‘সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ৯০ মিনিট অনেক দীর্ঘ সময়’
১৯৮৪-৮৫ মৌসুমের কথা। সেবার উয়েফা কাপে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ইন্টার মিলানের ঘরের মাঠেই ২-০ গোলে হেরে বসে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচশেষে রিয়ালেরই ফরোয়ার্ড হুয়ানিতো প্রতিপক্ষকে বলেছিলেন, ‘সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে নব্বই মিনিট অনেক লম্বা সময়।’ সেবার সত্যিই তা প্রমাণিত হয়েছিল। রিয়াল ফিরতি ম্যাচ জেতে ৩-০ গোলে।
বার্নাব্যুর নব্বই মিনিট ঠিক কতটা দীর্ঘ আর নির্মম হতে পারে তা আজ (বুধবার দিবাগত রাতে) আবার টের পেয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ। আলফনসো ডেভিসের অমন অসাধারণ গোল, ম্যাচজুড়ে ম্যানুয়েল নয়্যারের অবিশ্বাস্য সব সেইভ। জয় থেকে সবমিলিয়ে হয়তো মিনিট পাঁচেক দূরে ছিল বাভারিয়ানরা। কিন্তু রিয়াল যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজা! আর খেলাটাও নিজেদের দুর্গে। রাজা নিজের দুর্গে হারবেন, এটা যেন নিয়মের বিপরীত। শেষের দিকে রিয়াল হয়ে উঠলো বিধ্বংসী এক ঝড়। তাতে ধ্বংস হলো বায়ার্ন মিউনিখের প্রাচীরের মতো গড়া রক্ষণভাগ।
বিজ্ঞাপন
কারও কারও মতে রিয়ালের ডিএনএ–তেই কামব্যাক মিশে আছে। ম্যানসিটিকে হারিয়ে কোচ অ্যানচেলত্তি বলেছিলেন, রিয়ালের ব্যাপারটাই এমন। রিয়াল কখনও মরে না। সবকিছু ছাপিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ সত্যিকার অর্থেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজা।
৮৮ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে পিছিয়ে ছিল লস ব্লাঙ্কোসরা। ৮১ মিনিটে বদলি নামানো হয়েছিল হোসেলু এবং ব্রাহিম দিয়াজকে। শুরুর সাত মিনিটেও তাদের কাছ থেকে দেখা হয়নি কিছুই। কিন্তু এরপরেই যেন রিয়াল নিজেদের জাত চেনালো। হোসেলু করলেন দুই গোল। সেটাও তিন মিনিটের ব্যবধানে! ২-১ গোলের জয় তাদের পৌঁছে দিলো ওয়েম্বলির ফাইনালে।
এই হোসেলুর গল্পটাই বা কম রোমাঞ্চের কিসে! ২০২২ সালে রিয়াল মাদ্রিদকে ফাইনালে দেখতে গিয়েছিলেন দর্শক হিসেবে। কয়েক মৌসুম আগেও ঘুরছিলেন দেপোর্তিভো, আলাভেস আর এস্পানিওলের মতো ক্লাবে। এর আগে ছিলেন ভগ্নদশার নিউক্যাসল আর স্টোকসিটিতে। চলতি মৌসুমে তিনি রিয়ালের শুভ্র জার্সিতে এলেন। সেটাও লোন ডিলে। মৌসুম শেষেই চলে যাবেন এস্পানিওলে। কিন্তু যাবার আগে কি অসামান্য খেলাটাই না উপহার দিলেন।
বায়ার্নের বিপক্ষে ম্যাচে বলে শট নিয়েছেন দুবার। রিয়ালের ভাগ্য ফিরতে লেগেছে ওই দুই শটই! দিয়েছেন মোটে ৪ পাস, তাতেও সফল হয়েছে মোটে দুইটি। কিন্তু এসব পরিসংখ্যান যেন তুচ্ছ! ম্যাচে বায়ার্নের ডি লিট আর এরিক ডায়ারের গড়া দুর্দান্ত রক্ষণ যে ভেঙেছেন তিনিই!
চন্দ্রবিন্দু ব্যান্ডের ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’ গানটা অনেকবার অনেকের জন্যই ব্যবহার করা হয়েছে। আজ রাতে রিয়াল মাদ্রিদের জন্য আবার গাওয়া হলে হয়তো খুব একটা ভুল হবে না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজা কেন রিয়াল মাদ্রিদ! কেন তাদের হাতে ১৪বার শিরোপা উঠেছে— তা আবারও দেখা গেল বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে আরও একবার খেলতে নামবে মাদ্রিদ। এই নিয়ে রেকর্ড ১৮বার ফাইনালে যাচ্ছে তারা। তবে ইংল্যান্ডের ঐতিহাসিক ওয়েম্বলিতে এবারই প্রথম। রিয়াল মাদ্রিদ অবশ্য ফাইনালে নামবে ফেবারিটের তকমা নিয়েই। ১৯৮১ সালে প্যারিসে লিভারপুলের কাছে হারের পর থেকে আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে হারতে হয়নি তাদের।
সেদিনের (ফাইনাল) ম্যাচের চিত্রনাট্য কেমন হবে তা বলা মুশকিল। তবে রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষে ফলাফল থাকুক বা না থাকুক, হোসেলু আর বার্নাব্যুর আজকের রাতটা বার্নাব্যুর ইতিহাসে আরেক অমর উপাখ্যান হয়ে থাকবে সেটা একপ্রকার নিশ্চিত।
জেএ