আনন্দ-বিষাদের মিশ্র এক সময় পার করছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, এক ম্যাচে জয় তো পরেরটিতে হার। গতকাল তো বলতে গেলে বিধ্বস্ত’ই হয়েছে এরিক টেন হাগের দলটি। লিগ টেবিলে পিছিয়ে থাকা বোর্নমাউথের কাছে ম্যানইউ হেরেছে ৩-০ গোলের বড় ব্যবধানে। একই রাতে অ্যাস্টন ভিলার সামনে হোঁচট খেয়েছে আর্সেনাল। ১-০ গোলের পরাজয় তাদের টেবিলের দুইয়ে নামিয়ে দিয়েছে।

শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ছিল ব্যস্ত সূচি। যেখানে জায়ান্ট দলগুলো মিশ্র পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ঘরের মাঠেও বড় ব্যবধানের হার ঠেকাতে ব্যর্থ ম্যানইউ। যেখানে প্রথমবারের মতো জয়ের স্বাদ পেল বোর্নমাউথ। এর আগে ইউনাইটেড সবশেষ ২০১৯ সালে বোর্নমাউথের বিপক্ষে হেরেছিল। অন্যদিকে, প্রতিপক্ষের জন্য ভিলা পার্ক ‘বধ্যভূমি’ হয়েই থাকল। সর্বশেষ আর্সেনালের বিপক্ষে লিগে নিজেদের মাঠে টানা ১৫ ম্যাচ জয়ের স্বাদ পেল ভিলা, যা তাদের নতুন রেকর্ড।

ম্যানইউ-বোর্নমাউথ : ০-৩

এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই দুঃস্বপ্নের ঘোরে আটকে পড়ে ম্যানইউ। পঞ্চম মিনিটেই ডোমিনিক সোলাঙ্কি কয়েক পা ঘুরে আসা বল পেয়ে আলতো টোকায় জালে জড়িয়ে দেন। প্রতিপক্ষের মাঠে শুরুতেই দর্শকদের স্তব্ধ করে দেয় বোর্নমাউথ। নভেম্বরে লিগের মাসসেরা ফুটবলার হওয়া হ্যারি ম্যাগুয়ার অষ্টম মিনিটেই সেই গোল শোধ করে ফেলেছিলেন প্রায়। তবে বোর্নমাউথের ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক নেতোর প্রচেষ্টায় ম্যানইউ’র সমতায় ফেরা হলো না। এরপর ৩৯তম মিনিটে ব্যবধান প্রায় দ্বিগুণ করে ফেলেছিল সফরকারীরা। এবারও কয়েকজনের মাঝে ফাঁক খুঁজে সোলাঙ্কি শট নিলেও দূরের পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

গোলের জন্য মরিয়া ইউনাইটেড আক্রমণের ধার বাড়ায় পরের অর্ধে। তবে ৪৯তম মিনিটে রক্ষণে আলেজান্দ্রো গার্নাচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের শট ব্লকড হয়ে ফেরে। একটু পর ম্যাকটমিনের হেড ফেরান নেতো। তারা যখন প্রতিপক্ষের জাল হন্য হয়ে খুঁজছে, তখন ৬১তম মিনিটে বোর্নমাউথের ফিলিপ বিলিংয়ের শট জাল কাঁপিয়ে দেয়। ইউনাইটেডের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা প্রায় শেষ হয়ে যায় ৭৩তম মিনিটে। কর্নার থেকে দূরের পোস্টে ফাঁকা থাকা সেন্সি হেডে পরাস্ত করেন ওনানাকে।

ম্যাচ হারের দিনে রেড ডেভিলদের জন্য আরও বড় দুঃসংবাদ ফার্নান্দেজের হলুদ কার্ড। যার কারণে লিভারপুলের বিপক্ষে পরের লিগ ম্যাচে এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডারকে পাবে না ইউনাইটেড। বড় এই হারের পর ১৬ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে আছে ইউনাইটেড। বোর্নমাউথের অবস্থান ১৩ নম্বরে।

অ্যাস্টন ভিলা-আর্সেনাল : ১-০

ঘরের মাঠে বরাবরই দুর্দান্ত অ্যাস্টন ভিলা। সেখানে এমিলিয়ানো মার্টিনেজের দলটি আর্সেনালকে আরও একবার তিক্ত হারের স্বাদ দিয়েছে। ম্যাচের ৭ম মিনিটেই প্রথম ভালো সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যায় ভিলা। লেওন বেইলির পা থেকে বল পেয়ে প্রথমে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন, পরে শরীর ঘুরিয়ে নেওয়া শটে লক্ষ্যভেদ করেন জন ম্যাকগিন। পিছিয়ে পড়েও তেমন সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না সফরকারী গানাররা। ৩২তম মিনিটে বুকায়ো সাকার শট ধোপে টিকেনি মার্টিনেজের সামনে। এরপর আর্সেনালের ওয়াকিন্স ও মার্টিন ওডেগোরের শটও বাইরে দিয়ে যায়। 

এরপর ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার দুই তারকার লড়াই দেখা যায় ৩৫তম মিনিটে। সতীর্থের লং পাসের নিয়ন্ত্রণে নিতে ছুটছিলেন গাব্রিয়েল মার্টিনেল্লি, পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে ক্লিয়ার করতে যান মার্টিনেজও। মার্টিনেল্লির চিপ তার মাথার ওপর দিয়ে ছুটছিল জালের দিকে, দ্রুত গিয়ে ক্লিয়ার করেন দিয়েগো কার্লোস। এরপর আরও দু’বার মার্টিনেজ দলকে গোলের হাত থেকে রক্ষা করেন।

বিরতির পর আর্সেনাল সমতায় ফিরতে পারত। ওয়াটকিন্সের গা থেকে বল প্রায় জালে জড়িয়ে পড়ছিল ৫৬তম মিনিটে, এবারও বল ক্লিয়ার করেন কার্লোস। আর্জেন্টাইন গোলরক্ষককে কাটিয়ে ৬১তম মিনিটে বল জালে জড়ান সাকা। এবারও অফসাইডের কারণে গানাররা গোলটি পায়নি। একটু পর ওয়াটকিন্সের শট আটকে ব্যবধান দ্বিগুণ হতে দেননি আর্সেনাল গোলরক্ষক ডেভিড রায়া। ৯০তম মিনিটে কাই হাভার্টজ জালে বল জড়িয়ে সমতা ফেরানোর উদযাপন শুরু করেন, কিন্তু হ্যান্ডবলের বাঁশি বাজান রেফারি। ভিএআর চেকে শট নেওয়ার আগে হাভার্টজের হ্যান্ডবল হওয়ার সিদ্ধান্তই অটুট থাকে। 

হারের কারণে লিগ টেবিলে শীর্ষে ফেরা হয়নি আর্সেনালের। দুইয়ে থাকা মিকেল আর্তেতার দলটি ১৬ ম্যাচে ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। সমান ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভিলা। 

এএইচএস