উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও রিয়াল মাদ্রিদের সম্পর্ক যেন অবিচ্ছেদ্য! নিয়মিত বিরতিতে ইউরোপের সর্বোচ্চ এই প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলাকে তারা রুটিনে পরিণত করেছে। সবশেষ তিন আসরে স্প্যানিশ জায়ান্টরা দুবার ফাইনাল খেলে, দুবারই করেছে শিরোপা উৎসব। দলের ১৫তম চ্যাম্পিয়নশিপ নিশ্চিত করার দিনে ইতিহাসের পাতায় নিজেকে আরও উচ্চস্থানে নিয়ে গেলেন রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি। পরে শিষ্যদের সঙ্গে পা মিলিয়ে নাচ তো তাকেই মানায়!

শনিবার রাতে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের শোকেসে ১৫তম শিরোপা যুক্ত করে রিয়াল। যেখানে একমাত্র কোচ হিসেবে পাঁচটি ইউসিএল শিরোপা জিতেছেন আনচেলত্তি। তার সর্বশেষ শিকার বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। ইউসিএলে দলটির হয়ে ছয়বার ডাগআউটে দাঁড়িয়েছেন ইতালিয়ান এই মাস্টারমাইন্ড।

কোচ হিসেবে এই প্রতিযোগিতায় যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তিনটি করে শিরোপা রয়েছে পেপ গার্দিওলা, বব পেইসলি ও জিনেদিন জিদানের। আর খেলোয়াড় থাকাকালীন মিলানের জার্সিতে আরও দুবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিলেন আনচেলত্তি। রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়ার পরও এই যাত্রাটা সহজ ছিল না বলে মন্তব্য রিয়াল কোচের, ‘আমি কখনই এগুলোর সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারি না। কেননা, এটা (এই পথচলা) কঠিন ছিল, খুবই কঠিন, প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ভালো খেললাম, আরও বেশি ভারসাম্যপূর্ণ দল ছিলাম, বল কম হারালাম…এটা একটা স্বপ্ন, যেটা ছুটছে তো ছুটছেই।’

যদিও ম্যাচের প্রথমার্ধে শিষ্যদের পারফরম্যান্স ছিল বেশ নাজুক। সেটিও আনচেলত্তি স্বীকার করেছেন অনায়াসেই, ‘আমরা একটু আয়েশি ছিলাম। বল হারাচ্ছিলাম এবং এতে তারা (ডর্টমুন্ড) যেমনটা চেয়েছিল, সেভাবে খেলতে পেরেছে। প্রথমার্ধের এমন পারফরম্যান্সের পর, আমরা এমনকি সমতায় থেকে (বিরতিতে) ড্রেসিংরুমে যাওয়ার যোগ্যও ছিলাম না…কিন্তু এটাই ফুটবল এবং আমরা খুব, খুব খুশি।’

৭৪তম মিনিট ও সবশেষ ৮৩ মিনিটে যথাক্রমে গোল করে ম্যাচের ডেডলক ভাঙেন দানি কারভাহাল ও ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। আর তাতেই ডর্টমুন্ডের অসংখ্য আক্রমণের পরও গোল করতে না পারার হতাশা ষোলকলায় পৌঁছায়। ১১ বছর পর ফাইনাল খেলতে নেমে একই মাঠ ওয়েম্বলিতেই রচিত হয় জার্মান জায়ান্টদের শোকগাথা। অপরদিকে, উল্লাসে মাতোয়ারা রিয়াল মাদ্রিদ, প্রথম ইউসিএল জেতার পরিস্থিতি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না জ্যুড বেলিংহ্যাম। শেষবারের মতো রিয়ালের জার্সি গায়ে তুলে রঙিন বিদায় পেলেন টনি ক্রুসও। তার সঙ্গে মিলিয়ে ষষ্ঠবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ইতিহাস গড়লেন কারভাহাল, নাচো ফার্নান্দেজ ও লুকা মদ্রিচরা।

এমন স্মরণীয় রাতের উদযাপনে নাচ থাকবে না, এমনটা কি করে হয়! বৃত্তাকারে গোল হয়ে নাচছিলেন ভিনি, বেলিংহ্যাম, নাচো, কামাভিঙ্গাসহ রিয়ালের ফুটবলাররা। মাঝে মধ্যমণি বানিয়ে রাখা হয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি। পরে সেই নাচে যোগ দেন আনচেলত্তি–ও। আবেগ–উন্মাদনায় তিনিও যে সমানতালে অংশগ্রহণ করেন, সেটাই ডন কার্লো আরেকবার দেখালেন। পরে কোচকে শূন্যে ভাসিয়ে উন্মাদনায় চূড়ান্ত সংযুক্তি দেন শিষ্যরা।

এএইচএস