নতুন কোচ নিয়ে ব্রাজিল ভক্তদের মাঝে খানিকটা অসন্তোষ থাকতেই পারে। ২০২৪ সালের কোপা আমেরিকার আগে কার্লো অ্যানচেলত্তিকে আনার কথা ছিল সিবিএফের। তবে আদালত আর ব্রাজিল ফুটবলের দড়ি টানাটানিতে সরে গিয়েছেন ইতালিয়ান কোচ অ্যানচেলত্তি। আবার ফলাফলের কথা বিবেচনা করে রাখা হয়নি আগের কোচ ফার্নান্দো দিনিজকে। 

পছন্দের কোচের তালিকায় সবার ওপরে ছিল আবেল ফেরেইরা কিংবা জর্জ হেসুসের নামটাও। তবে তাদের দুজনকেও ডাকেনি সিবিএফ। ব্রাজিল ফুটবলের সভাপতির পদে থাকা এডনালদো রদ্রিগেজের পছন্দ দরিভাল জুনিয়র। এমন কোচের অধীনে এবার নতুন মিশনে নামতে যাচ্ছে ব্রাজিল। 

কিন্তু দরিভালকে নিয়ে এমন উচ্চাশার কারণও আছে। ব্রাজিলের ফুটবলে রীতিমত ক্রাইসিসম্যান এই দরিভাল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যেমন অবনমন এড়াতে স্যাম অ্যালারডাইস কিংবা শন ডাইচের ওপর ভরসা রাখে দলগুলো। তেমনি ব্রাজিলের ক্লাবগুলো নিজেদের দুঃসময়ে হাজির হয় দরিভালের দুয়ারে।  

কোনো কোনো তথ্য অনুযায়ী, ব্রাজিলের বিখ্যাত ফ্লামেঙ্গো, পালমেইরাস, সাও পাওলো, সান্তোস, ফ্লুমিনেন্স সহ ২৫টি ব্রাজিলিয়ান ক্লাবের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দরিভাল। এমনকি আজকের দিনের বড় তারকা নেইমার তার সান্তোসে থাকার সময় ছিলেন এই কোচের সাহচর্যেই। 

দরিভালকে নিয়ে বলা হয়, অভিজ্ঞ খেলোয়াড় বা তরুণ প্রতিভা সবাইকে সামাল দিতে জানেন। ব্রাজিলিয়ান লিগে বড় দলগুলোর কোচ ছিলেন, সেই সাথে শিরোপা জেতার অভ্যাসও আছে তার। ২০২২ সালে ফ্ল্যামেঙ্গোর কঠিন সময়ে তাদের দায়িত্ব নেন। পরে দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব শ্রেষ্ঠত্ব কোপা লিবার্তোদেরেস জেতেন। জয় করেছেন কোপা দো ব্রাজিল। সাও পাওলোর দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকেও শিরোপা জেতান তিনি। 

২০১৬ সালে তিতেকে কোচ করার আগেও তাকে বিবেচনা করা হয়েছিল। তিতের বিদায়ের পর ১৩ মাস ঘুরে আবার দরিভালের দ্বারস্থ হচ্ছে ব্রাজিল। সেলেসাওদের কোচ হওয়ার সময় ২২ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে হাজির হচ্ছেন তিনি। 

কোচিং ক্যারিয়ারে দরিভালের প্রিয় ফরমেশন হচ্ছে ৪-২-৩-১। দুজন ডেস্ট্রয়ার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রেখেই খেলতে পছন্দ করেন ৬১ বছর বয়েসী এই কোচ। প্রথাগত ব্রাজিলিয়ান ঘরানার কোচ নন তিনি। রক্ষণ সামলে তার পর আক্রমণ, এই হচ্ছে তার মূলমন্ত্র। দলে বরাবরই একজন ক্লাসিক নাম্বার টেন খেলানোর পক্ষে তিনি। দরিভাল নিজে খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। কোচ হয়েও সেখানে বাড়তি জোর দেন তিনি। 

তবে তার পরিসংখ্যান অবশ্য তার পক্ষে কথা বলছে না তেমন। কোচিং ক্যারিয়ারে ৫৯৬ ম্যাচের ২৭৯টিতে জিতেছেন তিনি। যার মানে শতকরা ৪৭ ম্যাচে জিতেছে তার দল। ড্র করেছেন ১৪৩ ম্যাচে, আর হার ১৭৪ ম্যাচে। তার কোচিং ক্যারিয়ারের ৫৯৬ ম্যাচের ৪৩৯টি ছিল ব্রাজিলের শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে। এছাড়াও নিজের ক্যারিয়ারে ২২ বছরে তাকে বদলাতে হয়েছে ২৫টি ক্লাব। কেবল ২০০৫ সালেই চারবার ক্লাব বদলেছেন এই কোচ। তার ধারাবাহিকতা নিয়েও তাই কিছুটা প্রশ্ন থেকেই যায়। 

৬১ বছর বয়সী দরিভাল বর্তমানে ব্রাজিলের ক্লাব সাও পাওলোর প্রধান কোচের দায়িত্বে আছেন। ক্লাবটির সঙ্গে এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তি আছে তার। তবে ব্রাজিলের জন্য আগামীকাল সোমবারই সমঝোতার ভিত্তিতে চুক্তি বাতিল করবেন দরিভাল। এমনকি নিজের ইন্সটাগ্রামে এরইমাঝে সাও পাওলোর ভক্তদের কাছ থেকে বিদায়ও নিয়ে নিয়েছেন তিনি। 

জেএ