কী কারণে দায়িত্ব ছাড়তে চান স্ক্যালোনি?
আর্জেন্টিনার গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বুধবার ভোরে আরও একদফা ‘মারাকানাজো’ বা মারাকানা ট্র্যাজেডি দেখেছে ফুটবল বিশ্ব। আর্জেন্টিনার কাছে ব্রাজিলের ১-০ গোলের এই হারকে অবশ্য ট্র্যাজেডি বলার উপায় নেই। আবার ট্র্যাজেডি বললেও অত্যুক্তি হয় না। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে এবারই যে প্রথম ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে হারতে হয়েছে ব্রাজিলকে। স্বাভাবিকভাবেই তাই এই ম্যাচকে ট্র্যাজেডি উল্লেখ করতে পিছপা হয়নি আর্জেন্টিনার মিডিয়া।
তবে এই ম্যাচের ফলাফল ছাপিয়ে গিয়েছে আরও অনেক আনুষাঙ্গিক বিষয়। ম্যাচ শুরুর আগেই আর্জেন্টাইন সমর্থকদের উপর ব্রাজিল ভক্তদের চড়াও হওয়া, পরবর্তীতে বিশৃঙ্খলা দমনে পুলিশের লাঠিচার্জ ছিল বেশ দৃষ্টিকটু। আবার নিজ দেশের সমর্থকদের উপর এমন আচরণের প্রতিবাদে লিওনেল মেসির মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথাও আলোচনায় স্থান করে নিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তবে এসব ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় চমক উপহার দিয়েছেন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি। মারাকানায় এই ম্যাচ শেষ করেই জানিয়ে দিয়েছেন, আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে তার দিন। সামনের দিনগুলোতে আলবিসেলেস্তেদের ডাগআউটে তাকে দেখা যাবে কিনা তা নিয়ে নিজেই সন্দিহান।
হুমকি নাকি সত্যি?
কিন্তু স্ক্যালোনির এমন বক্তব্য কী সতর্কতা নাকি নিশ্চিত কোন বক্তব্য? তিনি কী সত্যিই চলে যাচ্ছেন নাকি নিছকই হুমকি দিয়ে রেখেছেন? আপাতত তার বক্তব্য নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠলেও এর সদুত্তর পাওয়া মুশকিল। সবচেয়ে বড় সমস্যা, স্ক্যালোনির এই ঘোষণা এমন সময়ে এসেছে যখন খেলোয়াড়দের অনেকেই ছিলেন না ড্রেসিংরুমে।
আরও পড়ুন
বুধবারের ম্যাচে দলের জয়ের নায়ক নিকোলাস ওতামেন্ডির কথায় উঠে এসেছে সেই সময়ের ড্রেসিংরুমের চিত্র, ‘সেসময় অনেকেই ড্রেসিংরুমে প্রবেশই করেনি। ফিডেও (ডি মারিয়া) তখন ডোপিং টেস্ট দিচ্ছিলো আর লিও (মেসি) তখন মেডিকেল সেবা নিচ্ছিল। মানে আমরা সবাই একসঙ্গে ছিলাম না। কিন্তু পরে আমরা নিশ্চয়ই এটা নিয়ে কথা বলব।
দলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কুটি রোমেরো জানিয়েছেন, ড্রেসিংরুমে এমন কোন কথাই হয়নি। আমি জানিনা তার মনে কী চলছে। আমরা চেষ্টা করব একসঙ্গে থাকার, তিনি আমাদের দলে একজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।’
সত্যিই কোনো দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন কোচ স্ক্যালোনি?
লিওনেল স্ক্যালোনির হাত ধরেই নিজেদের ২৮ বছরের শিরোপাখরা শেষ করেছিল আর্জেন্টিনা। ৩৬ বছর পর জিতে নিয়েছিল নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ। স্বাভাবিকভাবেই দলের ভেতরে-বাইরে প্রত্যেকেরই প্রত্যাশা ছিল ২০২২ বিশ্বকাপের পর চুক্তি নবায়ন করবেন এই আর্জেন্টাইন কোচ। হয়েছেও তাই। তবে এই চুক্তি নবায়নের পর্যায়েই এএফএ-র সভাপতি ক্লাউদিও তাপিয়ার সঙ্গে শীতল সম্পর্ক শুরু হয় এই কোচের।
তবে অন্য যেকোন কোচের মত আর্থিক বিষয়ে কোন দ্বন্দ্বেই জড়াননি এই কোচ। আর্জেন্টিনার গণমাধ্যম ওলের সূত্রে খবর, দলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, সাধারণ নেতৃত্ব এবং কোচিং-স্টাফদের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা নিয়ে তাপিয়ার সঙ্গে কিছুটা সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় স্ক্যালোনির। এছাড়া দলগঠন, পর্যাপ্ত সমর্থন নিয়েও খানিক অসন্তোষে ভুগছিলেন তিনি।
গণমাধ্যম ওলের একটি দাবি, আর্জেন্টিনার ফুটবলের শীর্ষকর্তা ক্লাদিও তাপিয়া আগেই জানতেন এমন কোন এক সংবাদ আসতে চলেছে। যদিও বাস্তবতা বলছে স্ক্যালোনির এই পদত্যাগ ভাবনা নিয়ে কোন প্রকার কথাই এর আগে উচ্চারিত হয়নি। সভাপতি তো বটেই, দলের খেলোয়াড়দের কেউই এই সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
উরুগুয়ের বিপক্ষে পরাজয় কী কারণ?
প্রায় ১ বছর কোন ম্যাচেই হারতে হয়নি আর্জেন্টিনাকে। বাছাইপর্বে ঘরের মাঠে উরুগুয়ের বিপক্ষে হার ছিল বিশ্বকাপে সৌদি আরব ম্যাচের পর প্রথম পরাজয়। এমন পরাজয় খুবই স্বাভাবিক। তবে এই হারকেও সামনে নিয়ে আসছেন অনেকেই। স্ক্যালোনি নিজেই ব্রাজিল ম্যাচের পর বলেছিলেন ‘প্রত্যাশার পারদ অনেক উঁচু।’
অনেকেই এই বাক্যের সঙ্গে উরুগুয়ের পরাজয়কে এক সূত্রে আনার চেষ্টা করেছেন। তবে আর্জেন্টিনার গণমাধ্যমের ভাষ্য, উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটি স্ক্যালোনির এই সিদ্ধান্তে মোটেই প্রভাব ফেলেনি। বরং জাতীয় দলের প্রতি স্ক্যালোনি কৃতজ্ঞ।
স্ক্যালোনিই থাকছেন!
এদিকে এমন ঘটনার প্রায় বেশ অনেকটা সময় পর স্ক্যালোনিই দলের কোচ থাকছেন বলে জানিয়েছেন আর্জেন্টাইন ফুটবলের প্রভাবশালী সাংবাদিক গ্যাস্টন এদুল। তার প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দলের লকাররুমে নিজের চলে যাওয়ার ইস্যুতে কোন কথাই বলেননি কোচ এই কোচ। বরং খেলোয়াড়রা থেকে যাওয়ার কথা বললে তাতে রাজি হন স্ক্যালোনি।
এর আগে ওতামেন্ডি এবং ম্যাক অ্যালিস্টার দুজনেই কোচ স্ক্যালোনি নিজ দায়িত্বে থেকে যাওয়ার অনুরোধ জানান। যদিও এইক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্ক্যালোনিই নেবেন বলে জানিয়েছেন এদুল।
জেএ