ভাবা হয়েছিল হাই-ভোল্টেজ লড়াই হবে। আদতে তা হয়ে দাঁড়াল ম্যাড়ম্যাড়ে এক ম্যাচ। শুক্রবার ইউরো কাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করল ফ্রান্স। নাকে চোটের কারণে পুরো সময় সাইড বেঞ্চে বসেই কাটিয়েছেন কিলিয়ান এমবাপে। তার অভাব গোটা ম্যাচেই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ফ্রান্স। বেশ কিছু ভালো গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল তারা। কিন্তু গ্রিজম্যানরা সেই সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন। নেদারল্যান্ডসের একটি গোল বাতিল হয় অফসাইডের কারণে। যদিও তা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে।

গোল মিসের মহড়া আর বিতর্কিত অফসাইডের সিদ্ধান্তে ম্যাচটা থেকে গেল ০-০ ড্র। এবারের ইউরোতে এটাই প্রথম গোলহীন ম্যাচ। আর তাতে শেষ ষোলোতে জায়গা নিশ্চিত করার অপেক্ষা বাড়ল দুই দলেরই।

গত দু’দিন ফেস গার্ড পরে এমবাপেকে অনুশীলনে দেখা গিয়েছিল। তবে শুক্রবার ফ্রান্সের প্রথম একাদশ দেখে অনেকেই চমকে গিয়েছিলেন। সেখানে ছিল না এমবাপের নাম। আগেই রিজার্ভ বেঞ্চে ফেস গার্ড পরে এমবাপেকে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তাকে যে প্রথম একাদশে রাখা হবে না তা অনেকেই ভাবতে পারেননি।

ঝুঁকি নেননি কোচ দিদিয়ের দেশম। তাই এমবাপেকে ছাড়া ফ্রান্স দলকে ৪-৪-১-১ ছকে নামিয়েছিলেন। একদম সামনে ছিলেন মার্কাস থুরাম। একটু পেছনে আঁতোয়া গ্রিজম্যান। প্রথম মিনিটেই নেদারল্যান্ডস একটি সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। বল পেয়ে মেম্ফিস দেপাই পাস দিয়েছিলেন জেরেমি ফ্রিমপংকে। তার শট বাঁচিয়ে দেন ফ্রান্স গোলকিপার মাইক মাইগনান।

১৪ মিনিটের মাথায় খুবই সহজ সুযোগ নষ্ট করে ফ্রান্স। বক্সে বল পেয়েছিলেন আদ্রিয়েন হাবিয়ঁ। তার সামনে একা গোলকিপার থাকলেও পাস দেন বাঁ দিকে থাকা গ্রিজম্যানকে। ফরাসি ফুটবলার সেই বল ধরতেই পারেননি। সামলাতে গিয়ে পড়ে যান। উঠে দাঁড়িয়ে বলের দখল নিলেও দ্রুত তাঁর পা থেকে বল কেড়ে নেন নেদারল্যান্ডসের ফুটবলারেরা। দু’মিনিট পরেই কোডি গাকপোর একটি শট বাঁচান ফরাসি গোলকিপার।

এরপর দুই দলের খেলার মধ্যেই ঝিমুনি লক্ষ্য করা গেছে। ঘর বাঁচিয়ে আক্রমণে ওঠার দিকে নজর দেয় দুই দল। যে কারণে খেলা আটকে থাকে মাঝমাঠেই। ফ্রান্সের ফুটবলারেরা প্রচুর মিস পাস করতে থাকেন। নেদারল্যান্ডসের কাছে বলের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও তারা আক্রমণে উঠতে পারছিল না। ফিনিশিংয়ের অভাব বারবার প্রকট হয়ে উঠছিল নেদারল্যান্ডসের খেলায়। 

এমবাপের মতো স্ট্রাইকার না থাকায় ফ্রান্সেরও গোল করার লোকের অভাব স্পষ্ট টের পাওয়া যাচ্ছিল। গ্রিজম্যান খেলা তৈরি করলেও থুরামকে দিয়ে গোল করাতে পারছিলেন না। সহজ একটি ফ্রিকিকের সুযোগ নষ্ট করেন। কর্নার থেকেও বলার মতো কোনও আক্রমণ ফ্রান্স তৈরি করতে পারেনি।

দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্স আবার ভালো সুযোগ পেয়েছিল ৬৫ মিনিটের মাথায়। চুয়ামেনি বল বাড়িয়েছিলেন থুরামকে। থুরাম ব্যাক হিল করে বল দেন ওসমানে দেম্বেলেকে। এর পর এনগোলো কান্তে ঘুরে বল যায় গ্রিজম্যানের কাছে। গোলের থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে থাকা গ্রিজম্যান বল বাঁ পায়ে রিসিভ করে বাঁ পায়েই শট মারতে যান। সেই শটে মোটেই জোর ছিল। ডাচ কিপার বার্ট ভারব্রুগেনের পায়ে লেগে তা কর্নার হয়ে যায়।

চার মিনিট পরে এগিয়ে গিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। ফ্রান্সের বক্সের মধ্যে বল নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছিল। সেখান থেকে বল পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে শট মেরেছিলেন জ়াভি সিমন্স। বল জালে জড়ালেও লাইন্সম্যান অফসাইডের নির্দেশ দেন। পরে ভার-এর পরীক্ষাতেও সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। বলা হয়, সিমন্সের শটের সময় ডেনজিল ডামফ্রাইস অফসাইডে ছিলেন এবং গোলকিপারকে ঝাঁপানোর জায়গা দেননি। সেই সিদ্ধান্তে নেদারল্যান্ডসের খেলোয়াড়দের একেবারেই খুশি হতে দেখা যায়নি। পরের দিকে কোনও দলই বলার মতো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। যদিও দু’দলের আক্রমণই বজায় থেকেছে।

গ্রুপে ফ্রান্স নিজেদের শেষ ম্যাচটা খেলবে আগামী মঙ্গলবার পোল্যান্ডের বিপক্ষে। একই দিন একই সময়ে নেদারল্যান্ডসের প্রতিপক্ষ অস্ট্রিয়া।

এফআই