প্রথমার্ধে অন–টার্গেটে শট নেই একটিও, সেই রিয়াল মাদ্রিদ দ্বিতীয়ার্ধে লক্ষ্যে নিলো ৬টি শট। মাত্র ৯ মিনিটের ব্যবধানে করল ২ গোলও, তাতেই শেষ আক্রমণের পর আক্রমণ শাণানো বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের শিরোপা স্বপ্ন। দানি কারভাহাল এবং ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের গোলে ২-০ ব্যবধানে জিতে স্প্যানিশ জায়ান্টরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ১৫তম শিরোপা নিশ্চিত করেছে। তবুও ক্ষুধা মেটেনি রেকর্ড সংখ্যক শিরোপা জেতা দলটির, বরং ১৬তম শিরোপায় নজর সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের।

১৯৮১ সালের পর থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে হারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। ১৯৮৩ সালের পর থেকে তারা কোনো ইউরোপিয়ান ফাইনালেই যে হারেনি। ২০২৪ সালে এসেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পারল না বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডও। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সারপ্রাইজ প্যাকেজ হিসেবে জার্মান দলটি ধরা খেয়েছে ফিনিশিং ব্যর্থতা আর রিয়ালের দুর্দান্ত সেট–পিসের কাছে। ২০১৩ সালে এই ওয়েম্বলিতেই তারা শিরোপা খুইয়েছিল বায়ার্ন মিউনিখের হাতে, ১১ বছর পর আবারও একই তিক্ত স্বাদ দিলো রিয়াল।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বহুবারই চাপের মুখে থেকে নিজেদের সেরা খেলাটা উপহার দিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। ওয়েম্বলিতে ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ফাইনালেও ঠিক সেটাই করে দেখাল আরেকবার। লস ব্লাঙ্কোসরা জিতল ১৫তম শিরোপা, যার অর্ধেকও জিততে পারেনি কোনো দল। এসি মিলান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ৭ বার। তবুও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা রিয়াল এখানেই থামতে চায় না। ম্যাচশেষে সেটাই জানালেন রিয়াল বস পেরেজ। তিনি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর লস ব্লাঙ্কোসরা জিতল ৭ম ইউসিএল শিরোপা।

যদিও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা সহজ নয় বলে মন্তব্য তার, ‘আমরা খুবই খুশি, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা সহজ বিষয় নয়। এই প্রতিযোগিতায় মাদ্রিদের ইতিহাস সবাই জানেন। তারা অনেক অনুপ্রাণিত, আরও উন্নতি করছে, আমরা ভালো প্রতিযোগিতা করেছি এবং ১৫তম শিরোপা আমাদেরই প্রাপ্য।’ এরপরই ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ষোড়শ শিরোপা জয়ের নেশার কথা বলেন পেরেজ, ‘এত বিশাল সংখ্যক দর্শকের উপস্থিতিতে আমরা রোমাঞ্চিত, তারা খেলোয়াড়দের বিজয়ের দিকে নিয়ে গেছে। আমি বলতে পারি আমাদের জয় পাওয়া নিয়ে কারও দ্বিধা ছিল না। ১৬তম শিরোপা জয়ের শুরুটা এখান থেকেই হলো।’

রিয়াল সভাপতি আরও বলেন, ‘বার্নাব্যু (সান্তিয়াগো বার্নাব্যু) এই মুহূর্ত তৈরি করেছে, যা জয়ের চেয়েও বেশি কিছু। বার্নাব্যু আমাদের ওপর সেই বিশ্বাসটা রেখেছে। এই বছর আমরা যা করেছি, তরুণ থেকে বৃদ্ধা সবাই এতে অনুপ্রাণিত।’ এর আগে চলতি মৌসুমের লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপা জিতেছিল রিয়াল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ দিয়ে তারা আরেকবার শিরোপার ট্রেবলও নিশ্চিত করেছে।

ফাইনালটি ছিল রিয়ালের জার্সিতে কিংবদন্তি মিডফিল্ডার টনি ক্রুসের শেষ ম্যাচ। এ ছাড়া ইনজুরির কারণে পুরো আসরে না থাকা সেরা গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াও খেলেছেন ম্যাচটিতে। যেখানে তার পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। ম্যাচশেষে ক্রুস–কোর্তোয়া দুজনেরই প্রশংসা করেছেন রিয়াল সভাপতি পেরেজ, ‘সে (ক্রুস) চেয়েছিল শীর্ষে (চ্যাম্পিয়ন হয়ে) থেকেই অবসর নিতে। কোনো সন্দেহ নেই যে সে রিয়াল মাদ্রিদের অন্যতম একজন কিংবদন্তি। মৌসুমের শুরুতে দুভাগ্যজনকভাবে আমরা কোর্তোয়াকে হারিয়ে ফেলি। শেষপর্যন্ত দলে ফিরতে সে দারুণ প্রচেষ্টা চালায়।’

রিয়ালের হয়ে দুটি গোল করা কারভাহাল–ভিনিসিয়াসকেও প্রশংসায় ভাসিয়েছেন পেরেজ, ‘সবাই দলের জন্য খেলেছে, কখনও ভিনিসিয়াস আবার কখনও জোসেলু গোল করেছে। সবমিলিয়ে দল যেটা অর্জন করেছে তাতে সবাই খুশি, আমরা বড় পরিবার, এটি ইউরোপীয়ান কাপে সর্বোচ্চ সাফল্যগুলোর একটি। এর চেয়ে বেশি কারও কীর্তি নেই, এর বেশি কিছুও চাইতে পারে না।’

এএইচএস