ব্রাজিলের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা কে এই ‘নতুন মেসি’ এচেভেরি
যুগে যুগে অনেকের নামের পাশেই যুক্ত হয়েছে ‘নতুন মেসি’ নামটা। সেই স্পেনের বোজান কিরকিচ থেকে যার সূচনা। এরপর অনেকেরই নামের পাশে নতুন মেসি শব্দটা যোগ করা হয়েছিল। কিন্তু লিওনেল মেসি যে একজনই। বয়সভিত্তিক দলে আলো ছড়ানো আর্জেন্টাইন তরুণরা পরবর্তী সময়ে নিজেদের সে অর্থে মেলে ধরতে পারেননি শেষ সময়ে এসে। কালের আবর্তনে নতুন মেসি উপাধি এবার যুক্ত হয়েছে ক্লদিও এচেভেরি নামক এক কিশোরের নামের পাশে।
জার্সি নাম্বার মেসির মতোই ১০। খেলেনও মেসির মত ডিপ লাইয়িং ফরোয়ার্ড বা প্লে-মেকার রোলে। ডানপ্রান্তে মাঝেমাঝেই ছুটে যান। আবার কখনো আকস্মিক রান মেইক করে চলে যান বক্সের সামনে। আর সেখানে বল পায়ে রীতিমত অপ্রতিরোধ্য। বল পায়ে কারিকুরি করতেও কম যান না রিভারপ্লেট একাডেমিতে খেলা এই তরুণ। ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচটাই হয়ত এর বড় প্রমাণ।
বিজ্ঞাপন
মেসির সঙ্গে আরও এক জায়গায় অদ্ভুত মিল আছে এই এচেভেরির। দুজনেই উচ্চতায় কিঞ্চিত খাটো। মেসির উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। আর এচেভেরির ৫ ফুট ৬ এর কিছুটা বেশি। এমন খাটো উচ্চতার কারণেই কিনা নিজ ক্লাব রিভারপ্লেটের সমর্থকদের কাছে তার নাম ‘এল ডিয়াবোলিতো’। যাকে ইংরেজিতে বলা চলে ‘দ্য লিটল ডেভিল।’ বাংলায় ‘ছোট শয়তান।’
আর্জেন্টিনার চাচো প্রদেশের ছোট শহর রেসিসটেন্সিয়া। এখানেই জন্ম ক্লদিও এচেভেরির। বেড়ে উঠা আর ফুটবলের প্রথম দীক্ষাও এই শহর থেকেই। হাতেখড়ি হয়েছিল স্থানীয় দেপোর্তিভো লুজান নামে এক ক্লাবের হয়ে। তবে আর্জেন্টিনার স্কাউটদের চোখে পড়তে খুব বেশিদিন দেরি হয়নি। ২০১৬ সালে ১০ বছর বয়সে যোগ দেন রিভার প্লেটে।
রিভারপ্লেট আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় দুই ক্লাবের একটি। কদিন আগে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো এঞ্জো ফার্নান্দেজ আর জুলিয়ান আলভারেজ তো এই রিভারপ্লেটেরই সম্পদ। ক্লদিও এচেভেরিও তাই দেখতে শুরু করেছেন বড় হওয়ার স্বপ্ন।
এচেভেরি প্রথম নজরে এসেছিলেন এক বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টের সুবাদে। ইতালিতে অনুষ্ঠিত সেই টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচে ৯ গোল করে শিরোনাম হয়েছিলেন তিনি। তবে দল সেবার শেষ করে তৃতীয় হয়ে। তাতে খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না ক্ষুদে এচেভেরি। জানিয়েছিলেন, দলের এমন অবস্থায় ব্যক্তিগত পারফর্মে খুশি নন তিনি।
২০১৬ থেকে ২০২২। রিভারপ্লেট একাডেমিতে খেলেছেন মোটে ৫ বছর। দুর্দান্ত ক্ষুরধার ফুটবলের সুবাদে ২০২২ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে রিভার প্লেটের রিজার্ভ দলের হয়ে অভিষেক ঘটে তার। প্রথম ম্যাচেই গোল করে আরো একবার আলোচনায় আসেন তিনি। রিজার্ভ টিমে ভালো খেলার সুবাদেই কিনা সেবছরই মূল দলের হয়ে অভিষেক হয় তার।
এখন পর্যন্ত রিভার প্লেটের হয়ে ৪ ম্যাচ খেলেছেন এচেভেরি। বয়সে নবীন হওয়ায় এখনই সব ম্যাচে সুযোগ দেওয়া হচ্ছেনা। কিন্তু নিজের জাত চেনাতে এটুকুই যেন যথেষ্ট এচেভেরির জন্য। ওয়ান ভার্সেস ওয়ানে পারফেক্ট ড্রিবলিং তার মূল অস্ত্র। ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে তিন গোলেই ছিল তার ড্রিবলিং দক্ষতার প্রমাণ।
একইসঙ্গে গতি আর শক্তির সমন্বয় আছে তার ডান পায়ে। ডিবক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে বিপক্ষের রক্ষণে কাঁপন ধরাতে পারঙ্গম এচেভেরি। মেসির সঙ্গে তুলনা চলছে। এখন থেকেই ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর রাডারেও আছেন তিনি। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে যা করেছেন, তাতে প্রত্যাশা নিশ্চিতভাবেই আরও বেশি বেড়ে যাবে এই তরুণের উপর।
জেএ