কর্মকর্তা জুনিয়র ডিভিশন লিগে কমলাপুর স্টেডিয়ামে গরমে টার্ফে খেলার সময় পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন। 

কাউন্সিলরশিপ ছাড়াও বাফুফের এজিএমে অন্যতম আলোচ্যসূচি ছিল ২০২৪ সালের খসড়া বাজেট, ২০২২ ও ’২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন। ২০২৪ সালের জন্য ২৩ কোটি টাকা ঘাটতি ( আয় ৩১-ব্যয় ৫৪ কোটি) বাজেট অনুমোদিত হয়েছে আজকের সভায়। চলতি বছরের অর্ধেক সময় শেষ। বাকি সময় এই ঘাটতি পূরণ সম্পর্কে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘আমরা সরকার ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আর্থিক বিষয়ে কাজ করছি। আশা করছি অর্থ সংস্থান হওয়ার।’ 

বাফুফের নির্বাহী কমিটিতে দুই জন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য রয়েছেন। সংসদে ফুটবল বাজেট বৃদ্ধি বা আর্থিক সংকট নিয়ে কিছু বলেন কিনা এজিএম পরবর্তী মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এর উত্তরে খুলনার সংসদ সদস্য ও বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় কমিটিতে এ নিয়ে আলাপ করি।’

ডেলিগেটদের উপহারের শাড়ি

বার্ষিক সাধারণ সভায় আগত ডেলিগেটদের সৌজন্যমূলক উপঢৌকন দেয়ার সংস্কৃতি রয়েছে। ক্রিকেট বোর্ড অনেক অর্থশালী হওয়ায় ডেলিগেটদের ল্যাপটপও উপহার দেয়। বাফুফের অবশ্য আর্থিক সেই সামর্থ্য নেই। তাই এবার এসোসিয়েশন/সংস্থার অনুকূলে ১০ হাজার টাকার চেক প্রদানের পাশাপাশি প্রত্যেককে একটা করে শাড়ি উপহার দেয়া হয়েছে। এজিএমের ডেলিগেটদের প্রায় সবাই পুরুষ। ফুটবলের এজিএমে শাড়ি উপহার দেয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে। নির্বাহী কমিটির অনেকেই জানেন না শাড়ি উপহারের বিষয়টি। 

শাড়ি সম্পর্কে সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, ‘২০২২ সালের এজিএমেও শাড়ি দেয়া হয়েছিল। সীমিত বাজেট ও ফিফা-এএফসির গিফট নির্দেশনা মেনে এবারও শাড়ি দেয়া হয়েছে।’ শরীয়তপুর জেলার কাউন্সিলর এই শাড়ি ফেরত দিয়ে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের জন্য বল বরাদ্দ দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন।

এজেড/জেএ