কমলাপুর স্টেডিয়ামে রেফারির ম্যাচ শেষের বাঁশি। ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ০, বাফুফে এলিট একাডেমি ০। আজ (বুধবার) ৩ গোলের ব্যবধানে না হারলেই রানার্সআপ হয়ে প্রিমিয়ারে উঠত ওয়ান্ডারার্স। কিন্তু এই ড্রয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলে ১৪ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ ওয়ান্ডারার্স আগামী মৌসুমে প্রিমিয়ারে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় স্তরের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ এই সুযোগ পায়। 

এক সময় ঢাকার ফুটবলে সাফল্য ও জনপ্রিয়তায় শীর্ষ ছিল ঢাকা ওয়ান্ডারার্স। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হওয়া ঢাকা লিগে পঞ্চাশ দশকে ঢাকা লিগে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে দলটির। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে ওয়ান্ডারার্সের আধিপত্য কমতে থাকে। ১৯৯৫ সালে প্রিমিয়ার থেকে অবনমিত হয়ে পরের ধাপে নামে তারা। আট বছর পর আবার প্রিমিয়ারে ওঠে। যদিও ৩ বছরের বেশি প্রিমিয়ারে থাকতে পারেনি।

২০০৭ সাল থেকে শুরু হয় পেশাদার লিগ। দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দলটি কখনও পেশাদার লিগে খেলতে পারেনি। সিনিয়র ডিভিশন থেকে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে ওঠে ওয়ান্ডারার্স। এই স্তরে চার মৌসুম খেলার পর আজ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে রানার্সআপ হয়ে প্রথমবারের মতো পেশাদার লিগে ও ফুটবলের শীর্ষ স্তরে ফিরল দেড় যুগ পর। 

এবার ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের কোচ ছিলেন দেশের অন্যতম তারকা ফুটবলার ও কোচ আবু ইউসুফ। নব্বইয়ের দশকে আবাহনী মোহামেডানকে প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন করানো ইউসুফ আজ রানার্সআপ হয়েও বেশ খুশি, ‘এই ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর সম্পৃক্ততা আছে। তাই এটার আবেগ ভিন্ন। একটা ক্লাবকে আবার শীর্ষস্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার অনুভূতি আলাদা।’

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ওপর দিয়ে ক্যাসিনো ঝড় বয়ে গেছে। ২০১৯ সালে সেই কাণ্ডের পর চার বছর ক্লাবের ফটক ছিল বন্ধ। ওই সময় ক্লাবের সকল ট্রফি ও কাগজপত্র চুরি হয়ে যায়।  সাবেক ফুটবলার আব্দুল গাফফারের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের শেষদিকে বন্ধ থাকা ক্লাবগুলো সচল হয়। আজকের রানার্সআপ ট্রফিই এখন ক্লাবটির নতুন সম্বল। 

চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকে প্রিমিয়ারে খেলার সুযোগ পেয়েও অতীতে অনেক দল খেলেনি। ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন শীর্ষ স্তরে খেলার বিষয়টি বললেন দৃঢ়কণ্ঠে, ‘অনেকদিন পর আমরা আবার শীর্ষ স্তরে এসেছি, অবশ্যই খেলব। প্রিমিয়ারে খেলতে আর্থিক অনেক ব্যয় রয়েছে। আমাদের সভাপতি লিটন ভাই (স্বেচ্ছাসেবক লিগের নেতা ও ব্যবসায়ী) এবং আমরা সবাই মিলে সেটা পূরণ করব।’

ক্যাসিনো কাণ্ডের পর দল পরিচালনা অনেক কঠিন ছিল। সেই বিষয়ে ক্লাবটির ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান গগন বলেন, ‘ক্যাসিনোর পর ভয়ঙ্কর সংকট হয়েছে। আমরা নিজেরা অর্থ দিয়েই ক্লাবটি চালিয়েছি। ফুটবল প্রিমিয়ারে ওঠায় এখন স্পন্সর নেওয়ার সুযোগ থাকবে।’ ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ফুটবল, ক্রিকেট ও হকির পাশাপাশি কাবাডি এবং রাগবিতেও অংশ নেয়। 

এজেড/এএইচএস