রেফারি সায়মন হাসান সানি।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের প্রথম লেগ শেষ হয়েছে গতকাল। ১০ দলের লিগে প্রথম লেগে ৪৫ ম্যাচ হয়েছে। ম্যাচগুলোতে হলুদ কার্ডের সংখ্যা ১৮৭ আর লাল কার্ড ১১। ম্যাচ প্রতি কার্ডের গড় ৪.৪। 

ম্যাচ প্রতি কার্ডের গড় সংখ্যা যেখানে ৪.৪, সেখানে রেফারি সায়মন হাসান সানির ম্যাচ প্রতি কার্ড প্রদানের সংখ্যা প্রায় আট। পাঁচ ম্যাচে তিনি ৩৬ হলুদ ও ৩ টি লাল কার্ড দেখিয়েছেন। প্রথম লেগে ১২ জন রেফারি ৪৫ ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। প্রথম লেগে মোট ১৯৮ কার্ডের মধ্যে সানি একাই দেখিয়েছেন ৩৯ কার্ড। যা প্রায় ২০ শতাংশের সমান। 

লিগে সানির রেফারিং করা পাঁচ ম্যাচের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ বার (সবই হলুদ) কার্ড ব্যবহার করেছেন শেখ জামাল-বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচে। সাম্প্রতিক সময়ে এক ম্যাচে দশের অধিক কার্ড হওয়ার সংখ্যা একেবারেই কম। পাঁচ ম্যাচে সানি লাল কার্ড দেখিয়েছেন তিনটি। এর মধ্যে দুটি ডাগ আউটে। মাঠের পাশাপাশি ডাগ আউটেও তার নজর তীক্ষ্ণ। 

সানি ম্যাচ রেফারি মানেই কার্ডের ছড়াছড়ি। ঘরোয়া ফুটবলে নানা আড্ডায় বিষয়টি এখন বেশি আলোচিত। সানির কার্ড প্রদর্শন নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে - কারো মতে, অতিরিক্ত কার্ড প্রদর্শন আবার কারো দৃষ্টিতে ফুটবলের আইনের শতভাগ প্রয়োগ। সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও মোহামেডানের ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীবের দৃষ্টিতে সানি লিগের অন্যতম সেরা রেফারি, ‘এবারের লিগে অনেক ম্যাচই দেখেছি। এর মধ্যে সানির রেফারিং আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে সেরা মনে হয়েছে। আইনের শতভাগ প্রয়োগ সে করে।’ নকীবের দৃষ্টিতে সেরা হলেও ডিসেম্বর মাসে বাফুফের বিচারকদের দৃষ্টিতে আলমগীর সেরা রেফারির স্বীকৃতি পেয়েছে। 

সানির ম্যাচে কার্ডের পাশাপাশি পেনাল্টিও হয়। পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তিনি তিনবার পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছেন ৷ তিনটি পেনাল্টি থেকে মোহামেডান তিন গোল করেছে। এজন্যই কি নকীবের কাছে সানি সেরা? এমন প্রশ্নে সাবেক ফুটবলারের উত্তর, ‘তার অনেক সিদ্ধান্ত আমার দলের বিপক্ষেও গেছে। রেফারি মাঠে অল ইন অল। তার সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষমতা ও দৃঢ়তা একজন সাবেক ফুটবলার হিসেবে আমাকে ভালো লাগে।’ 

প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচ প্রতি কার্ডের গড় সংখ্যা যেখানে ৪.৪, সেখানে রেফারি সায়মন হাসান সানির ম্যাচ প্রতি কার্ড প্রদানের সংখ্যা প্রায় আট। পাঁচ ম্যাচে তিনি ৩৬ হলুদ ও ৩ টি লাল কার্ড দেখিয়েছেন। প্রথম লেগে ১২ জন রেফারি ৪৫ ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। প্রথম লেগে মোট ১৯৮ কার্ডের মধ্যে সানি একাই দেখিয়েছেন ৩৯ কার্ড। যা প্রায় ২০ শতাংশের সমান।

সানি ঘরোয়া ফুটবলে প্রথম আলোচনায় আসেন ২০২২ সালে সাইফ স্পোর্টিং ও ঢাকা আবাহনীর মধ্যকার সেমিফাইনাল ম্যাচের পর। সাইফ স্পোর্টিংকে সানি একটি পেনাল্টি দিয়েছিলেন। সাইফের বিদেশি ফুটবলার দুই দফা পেনাল্টি থেকে গোল করলেও সেই পেনাল্টি বাতিল করে প্রতিপক্ষ আবাহনীকে ফ্রি কিক দেয়। এই ঘটনা বেশ আলোচনা সৃষ্টি করেছিল। 

লিগ পরিচালনা করা অনেক রেফারি ও সহকারি রেফারি এবং সাবেক ফিফা রেফারির দৃষ্টিতেও সানি প্রায় শতভাগ আইন প্রয়োগ করেন। কোড অফ কন্ডাক্টের কারণে তার সরাসরি মন্তব্য করতে পারেননি। তাই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে বলেন, ‘সানি একেবারে আইনের যথার্থ প্রয়োগ করায় তার ম্যাচে কার্ড সংখ্যা বেশি হচ্ছে। এটি বাহ্যিকভাবে একটু অতিরিক্ত মনে হলেও তিনি শতভাগ সঠিক অবস্থানে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটা বাংলাদেশের ক্লাব ও জাতীয় দলের জন্য মঙ্গলজনক হবে।’ এক সাবেক ফিফা রেফারি একটু খানিকটা ভিন্ন মত পোষণ করে বলেন, ‘তার কার্ড প্রদর্শনও যৌক্তিকতা রয়েছে। সে বয়সে এখনো তরুণ, বয়সে আরও একটু ভারিক্কি আসলে কিছু ক্ষেত্রে কার্ড অ্যাভয়েড করাও যায় সেটা প্রয়োগ করবে।’

ফুটবলে রেফারিং, ক্রিকেটে আম্পায়ারিং ‘থ্যাংকসলেস জব’। কম সম্মানী-সম্মানের অভাবে অনেক তরুণ এই পেশায় আসতে চান না। ঘরোয়া ফুটবলে অন্যতম শীর্ষ রেফারি সায়মন হাসান সানির একটু ব্যতিক্রম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম শীর্ষ বিষয় ফলিত পরিসংখ্যানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করে ফুটবল রেফারিং করছেন সানি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পড়াশোনা করে অনেকেই বিদেশে উচ্চশিক্ষায় অথবা দেশের শীর্ষ পর্যায়ে চাকরি করেন। খেলাধুলাকে ভালোবেসে সানি ফুটবল রেফারিং ও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়েছেন। 

২০১৩ সালে স্নাতক শেষে ফুটবল কোচিং কোর্স করতে ফেডারেশনে এসেছিলেন। সেই সময় কোচিং কোর্সের পরিবর্তে রেফারিংয়ে আগ্রহী হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শে। রেফারিংয়ের বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে এখন তিনি জাতীয় রেফারি। ফিফা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও কোটা কমায় এই বছর ফিফা ব্যাচ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। 

সানি মাঠের মতো মাঠের বাইরেও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। রেফারিদের বকেয়া সম্মানী ও অন্যান্য অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন ৷ এজন্য ফেডারেশনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে  এক মৌসুম আগে বেশ কিছু দিন ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ পাননি। এখন অবশ্য ফেডারেশনের রেফারিজ কমিটি ও বিভাগের বড় ঢাল সানি৷ 

লিগে সানির পাঁচ ম্যাচ 

আবাহনী-মোহামেডান ( ৫ হলুদ, ১ লাল) 

শেখ জামাল-মোহামেডান (৬ হলুদ) 

রহমতগঞ্জ- মোহামেডান (৬ হলুদ) 

বসুন্ধরা কিংস- শেখ জামাল ( ১২ হলুদ) 

শেখ রাসেল- শেখ জামাল ( ৭ হলুদ - ২ লাল) 

দল                  হলুদ     লাল
শেখ জামাল      ২৭       ২
রহমতগঞ্জ         ২৩      ০
বসুন্ধরা কিংস    ২০      ২
শেখ রাসেল       ২০      ১
আবাহনী           ১৯       ২
ব্রাদার্স              ১৯        ১
ফর্টিজ              ১৮        ১
মোহামেডান       ১৭       ১
পুলিশ                ১৩      ১
চ.আবাহনী         ১১      ০

                         ১৮৭  ১১

রেফারি               ম্যাচ    হলুদ    লাল
জালাল                    ৭       ১৮ 
সায়মন                   ৫       ৩৬        ৩
বিটু রাজ                 ৫        ২০ 
নাহিদ                     ৫        ১২          ১
মিজানুর রহমান      ৫       ২০          ২
আলমগীর               ৪       ১৩           ১ 
সবুজ কুমার            ৩       ১৩           ১ 
ভুবন                      ৩         ৯            ২
আনিসুর                  ৩        ১২          ০
নাসিরউদ্দিন            ৩       ১৩           ১
নয়ন                        ২       ৭
জসিম আক্তার          ২      ১৪

মোট                        ৪৫    ১৮৭      ১১

এজেড/এফআই