তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয় শিরোপা। ১৯৮১ সালের পর থেকে আজও অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। রিয়াল মাদ্রিদের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা এখন অভ্যাসের মতোই। তাতে ছেদ পড়ে, কিন্তু বাদ দেয়া চলে না। লন্ডনের ওয়েম্বলিতে তেমনটাই দেখা গেল আরেকবার। যে দলটা প্রথমার্ধে কোনো শটই গোলের লক্ষ্যে রাখতে পারেনি, তারাই শেষ পর্যন্ত দেখালো দুর্দান্ত ম্যাজিক। 

৯ মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল। বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের সর্বনাশ করতে ওইটুক সময়ই ছিল যথেষ্ট ছিল রিয়ালের জন্য। তবে ম্যাচে তাদের মাহাত্ম্য সেই নয় মিনিটেই কেবল আটকে থাকেনি। বরং দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে যে অসাধারণ ফুটবল উপহার দিয়েছে ভিনিসিয়ুস আর কার্ভাহাল, সেটারই ফলাফল এসেছে শেষ পর্যন্ত। 

তবে ফাইনাল একপেশে হয়নি। ওয়েম্বলির ফাইনাল ৯০ মিনিটে শেষ হলেও আনন্দ বিলিয়ে গিয়েছে পুরোদমে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল হয়েছে ফাইনালের মতোই। দেখা মিলেছে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের। ছিল রোমাঞ্চের সব রসদ। তবে শেষ হাসিটা হেসেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ২-০ গোলের জয়ে জিতেছে রেকর্ড ১৫তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা। 

অবিশ্বাস্য মিসের পর করিম আদিয়েমির অভিব্যক্তি। এই মিসই পরবর্তীতে কপাল পুড়িয়েছে ডর্টমুন্ডের। প্রথমার্ধে অন্তত দুবার গোলের সুযোগ মিস করেছেন এই উইঙ্গার। 

গোল পাওয়ার ঠিক এতটাই কাছাকাছি ছিল ডর্টমুন্ড। ফুলক্রুগের শট পরাস্ত করেছিল থিবো কর্তোয়াকে। তবে আটকে যায় গোলবারে। ডর্টমুন্ডের ভাগ্যটাও হয়ত আটকে যায় সেইসাথে। 

দুর্দান্ত কর্তোয়া। পুরো মৌসুমে একটা ম্যাচও খেলেননি। তবে আজ এলেন, দেখলেন, খেললেন আর জয় করলেন। 

কার্ভাহালের হেড। রিয়ালের হয়ে টনি ক্রুসের শেষ সফল কর্নার। লস ব্লাঙ্কোসদের লিড। আরও অনেক কিছুই বলা যায় এই ছবি নিয়ে। তবে সবচেয়ে বড় কথা, ১৫তম শিরোপা নিশ্চিত হয়েছিল এখানেই। 

ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের শট জালে জড়াচ্ছে। ১৫তম শিরোপার তখন নিশ্চয়ই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলেন ভিনি জুনিয়র। 

ছুটছেন ভিনিসিয়ুস। ঠিক যেমনটা ছুটেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ছুটেছে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অজস্র রিয়াল মাদ্রিদের ভক্তরা। ২-০ গোলের লিডে শিরোপা তখন প্রায় নিশ্চিত। 

জ্যুড বেলিংহ্যাম অ্যাসিস্ট করেছেন। ভিনিসিয়ুসের ছবিটাও তিনিই তুলতে চাইলেন সবচেয়ে বেশি আগ্রহ নিয়ে। মনের ফ্রেমে যে ছবি থেকে যাবে চিরদিন। 

এক মৌসুম আগেও ছিলেন ডর্টমুন্ডে। এরপর নিজের স্বপ্নের ক্লাবে আগমন। প্রথম বছরেই ইউরোপের সেরা। জ্যুড বেলিংহ্যামের কাছে সবই স্বপ্নের মতো। 

মুদ্রার অন্যপিঠে যে গল্প থেকে যায় সবসময়। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মার্সেল সাবিটজার। তাকে স্বান্তনা দিচ্ছেন স্লটারব্যাক এবং হুলিয়ান ব্রান্ট। ডর্টমুন্ড আবারও ব্যর্থ ওয়েম্বলিতে। 

দুই নক্ষত্র। দুই কিংবদন্তি। ক্রুসের এটাই ক্লাব ফুটবলের শেষ ম্যাচ। আর রয়েসের জন্য নিজের শৈশবের ক্লাবে শেষ ম্যাচ। দুজনেই জার্মানির জাতীয় দলে ছিলেন সতীর্থ। বিদায়বেলায় এক ফ্রেমে দুই কিংবদন্তি। 

আর এখনো রিয়াল মাদ্রিদের সফেদ জার্সিতে দেখা যাবে না জার্মান স্নাইপার টনি ক্রুসকে। বিদায় বেলায় জিতলেন ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৬ষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ক্লাবের কিংবদন্তিকে কাঁধে নিয়ে রাখলেন রুদিগার আর এডার মিলিতাও। 

রিয়াল মাদ্রিদের হাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা। যে দৃশ্য প্রতিনিয়ত চোখে আসে, তবে কখনোই পুরাতন হয় না। 

জেএ