‘সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে নব্বই মিনিট অনেক দীর্ঘ সময়’– ১৯৮৪-৮৫ মৌসুমের উয়েফা কাপ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ইন্টার মিলানের কাছে হেরে এমন একটা উক্তিই করেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের ফরোয়ার্ড হুয়ানিতো গোমেজ গঞ্জালেস। তার এই উক্তিটা মিথ্যে হয়নি। পরের লেগে ঠিকই সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। 

বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমির দ্বিতীয় লেগে আজ আবার সেই বার্নাব্যুতে মাঠে নামছে রিয়াল মাদ্রিদ। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আজও এক্স-ফ্যাক্টর হয়ে থাকছে এই বার্নাব্যু স্টেডিয়ামই। রিয়ালের শুভ্র সমুদ্রের মাঝে বায়ার্ন নিজেদের ধরে রাখতে পারবে কিনা– সেটাই হয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন। 

ওয়েম্বলির ফাইনালের প্রথম দল হিসেবে জায়গা নিশ্চিত করেই ফেলেছে জার্মান ক্লাব বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড। এবার অপেক্ষা দ্বিতীয় দলের। বায়ার্ন মিউনিখ কি আরও একবার ফেরাবে ২০১৩ সালের অল জার্মান ফাইনালের স্মৃতি নাকি রিয়াল মাদ্রিদ যাবে নিজেদের ১৫তম শিরোপার লক্ষ্যে। বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ১টায় রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে জানা যাবে কে যাচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। 

সেমির এক্স-ফ্যাক্টর হতে পারে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু স্টেডিয়াম

ঘরের মাঠে প্রথম লেগে দারুণ ফুটবল উপহার দিয়েও রিয়ালের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করেছিল বায়ার্ন মিউনিখ। জয়টা বাভারিয়ানরা পেয়েই যেত যদি না ভিনিসিয়ুস জুনিয়র আর টনি ক্রুসরা অসামান্য ফুটবল উপহার না দিতেন। এই দুজনের যুগলবন্দীই বায়ার্নকে রুখে দিয়েছিল সেদিন। আজ ঘরের মাঠে ভিনিসিয়ুসের পাশাপাশি রদ্রিগো আর জ্যুড বেলিংহামের কাছ থেকেও বেশি কিছু প্রত্যাশা থাকবে রিয়াল সমর্থকদের। 

বায়ার্ন মিউনিখ এবং রিয়াল মাদ্রিদ যুগে যুগে উপহার দিয়েছে বহু আইকনিক ম্যাচ। এই দুই দল যখনই মুখোমুখি হয়েছে, কোনো ম্যাচই গোলশূন্য ড্র হয়নি। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে প্রথমবার সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল তারা। সেবার ৩-১ অ্যাগ্রিগেটে জয় তুলে নিয়েছিল বায়ার্ন। সবশেষ ম্যাচটা শেষ হয়েছে ২-২ গোলের ড্রয়ে। আজকের ম্যাচেও তাই গোলের পসরা দেখা যাবে– এমন আশা করাই যায়। 

এরপর থেকে দুই দল বহুবার একে অন্যের বিপক্ষে খেলেছে। তবে সামগ্রিকভাবে বায়ার্নের হতাশা একটু বেশি। দুই দলের সবশেষ তিন দেখায় রিয়াল হেসেছে শেষ হাসি। ২০১৩-১৪ এবং ২০১৭-১৮ মৌসুমে এই রিয়ালের কাছে হেরেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে বায়ার্নকে। বায়ার্নের জন্য আজকের লড়াইটা তাই অনেকটা প্রতিশোধের। 

হ্যারি কেইন ও লেরয় সানেতে নজর থাকবে আবার

রিয়াল মাদ্রিদ ২০১২ সালে এই বায়ার্নের কাছে সেমিতে হেরেছিল। এরপর টুর্নামেন্টে অধুনা যুগের সবচেয়ে বড় আধিপত্য দেখায় তারা। ২০১৪ সালে জয় করে দশম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালে জিনেদিন জিদান জয় করেন টানা তিন শিরোপা। অনেকের ধারণা, রিয়ালের এমন অপ্রতিরোধ্য যাত্রার পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে ২০১২ সালের বায়ার্নের বিরুদ্ধে সেই হার। 

দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে ১২ বার জয় পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ১১ বার জিতেছে বায়ার্ন। ড্র হয়েছে বাকি চার ম্যাচ। এখন পর্যন্ত ৭ বার সেমিফাইনালে দেখা হয়েছে দুই দলের। তাতে অবশ্য জয়ের পাল্লা ভারী বায়ার্নের। চারবার রিয়ালকে টপকে ফাইনাল খেলেছে তারা। বাকি তিনবার ফাইনালে গিয়েছে রিয়াল। যদিও শেষ দুইবার রিয়ালই হেসেছিল শেষ হাসি। 

প্লেয়ার্স টু ওয়াচ 

বায়ার্ন মিউনিখ

হ্যারি কেইন এবং লেরয় সানের দিকে আজ বিশেষভাবে ভরসা রাখবে বায়ার্ন মিউনিখ। কেবল গত ম্যাচের গোলদাতা বলেই না। রিয়ালের রক্ষণ ভেঙ্গে গোল আনতে তারাই টমাস টুখেলের ভরসা। কেইন এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তাই স্বাভাবিকভাবেই তাকে ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা থাকবে। মাঝমাঠে জামাল মুসিয়ালা গত ম্যাচে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন আজও তার ওপর থাকবে স্পটলাইট। 

তবে মূল কাজের কাজ করতে হবে এরিক ডায়ার এবং ম্যাথিয়াস ডি লিটকে। ডি লিট নির্ভরতা যুগিয়েছেন পুরো মৌসুম। প্রথম লেগ মিস করেছিলেন তিনি। তার জায়গায় এসে কিম মিন জায়ে দুবার ভুল করে রিয়ালকে ম্যাচে ফেরান। আজ তাই রক্ষণে ডায়ার-ডি লিট জুটিকেই নিতে হবে বড় দায়িত্ব। 

রিয়ালের এই ত্রয়ীকে ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ

রিয়াল মাদ্রিদ

ভিনিসিয়ুস জুনিয়র সময়ের অন্যতম সেরা তারকা। গেল ম্যাচে দুই গোল করেছেন। চলতি মৌসুমে ইউসিএলে আছে ৫ গোল এবং ৪ অ্যাসিস্ট। তবে এর পাশাপাশি জ্যুড বেলিংহামকেও নিতে হবে দায়িত্ব। চলতি মৌসুমে রিয়ালের ত্রাতা হয়েছেন বহুবারই। এবার তাই আরেকদফায় তার ওপর ভরসা করতে চাইবে লস ব্লাঙ্কোসরা। তাদের সঙ্গে রদ্রিগো তো আছেনই। ঘরের মাঠে যার তুলনা পাওয়া ভার। 

মাঝমাঠে টনি ক্রুস গত ম্যাচে গড়ে দিয়েছিলেন ব্যবধান। প্রফেসর ডাকুন বা স্নাইপার, ক্রুস এই বয়সেও মাদ্রিদের মাঝমাঠের কাণ্ডারি। এমন একজনের প্রতি আরও একবার ভরসা রাখতে চাইবেন রিয়াল কোচ কার্লো অ্যানচেলত্তি।