ব্রাজিলের দুর্গতি, চুমুকাণ্ড আর সুপার লিগে বিতর্ক
২০২৩ সালের ফুটবল জগতের সবচেয়ে আলোচিত কিংবা সমালোচিত ঘটনা কোনটি? এমন প্রশ্নের উত্তরে ম্যানচেস্টার সিটির ট্রেবল, মেসির অষ্টম ট্রেবল, সৌদি লিগের উত্থানসহ নানা দিকই উঠে আসতে পারে। তবে সব ছাপিয়ে বিতর্কিত চরিত্রের শীর্ষে এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি আদতে ফুটবলারই নন। লুইস রুবিয়ালেস মূলত ছিলেন স্পেনের ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি। অথচ, চলতি বছর ফুটবলের মঞ্চে সবচেয়ে বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনিই।
বিজ্ঞাপন
নারী ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে শিরোপা বিতরণের মঞ্চে উচ্ছ্বসিত রুবিয়ালেস চুমু দিয়ে বসেন বিশ্বকাপজেতা তারকা জেনি হেরমোসোকে। তাদের দুজনের এই নাটকের জল গড়িয়েছে বহুদূর। এছাড়া আলোচিত ছিল ব্রাজিলের ফুটবলও। ১১১ বছরে প্রথমবার অবনমিত হয়েছে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব সান্তোস। আবার জাতীয় দলেও ছিল অস্থিরতা। বছরের শেষ সময়ে শোরগোল ফেলেছে সুপার লিগও।
রুবিয়ালেসের চুমুতে উত্তাল ফুটবল দুনিয়া
মাত্রই বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে স্পেনের মেয়েরা। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নারীদের ফুটবলে সেরা হয়েছে দলটি। পুরস্কার বিতরণের মঞ্চে সেই উচ্ছ্বাসের আবেগেই কিনা নিজ দলের নারী ফুটবলার জেনি হেরমোসোকে চুমু দিয়ে বসেন স্প্যানিশ ফুটবলের সভাপতি লুইস রুবিয়ালেস। স্বাভাবিকভাবেই বিতর্কের ঝড়ে পড়েন রুবিয়ালেস।
বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে তার পদত্যাগ ও শাস্তির দাবি করা হয়। এ ঘটনায় হেরমোসো মামলা করলে আরও চাপে পড়েন রুবিয়ালেস। যদিও নিজেকে নির্দোষ দাবি করে পদ আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিলেন রুবিয়ালেস। এতে চটে যায় স্পেনের মেয়েরা। ধর্মঘটের ডাক দেন ফুটবলাররা। একপর্যায়ে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির পদ ছাড়াও, উয়েফার নির্বাহী কমিটির সহসভাপতির পদ থেকেও সরে দাঁড়ান তিনি। ফিফাও তাকে ফুটবল থেকে বরখাস্ত করে।
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন এবং জার্মানি
চলতি বছর দুটো বিশ্বকাপের আয়োজন দেখেছেন ফুটবল ভক্তরা। বছরের শুরুতেই নারী বিশ্বকাপ ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্পেন। সিডনিতে ইংল্যান্ডের মেয়েদের ১-০ গোলে হারায় স্পেনের মেয়েরা। আর শেষদিকে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট বুঝে পেয়েছে জার্মান কিশোররা। ফ্রান্সকে টাইব্রেকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে জার্মানি।
আরও পড়ুন
ব্রাজিলের দুর্গতি
ব্রাজিলের ফুটবলের বাজে অবস্থা থেকে মুক্তি মেলেনি ২০২৩ সালে এসেও। ২০২২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল তাদের। ২৩ সালে এসে সেই দুরাবস্থার পালে নতুন হাওয়া লেগেছে। অন্তবর্তীকালীন কোচ লুইস দিনিজ নিজের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সকে কোপা লিবার্তোদেরেস শিরোপা জিতিয়েছিলেন। তবে, জাতীয় দলেই খেই হারিয়েছেন তিনি। সবশেষ টানা তিন ম্যাচ হেরে ফিফা বিশ্বকাপের বাছাইয়ে ৬ষ্ঠ স্থানে আছে তারা।
একইবছর নিজের দেশের মাটিতে প্রথমবার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ম্যাচে হেরে যায় তারা। সেটাও নিজেদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার কাছে। এছাড়া দেশটির ঐতিহ্যবাহী ক্লাব সান্তোস প্রথমবারের মত অবনমনের মুখে পড়েছে। পেলে-নেইমারের স্মৃতিবিজড়িত ক্লাবটি আগামী মৌসুমে খেলবে দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল।
এছাড়া নেইমারের ইনজুরিও দেশটির ফুটবলে বড় খবর। হাঁটুর ইনজুরিতে ২০২৪ সালের কোপা আমেরিকা খেলাও হচ্ছে না তার। সবমিলিয়ে ২০২৩ সালকে ব্রাজিলের জন্য দুর্গতির বছর বলাই যায়।
সুপার লিগ বিতর্ক
বছরের শেষ দিকে আলোচনায় এসেছে সুপার লিগ। ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের রায়ের পর টুর্নামেন্ট চালুর দুয়ার খুলে গেছে ইউরোপিয়ান সুপার লিগের (ইএসএল) সামনে। এতদিন উয়েফা ও ফিফার বাধায় এই লিগটি চালু করা যায়নি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে— এই আশঙ্কা করেছিল উয়েফা। সে কারণে বিভিন্ন ক্লাব ইচ্ছা প্রকাশ করলেও সুপার লিগে যোগ দিতে পারেনি। কিন্তু ইউরোপের সর্বোচ্চ আদালত উয়েফা ও ফিফার এমন আচরণকে বেআইনি বলে রায় দিয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালের এপ্রিলে ইএসএলে যোগদানের ব্যাপারে ১২টি ক্লাব ঘোষণা দিয়েছিল। পরবর্তীতে নানামুখী সমালোচনা ও সমর্থকদের আন্দোলনের মুখে তারা সেই ঘোষণা প্রত্যাহার করে নেয়। তাদের মধ্যে কেবল স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ সুপার লিগটিতে খেলার বিষয়ে অনড় ছিল।
এবার অবশ্য আলোচনায় থাকতে পারেনি সুপার লিগ। শুরুতেই মুখ ফিরিয়ে নেয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সব ক্লাব। এছাড়া সাড়া দেয়নি ইতালিয়ান সিরিআ এবং স্প্যানিশ লিগের অনেক ক্লাবই। সবমিলিয়ে আদালতে জয়ী হলেও আদতে বড় কিছু করে দেখাতে পারেনি সুপার লিগ।
আরও পড়ুন
হালান্ড -বেলিংহ্যামের বছর
ম্যানচেস্টার সিটির নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার আর্লিং হালান্ড চলতি বছর ছাপিয়ে গিয়েছেন আর সবাইকেই। একের পর এক গোল করেছেন। ম্যানসিটির জার্সিতে পেয়েছেন ৫টি আলাদা আলাদা শিরোপার স্বাদ। আর তাতে মুখ্য ভূমিকা ছিল হালান্ডের। পেয়েছেন উয়েফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
বলতে গেলে স্বপ্নের মত বছরই পার করেছেন এই নরওয়েজিয়ান তরুণ। এ বছর ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ, উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছেন। এখন পর্যন্ত ৬০ ম্যাচে করেছেন ৫০ গোল।
অন্যদিকে ডর্টমুন্ডে ব্যাপক আলো ছড়ানো জ্যুড বেলিংহ্যাম রিয়াল মাদ্রিদে এসেছেন চলতি মৌসুমে। এসেই নিজের জাত চিনিয়েছেন এই ইংলিশ মিডফিল্ডার। স্প্যানিশ ক্লাবটির হয়ে ২১ ম্যাচেই করেছেন ১৭ গোল। ব্যালন ডি’ অরের মঞ্চে জিতেছেন সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কারও।
নাটকীয়তার নাম লিওনেল স্কালোনি
আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনিকে নিয়ে কম নাটকীয়তা হয়নি বছরের শেষে এসে। ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচের পর আচমকাই নিজের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকেই নানা গুঞ্জন ডালপালা মেলেছে। কখনো মেসির সঙ্গে তার গুঞ্জনের খবর চাউর হয়েছে। আবার আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশন সভাপতির সঙ্গেও তার সম্পর্ক খারাপের কথাও শোনা গিয়েছে।
তবে একমাসের মধ্যেও সেই নাটকীয়তা শেষের ইঙ্গিত দিয়েছেন কোচ স্কালোনি নিজেই। সম্ভবত লম্বা সময়ের জন্যই থাকছেন আর্জেন্টিনার ডাগআউটে।
জেএ