দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো ফুটবল ক্লাবের নিজস্ব আলাদা স্টেডিয়াম আছে এমন রেকর্ড তেমন নেই। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব বসুন্ধরা কিংস একটি স্টেডিয়াম গড়ে তুলেছে। ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কিংস অ্যারেনায় প্রিমিয়ার লিগের ফুটবল ম্যাচ দিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। ঘরোয়া লিগ, টুর্নামেন্টের পাশাপাশি জাতীয় দলের অনুশীলন, ক্লাবের আন্তর্জাতিক ম্যাচ, জাতীয় দলের প্রীতি ম্যাচ থেকে শুরু করে বিশ্বকাপ বাছাই টুর্নামেন্ট সবই হচ্ছে কিংস অ্যারেনায়। বাংলাদেশের ফুটবলের প্রধান ভেন্যুই এখন কিংস অ্যারেনা।

কিংস অ্যারেনার বয়স মাত্র বছর তিনেক। এরই মধ্যে মাঠের সংস্কার প্রয়োজন হয়ে উঠেছে। সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে মাঠ পিচ্ছিল ও ভারী হয়। যা স্বাভাবিক ও সুন্দর ফুটবলের বড় প্রতিবন্ধকতা। আন্তর্জাতিক ম্যাচে এমন পরিস্থিতি খানিকটা বিব্রতকরও। তাই বসুন্ধরা কিংস মাঠ সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, 'বালু-মাটির সংমিশ্রণ কম-বেশি হওয়ায় মাঠে সামান্য বৃষ্টিতেই সমস্যা হচ্ছে। সংস্কার করে মাঠের আধুনিয়াকন করা হবে’ বলেন ক্লাব সভাপতি ইমরুল হাসান।

কিংস অ্যারেনায় মাঠ তৈরী করেছিলেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সাবেক প্রশাসক ও ফুটবল মাঠ বিশেষজ্ঞ মোঃ ইয়াহিয়া। স্টেডিয়ামের পাশাপাশি ফুটবলের জন্য আলাদা অনুশীলন মাঠও করেছে বসুন্ধরা কিংস। সেই মাঠটি স্টেডিয়ামের মাঠের চেয়ে বেশ উন্নত। টানা বৃষ্টি হলেও মাঠে পানি স্থায়ী হয় না। দক্ষ প্রকৌশলীর মাধ্যম স্টেডিয়ামের মাঠও এরকমভাবে তৈরির পরিকল্পনা কিংসের।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে সরাসরি গ্রুপ পর্বে খেলবে। ২৬ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পাঁচটি কেন্দ্রীয় ভেন্যুতে পাঁচটি গ্রুপে খেলা অনুষ্ঠিত হবে। ২২ আগস্ট টুর্নামেন্টের ড্র। এর আগেই স্বাগতিক হওয়ার আবেদন সময়সীমা।

কিংস অ্যারেনায় আন্তর্জাতিক অনেক ম্যাচ হলেও কোনো টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত একক ভেন্যু হয়নি। তাই স্বাগতিক হওয়ার আগ্রহ রয়েছে কিংসের, 'এবারের ফরম্যাটটি ভিন্ন। গ্রুপ পর্ব একটি ভেন্যুতে রাউন্ড রবিন লিগ ভিত্তিতে খেলা হবে। হোম ভেন্যুতে খেলতে পারলে অবশ্যই ইতিবাচক। আমাদের আগ্রহ রয়েছে আবেদন করার’ বলেন সভাপতি। জাতীয় দলের ম্যাচের সময় কিংস অ্যারেনায় দর্শক ঢুকে পড়ছেন। এজন্য ফিফা জরিমানাও দিচ্ছে। স্বাগতিক হওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা তেমন কোনো ফ্যাক্টর হবে না বলে মন্তব্য ক্লাব সভাপতির, 'চলমান ইউরোতেও পর্তুগাল ম্যাচে এমন ঘটনা ঘটেছে। বিশ্বকাপেও দেখা যায়। ভেন্যু নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটা তেমন বিষয় হবে না আশা করি।'

আনুষ্ঠানিক আবেদনের আগে ভাবনায় সেই মাঠ সংস্কার, 'আমাদের মাঠ সংস্কার লাগবেই। এর কোনো বিকল্প নেই। সংস্কারে ৪-৫ মাস লাগবে। এখন শুরু করলে গ্রুপ পর্বে স্বাগতিক হওয়া কঠিন। গ্রুপের খেলার পর শুরু করলে যদি আমরা কোয়ার্টারে উঠে যাই তখন আবার হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে খেলা। তখন তো হোম ভেন্যু লাগবে।’

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এখনো সংস্কারাধীন। ডিসেম্বরের আগে বাফুফে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম বুঝে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। জাতীয় দলের হোম ম্যাচও তাই কিংস অ্যারেনা নির্ভর। কিংস অ্যারেনা সংস্কার হলে জাতীয় দলের আসন্ন দুই উইন্ডোতে হোম ম্যাচ খেলার সম্ভাবনা আর থাকবে না।

সময় চূড়ান্ত না হলেও মাঠ সংষ্কার হবেই এটা নিশ্চিত। কিংস অ্যারেনা বসুন্ধরা কিংস ও শেখ রাসেলের ভেন্যু। সংস্কারকালীন সময় লিগের হোম ভেন্যু নিয়ে ক্লাব সভাপতির প্রাথমিক পরিকল্পনা, 'অনুশীলন মাঠটি বেশ ভালো এবং চারটি ড্রেসিংরুম রয়েছে। অস্থায়ী প্রেসবক্স এবং আরো প্রয়োজনীয় সাময়িক কিছু স্থাপনা করে সাময়িকভাবে ঘরোয়া ম্যাচ হতে পারে।’ প্রিমিয়ার লিগের হোম ভেন্যুর অন্যতম শর্ত স্টেডিয়াম। সেখানে গ্যালারি সহ আরো সাধারণ কিছু বিষয় জড়িত। কিংস অ্যারেনার অনুশীলন সেই সকল শর্ত পূরণ হয় কি না এবং লিগের অন্য দলগুলো কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটাই বিষয়।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে টানা পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। ঘরোয়া অঙ্গনে দাপট দেখানো ক্লাবটি এএফসির আসরে সফল হতে পারেনি এখনো। এএফসির নতুন ফরম্যাটে এটি আরো জটিল। আগে এএফসি কাপে দক্ষিণ এশিয়ার ক্লাবগুলো একটি গ্রুপেই পড়তো। এবার অন্য দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের ক্লাবের সঙ্গেও খেলতে হবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্লাবটি, 'প্লে অফের পরিবর্তে সরাসরি গ্রুপ পর্বে খেলায় একটি সুবিধা হয়েছে আমরা খেলোয়াড় সংগ্রহে একটু বেশি সময় পেয়েছি। মাস খানেকের মধ্যে বিদেশি খেলোয়াড় চূড়ান্ত করতে পারব। নতুন ফরম্যাটে বেশি চ্যালেঞ্জ থাকলেও আমরা সর্বোচ্চটা দিতে চাই’ বলেন ইমরুল। গুঞ্জন ছিল স্পেনিশ কোচ অস্কার ব্রুজন থাকছে না কিংসে। ছুটি কাটিয়ে পুনরায় ঢাকায় আসা সেই গুঞ্জন পুরো না কাটলেও খানিকটা কমেছে।

বাংলাদেশ এএফসি’র কম্পিটিশনে পশ্চিম জোনে। তাই কিংসকে গ্রপে চার দলের মধ্যে সেরা অথবা তিন গ্রুপ মিলিয়ে সেরা রানার্স আপ হতে হবে কোয়ার্টার খেলতে হলে। অন্য দিকে পূর্ব জোনে মাত্র ছয় দল। সেখানে দুই গ্রুপ থেকে দুই চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ খেলবে কোয়ার্টার। এক পাশে বারো দল থেকে চারটি আরেক দিকে ছয় দলের মধ্যে চারটি সুযোগ পাচ্ছে যা রীতিমতো বৈষম্যমূলক। বাংলাদেশ জাতীয় দল, ক্লাব সহ অনেক কিছুতে এশিয়ান পর্যায়ে বৈষম্যের শিকার। তাই এএফসির নির্বাহী কমিটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধির অবস্থান কতটুকু বলিষ্ঠ সেই প্রশ্ন উঠেছে ফুটবলাঙ্গনে।

এজেড/এইচজেএস