ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়শিপের হাইভোল্টেজ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ক্রোয়েশিয়া ও স্পেন। এবারের আসরটিতে স্পেন শীর্ষ ফেবারিটদের একটি, তেমনটা আলোচিত না হলেও কম নয় লুকা মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়াও। কিন্তু বল দখল ও আক্রমণে এগিয়ে থাকলেও, গোছানো খেলায় গোল ব্যবধানে স্প্যানিশরা তাদের উড়িয়ে দিয়েছে। আলভারো মোরাতা–দানি কারভাহালরা জয় পেয়েছে ৩-০ গোলে।

গতকাল (শনিবার) বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ‘বি’ গ্রুপের বড় লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়ে দুই ইউরোপিয় জায়ান্ট। ম্যাচের তিনটি গোলই হয়েছে প্রথমার্ধে। সর্বশেষ বৈশ্বিক টুর্নামেন্টগুলোতে বল ধরে রেখে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করে রাখার খেলা দেখা যায়নি স্পেনিয়ার্ডদের মধ্যে। আক্রমণেও যে তরুণ–অভিজ্ঞদের মিশেলে গড়া দলটি খেলতে শুরু করেছে, সেটাই গতকাল দেখাল নতুন করে। তাদের হয়ে একটি করে গোল করেছেন আলভারো মোরাতা, ফাবিয়ান রুইজ ও দানি কারভাহাল।

সমান আক্রমণ করেছিল মদ্রিচ–পেরিসিচদের ক্রোয়াট বাহিনীও। তবে ফিনিশিংয়ে তারা বেশ দুর্বলতা দেখিয়েছে। তাদের নেওয়া ১৬টি শটের মধ্যে পাঁচটি লক্ষ্যে ছিল, তবুও তারা গোল পেতে পুরোপুরি ব্যর্থ। নিকট দূরত্বের আক্রমণও সেভাবে পূর্ণতা দিতে পারেনি। ৫৫ শতাংশ বলও ছিল ক্রোয়াটদের দখলে। অন্যদিকে, পাস ধরে ধীরে ধীরে আগানোর কৌশল পাল্টানো স্প্যানিশরা খেলেছে দ্রুতগতিতে। তাদের নেওয়া ১১টি শটের পাঁচটিই ছিল লক্ষ্যে, যার তিনটিতেই তারা সফল হয়েছে।

গোলের শুরুটা হয় ২৯তম মিনিটে। রুইজ ও মোরাতা দারুণ বোঝাপড়ায় রক্ষণ ভাঙেন ক্রোয়াটদের। রুইজ রক্ষণচেরা দারুণ এক থ্রু পাস বাড়ান মাঝমাঠ থেকে, বল নিয়ে সামনে আগানো মোরাতা বক্সে ঢুকে নিচু শটে সেটি গোলে পরিণত করেন। এ নিয়ে প্রথম ফুটবলার হিসেবে ইউরোর তিন আসরেই নির্দিষ্ট একটি দলের বিপক্ষে গোল করলেন মোরাতা। এর আগে তিনি ২০১৬ ও ২০২০ আসরেও ক্রোয়াটদের জালে বল পাঠিয়েছিলেন। যা অনন্য এক কীর্তি। এ ছাড়া ৩১ বছর বয়সী তারকা ইউরোতে গোলের দিক থেকে যৌথভাবে তৃতীয় স্থানেও আছেন। তার সমান ৭টি করে গোল আছে অ্যান্তোনি গ্রিজম্যান, অ্যালান শিয়েরারের।

৩২তম মিনিটে লিড দ্বিগুণ করেন রুইজ। আগের গোলে জোগান দেওয়া এই পিএসজি মিডফিল্ডার একাধিক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে নিচু শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন। এর আগে পেদ্রির পাস ধরে তিনি বক্সে ঢুকে শট নেন, যেটি আরেকজনের পা ছুঁয়ে দিক পাল্টে জালে জড়ায়। অন্যদিকে, সমানতালে আক্রমণ করেও গোল করতে ব্যর্থ ক্রোয়াটরা। ব্যবধান কমানোর সুযোগও আসে সামনে। ৪১ মিনিটে আন্তে বুদিমির টোকা দিলেই গোল হতে পারত, কিন্তু তার ব্যর্থতা হতাশ করেছে দলটিকে।

ব্যবধান কমাবে কি, উল্টো বিরতির ঠিক আগে আরেকটি গোল হজম করে বসে ক্রোয়েশিয়া। লামিনে ইয়ামাল এদিন মাঠে নেমেছিলেন ইউরোর সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে। এই প্রতিযোগিতায় নিজের অভিষেকেই লামিনে অসাধারণ এক ক্রস বাড়ান বক্সে, আর দারুণ স্লাইড শটে বল জালে পাঠান রিয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্ডার কারভাহাল। তাতে ৩-০ গোলের লিড পেয়ে যায় স্পেন।

দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণ আরও জোরালো হয় ক্রোয়েশিয়ার। বিরতির পর মাঠে নেমেই কয়েক দফা গোলের সুযোগ তৈরি করে আবারও ফিনিশিং ব্যর্থতা। ইয়োসিপ স্টানিসিচের কোনাকুনি শট রুখে দেন ডিফেন্ডার মার্ক কুক্কুরেয়া, এরপর বুদিমিরের হেড ঠেকান গোলরক্ষক উনাই সিমোন। শেষদিকে বেশ রোমাঞ্চ ছড়ায় ম্যাচে। বক্সে ব্রুনো পেতকোভিচকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন রদ্রি, ফলে পেনাল্টি পেয়ে যায় ক্রোয়াটরা। কিন্তু পেতকোভিচের শট ঠেকিয়ে দেন উনাই সিমোন। এরপর সতীর্থের বাড়ানো বলে দ্বিতীয়বার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বল জালে পাঠালেও, অফসাইড বলে গোল বাতিল করে ভিএআর। ফলে আর ভিন্ন কিছু হয়নি।

এএইচএস