মেয়েদের ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে বিতর্কিত চুমুকাণ্ড নিয়ে এখনও আলোচনা শেষ হয়নি। কিছুদিন আগেই স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) সাবেক সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন ভুক্তভোগী ফুটবলার জেনিফার হারমোসো। এবার স্প্যানিশ এই তারকা আরেকটি বিধ্বংসী অভিযোগ সামনে এনেছেন। তার অভিযোগের তির এবার সাবেক স্পেন কোচ জর্জ ভিলদার দিকে। হারমোসোর দাবি— কোচের কারণে রাতে দরজা খোলা রেখে ঘুমাতে হতো নারী ফুটবলারদের।

গত বছরের আগস্টে বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপা জিতেছিল স্পেনের মেয়েরা। কিন্তু তাদের এমন ঐতিহাসিক অর্জন ছাপিয়ে যায় ফেডারেশন সভাপতির বিতর্কিত আচরণে। যা নিয়ে প্রথমে ৪৬ বছর বয়সী রুবিয়ালেসকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছিল ফিফা। পরে তদন্ত শেষে তাকে তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি স্প্যানিশ টিভি অনুষ্ঠান ‘প্ল্যনেট কলেজা’য় কথা বলেন হারমোসো। আর সেখানেই তিনি আগে থেকে বিতর্কিত কোচ ভিলদার বিরুদ্ধেও নতুন করে অভিযোগ তোলেন।

হারমোসো বলছেন, ‘যখন আমরা রাতে ঘুমাতে যেতাম (আন্তর্জাতিক ম্যাচের ক্যাম্পে), আমাদের দরজা খোলা রাখতে হতো এবং তিনি (কোচ ভিলদা) কথা বলতে আসবেন– এজন্য অপেক্ষা করতে হতো আমাদের। তিনি বলতেন ব্যক্তিভাবে সবার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সেটাই সঠিক সময়। এভাবে প্রথম খেলোয়াড় থেকে শুরু করে একে একে সব খেলোয়াড়ের দরজায় টোকা পড়ত তার, হতে পারে এর ভেতর কেউ কেউ ইতোমধ্যে ঘুমিয়েও গেছে।’

ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা সাংবাদিক ডানায়ে বোরোনাট তখন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্প্যানিশ ফুটবলারের আরেকটি স্বীকারোক্তি পড়ে শোনান। যেখানে ভিলদার বিরুদ্ধে ওই ফুটবলার লিখেছেন, ‘তিনি আমাদের সঙ্গে সন্তানের মতো আচরণ করতেন, যেখানে ফুটবলারদের কেউ কেউ প্রায় তার সমবয়সীও ছিল। তিনি খুবই কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব দেখাতেন, যা মেনে চলা খুবই কঠিন। এমনকি রাত ১১টার পরও তিনি আমাদের রুমে গিয়ে দেখতেন, সবাই আছি কি না!’

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্প্যানিশ মেয়েদের সঙ্গে কোচ ভিলদা (পেছনে ডানে)

ভিলদার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়, তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ২০২২ সালে দেশটির ১৫ ফুটবলার পদত্যাগ চেয়ে স্বাক্ষর করেছিলেন। যেখানে তার কোচিংয়ের পদ্ধতি তাদের জন্য মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলেও উল্লেখ করা হয়। যদিও এরপর ভিলদার অধীনেই স্প্যানিশ মেয়েদের সর্বশেষ বিশ্বকাপে খেলতে হয়েছে। রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর গত সেপ্টেম্বরে প্রধান কোচের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় ভিলদাকে।

উল্লেখ্য, বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষে পুরস্কার মঞ্চে হারমোসোর ঠোঁটে রুবিয়ালেস চুমু খাওয়ার পর থেকেই মূলত বিশ্ব ফুটবলে বিতর্কের ঝড় ওঠে। শুরুটা সমালোচনা দিয়ে হলেও পরে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়। চুমু-কাণ্ডের ঘটনায় রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে মামলা করেন হারমোসোও। দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে উপস্থিত হয়ে তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। যার বিচার কার্যক্রম এখনও চলমান।

অবশ্য এই ঘটনার শুরু থেকেই নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন রুবিয়ালেস। তার পদত্যাগের কারণে জাতীয় দলের ফুটবল না খেলা বা বয়কট আন্দোলনও করেন দেশটির বিশ্বকাপজয়ী নারী ফুটবলাররা। একপর্যায়ে চতুর্মুখী চাপে দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য হন রুবিয়ালেস। শুধু স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির পদ থেকেই নয়, উয়েফার নির্বাহী কমিটির সহসভাপতির পদ থেকেও সরে দাঁড়ান তিনি। 

এএইচএস