টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে কোপা আমেরিকার ৪৮তম আসরে খেলতে নেমেছে আর্জেন্টিনা। দারুণ দাপট দেখানো বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা প্রথমার্ধ শেষ করে গোলশূন্য ড্রতে। সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে সেই আক্ষেপের মাত্রা আরও বাড়িয়েছেন আনহেল ডি মারিয়া, দ্বিতীয়ার্ধে একই পরিণতি মহাতারকা লিওনেল মেসিরও। তবে বিরতির পরই আর্জেন্টিনাকে লিড এনে দিয়ে আনন্দে ভাসান হুলিয়ান আলভারেজ। শেষ মুহূর্তের গোলে সেই উদযাপন দ্বিগুণ করেছেন লাউতারো মার্টিনেজ। ফলে কানাডার বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় নিয়ে কোপার শুভসূচনা করল আর্জেন্টিনা।

আটলান্টার মার্সিডিস বেঞ্জ স্টেডিয়ামে লিওনেল মেসি পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই ইতিহাস গড়ে ফেলেন। কোপা আমেরিকায় এতদিন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩৫ ম্যাচ খেলার আজ (শনিবার) রেকর্ড ভেঙে দিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। একইসঙ্গে তিনি প্রথম কোনো আলবিসেলেস্তে ফুটবলার যিনি সাতটি কোপা আসর খেলছেন। এমন মাইলফলক ছোঁয়া ম্যাচটি মেসি আরও স্মরণীয় করে রাখতে পারতেন দুটি সহজ সুযোগ হাতছাড়া না করলে। তবে তার রক্ষণচেরা দুটি পাসেই জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা।

খুব বেশি দূরে তাকানোর প্রয়োজন নেই লিওনেল স্কালোনির। দুই বছর আগে যখন তিনি আর্জেন্টাইনদের প্রথম দায়িত্ব নেন, তখন সবেমাত্র দলটি উন্নতি করা শুরু করছিল। দারুণ কৌশল, ম্যাচপ্রতি ভিন্ন পরিকল্পনা ও পরিস্থিতি বুঝে তার নির্দেশনা মেনেই পরপর কোপা ও বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। এরপর প্রীতি ম্যাচ ও ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়েও ধারাবাহিক সাফল্য পেয়ে আসছেন মেসি–আনহেল ডি মারিয়ারা। সেই ফর্মই এবার তারা কোপায় টেনে আনলেন।

এবারের কোপায় অভিষেক হওয়া কানাডা প্রথমার্ধে খারাপ করেনি। তারা পুরো অর্ধে আর্জেন্টাইনদের গোলশূন্য অবস্থায় আটকে দেয়। তবে নিজেরাও হাতছাড়া করেছে গোলের সুযোগ। সবমিলিয়ে বল দখল ও শটে আধিপত্য ছিল আর্জেন্টিনার। প্রায় ৬৫ শতাংশ বল দখলে রেখে মেসি–মার্টিনেজরা শট নিয়েছেন ১৯টি, এর মধ্যে ৯টি লক্ষ্যে ছিল। বিপরীতে ১০ শটের মাত্র দুটি লক্ষ্যে রাখতে পারে কানাডা।

আক্রমণের শুরুটা করে কানাডা, যদিও সেটি আটকে যায় আর্জেন্টিনার রক্ষণ দেয়ালে। এরপর পঞ্চম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে গিয়ে শট নেন লিয়েন্দ্রো পারেদেস, কিন্তু তার শটটি লক্ষ্যে ছিল না। অষ্টম মিনিটে দারুণ সুযোগ নষ্ট করেন আনহেল ডি মারিয়া। প্রতি আক্রমণে নিজেদের অর্ধ থেকে বল পায়ে এগিয়ে কানাডার গোলরক্ষক ম্যাক্সিম ক্র্যাপোকে একাই পেয়েছিলেন। কিন্তু তার গায়ে মেরে হতাশা উপহার দেন আকাশী-সাদা’র ভক্তদের। এরপর ৩৮তম মিনিটে রদ্রিগো ডি পলের ক্রস পেয়ে হেড দেন ম্যাক্স অ্যালিস্টার। কিন্তু তাতে তেমন জোর ছিল না, ফলে সহজেই নিয়ন্ত্রণে নেন কানাডার গোলরক্ষক। বিরতির আগে এমিলিয়ানো মার্টিনেজকেও ছোট পরীক্ষা দিতে হয় একবার। কানাডিয়ান ফুটবলারের জোরালো শট আটকান তিনি।

বিরতির পর মাঠে নেমেই আলভারেজের গোল। যদিও দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে মেসির পাসটি ছিল ম্যাক অ্যালিস্টারের লক্ষ্যে। তাকে গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দেন ঠিকই, তবে বল নিয়ন্ত্রণে না থাকায় নিকট দূরত্বে থাকা আলভারেজ গিয়ে কোনা দিয়ে বল জালে পৌঁছান। এরপর ৬৫ ও ৭৯তম মিনিটে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। প্রথমবার গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল তুলে দিলেও, বাধা পায় ডিফেন্ডারের কাছে। পরের বার গোলরক্ষকের চ‍্যালেঞ্জ এড়িয়ে দূরের পোস্টে শট নিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক, সেটি পোস্ট ঘেষে চলে যায়।

এরপর সুযোগ নষ্ট করেন লাউতারো মার্টিনেজও। তবে এই ইন্টার মিলান তারকাই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আর্জেন্টিনার। এবারও বলের যোগান দিলেন মেসি। তার রক্ষণচেরা পাস পেয়ে লাউতারো গোলরক্ষকের দুই পায়ের ফাঁক গলে বল জালে পাঠান। আর তাতেই নিশ্চিত হয়ে যায় আর্জেন্টিনার দারুণ সূচনা করা ২-০ গোলের জয়।

এএইচএস