লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম প্রস্তুতি সেরে রেখেছে আরও আগেই। এখন কেবল ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতায় দুই দলের লড়াই মঞ্চায়নের পালা। অনেকটা বিস্ময় জাগিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে গ্রুপ ও নকআউট পর্যায়ে কঠিন কঠিন সব প্রতিপক্ষকে হারিয়ে আসা বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। অন্যদিকে, প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ইউসিএল ফাইনাল খেলা প্রায় রুটিনে পরিণত হয়েছে। শেষ তিন বছরে তারা দ্বিতীয় ফাইনাল খেলতে নামছে পঞ্চদশ শিরোপার লক্ষ্যে। ডর্টমুন্ডের লক্ষ্য দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া।

দুই দলের লড়াইয়ে ফেবারিটের তকমা নিয়ে মাঠে নামবে রিয়ালই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বলেই বাড়তি আত্মবিশ্বাস পাবে লস ব্লাঙ্কোসরা। সেই পালে বাড়তি হাওয়া দেবে সুপার কম্পিউটারের সবশেষ গণনা। ফুটবল পরিসংখ্যান বিষয়ক সংস্থা অপ্টা অ্যানালাইসিসের সুপার কম্পিউটারের বাজি রিয়ালের পক্ষেই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের আগে ১০ হাজার ম্যাচ সিমুলেশনে ৯০ মিনিটের ফলাফলে রিয়ালের পক্ষে গিয়েছে ৫৫.৬ শতাংশ ম্যাচ। আর বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের পক্ষে গিয়েছে ২১.৪ শতাংশ ম্যাচ। বাকি ২৩ শতাংশ ম্যাচ গিয়েছে অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও অবশ্য ফেবারিট রিয়ালই। 

সবমিলিয়ে অপ্টার প্রেডিকশনে ৬৭.৪ শতাংশ ক্ষেত্রে রিয়াল মাদ্রিদকেই বিজয়ী করা হয়েছে। বাকি ৩২.৪ শতাংশে বলা হচ্ছে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড জিতবে।

শেষ পর্যন্ত এই মহারণে কী ঘটে সেটা দেখতে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় টিভি স্ক্রিনের সামনে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সারা বিশ্বের ফুটবল ভক্তরা।

চলতি মৌসুমের ইউসিএলে ডর্টমুন্ড ছিল সারপ্রাইজ প্যাকেজ। জার্মান লিগে এবার একটিও শিরোপা না জেতা ক্লাবটি ইউসিএলের গ্রুপপর্বে পায় পিএসভি, অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ ও পিএসজিকে। এরপর ধারাবাহিক নৈপুণ্যে টারজিকের দলটি পা রাখে ফাইনালে। অথচ বুন্দেসলিগায় তাদের অবস্থান ছিল এবার পাঁচ নম্বরে।

অন্যদিকে, অপরাজিত থেকেই ওয়েম্বলির টিকিট কেটেছে কার্লো আনচেলত্তির দল। চলতি মৌসুমে লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জেতা দলটি এখন ট্রেবল জয়ের দ্বারপ্রান্তে। ১৮তম ফাইনালে ওঠার পথে তারা লাইপজিগ, ম্যানচেস্টার সিটি ও বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে এসেছে।

রিয়াল ম্যানেজার কার্লো আনচেলত্তি

ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় সর্বশেষ ১১ ম্যাচে কেবল একটিতে হারা ডর্টমুন্ডও অবশ্য প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়েই নামবে। সর্বশেষ ছয় ম্যাচে তারা ক্লিনশিট ধরে রেখেছে এবং শেষ ১০ ম্যাচে গোলের সূচনা করেছে প্রথমে। এর আগে ২০১৩ সালে সর্বশেষ ইউসিএল ফাইনালেও ডর্টমুন্ড খেলেছিল এই ওয়েম্বলিতে। যেখানে তাদের ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা উৎসব করে স্বদেশি জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখ। সেই ফাইনালের ১১ বছর পর আবারও একই পরিস্থিতিতে হাজির ম্যাট হুমেলস ও মার্কো রয়েসরা। যা হতে চলেছে হলুদ শিবিরের হয়ে রয়েসের শেষ ম্যাচ, হুমেলসও প্রায় শেষের দ্বারপ্রান্তে। ২৬ বছর আগে ১৯৯৭ সালে প্রথম ও একমাত্র ইউসিএল শিরোপা জিতেছিল ডর্টমুন্ড।

অন্যদিকে অভিজ্ঞ তারকায় ঠাসা রিয়াল মাদ্রিদ। টনি ক্রুস স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের জার্সিতে নামবেন শেষবারের মতো। তার সঙ্গে রিয়ালের সবশেষ ছয়টি ফাইনালে খেলেছেন লুকা মদ্রিচ, দানি কারভাহাল ও নাচোরা। এমন কীর্তি আছে আর কেবল একজনের, রিয়ালের হয়ে ১৯৫৬-৬৬ সময়ে খেলা ফ্রান্সিসকো গেন্তো।

আরেকটি ফাইনালের আগে আবেগে ভেসে যেতে শিষ্যদের আহবান জানিয়েছেন রিয়াল কোচ আনচেলত্তি।

ডর্টমুন্ড ম্যানেজার এদিন টারজিক

তিনি বলেছেন, ‘পুরো দল মনোযোগী, নিজেদের সেরাটা দেখানোর জন্য আমাদের যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস আছে। এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক এবং সঠিক পথ জানা আছে আমাদের। কৌশল প্রয়োগে আমার ধারণা খুবই স্পষ্ট। খেলোয়াড়রা এতে যত বেশি স্পষ্ট ধারণা পাবে, তত বেশি খুশি হবে এবং ভালো পারফর্ম করবে। এখানে আবেগও থাকবে। কিন্তু আবেগ শঙ্কা আনতে পারে এবং জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের খেলোয়াড়রা অসাধারণ। খেলার মান ধরে রাখার পাশাপাশি যৌথ মনোভাব, কাজ এবং একে অপরের জন্য ত্যাগ ও প্রতিভার মিশ্রণ ঘটাতে হবে।’

ডর্টমুন্ড কোচ টারজিক বলেন, ‘ফাইনাল জিততে হবে– এটি আমাদের পরিষ্কার লক্ষ্য। আমরা এখানে এসে খুশি। কিন্তু ট্রফিটি আমাদের হাতে তুলে নিতে হলে জিততেই হবে। আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত। আপনি যদি এটিকে ভেঙে দিতে পারেন, তাহলে সবকিছুই সম্ভব। কে কেমন ফেবারিট তা নিয়ে ভাবি না। আমরা অ্যাটলেটিকো বা প্যারিসের বিপক্ষেও ফেবারিট ছিলাম না। আমরা যদি সাহসী হই এবং মাদ্রিদের আরেকটি ট্রফি জয় দেখার জন্য এখানে না আসি, তাহলে আমাদের অবশ্যই সুযোগ থাকবে।’

এএইচএস