গোলের স্বীকৃতি নেই বাংলাদেশে, উধাও অ্যাওয়ার্ড নাইট!
গোলের খেলা ফুটবল, সেই গোলের জন্য ফুটবলারদের কত লড়াই-সাধনা। অথচ, দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তর প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে নেই সর্বোচ্চ গোলদাতার আনুষ্ঠানিক কোনো স্বীকৃতি। এমনকি বিগত আট বছর ধরে মৌসুম সেরাদের নিয়ে অ্যাওয়ার্ড নাইট করাও বন্ধ রেখেছে দেশীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাফুফে।
সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে ২০ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা বসুন্ধরা কিংসের ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ডোরিয়েল্টন। লিগ শেষে ক্লাব চ্যাম্পিয়ন ট্রফি পেয়েছে। চ্যাম্পিয়নের অন্যতম কারিগর ডোরিয়েল্টন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না পাওয়ায় খানিকটা হতাশ, ‘আমি গোল করেছি ক্লাবের জন্য, ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এটাই আমার বড় পাওয়া। তবে একজন ফরোয়ার্ডের স্বপ্ন থাকে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার। এজন্য ট্রফি বা স্বীকৃতি পেলে সবাই অনুপ্রাণিত হয়।’
বিজ্ঞাপন
লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতার স্বীকৃতি না থাকলেও রয়েছে ঘরোয়া মৌসুমের দুই টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপে। টুর্নামেন্টে রয়েছে লিগে নেই এ নিয়ে একটু আক্ষেপই ঝরল ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ডের কন্ঠে, ‘লিগই হচ্ছে একটি দেশের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা। লিগের গোলদাতার স্বীকৃতিই বেশি প্রয়োজন টুর্নামেন্টের চেয়ে। টুর্নামেন্টে যেহেতু দেয়, লিগও দেয়া উচিত।’
আরও পড়ুন>> ফুটবল শেখাবে বাফুফে, আশানুরূপ সাড়া
স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত ঘরোয়া লিগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ (১৭৭) ও সর্বাধিকবার (পাঁচ) সর্বোচ্চ গোলদাতা শেখ মোঃ আসলাম। ১৯৮৪-৮৮ টানা চারবার লিগে সেরা হয়েছেন (৯২ তে আরেকবার)। তার মুখেও অসন্তোষের সুর, ‘বাংলাদেশ তো বটেই অনেক দেশেই একজন ফুটবলারের টানা কয়েকবার লিগের সর্বে্চ্চা গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড খুবই কম। আমার খেলোয়াড়ি জীবনে টানা গোলদাতা হওয়ার কোনো স্বীকৃতি পাইনি। এটা আমাদের বড়ই দুভার্গ্য।’
ফুটবল ফেডারেশন থেকে আসলামকে এমন স্বীকৃতি না দিলেও একটি ব্যাংক থেকে তিনি উত্তরীয় ও সম্মাননা পেয়েছিলেন পাচবারই। শেখ মোঃ আসলামের পর লিগে দ্বিতীয় সর্বাধিকবার গোলদাতা ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব। তারও একই আফসোস, ‘আমি চার বার লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা এটা সবাই জানে কিন্তু আনুষ্ঠানিক কোনো স্বীকৃতি আমার কাছে নেই।’
আরও পড়ুন>> ভিক্টোরিয়া ক্লাব এখন ‘ভূতুড়ে বাড়ি’
২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে পেশাদার ফুটবল লিগের যাত্রা। ২০০৯ সালে বাফুফে প্রথমবারের মতো অ্যাওয়ার্ড নাইট আয়োজন করে। সেই অনুষ্ঠানে লিগে সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন ওয়ালী ফয়সাল। সর্বোচ্চ গোলদাতাকেও স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৫ সালে আরেকটি অ্যাওয়ার্ড নাইট করে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেখানে ২০০৯-১৪ পর্যন্ত ঘরোয়া ফুটবলের বিভিন্ন স্তরের চ্যাম্পিয়ন, রানার্স আপ ক্লাবকে ট্রফি প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ২০১৪-১৫ মৌসুমে সেরা নারী,পুরুষ ও উদীয়মান ফুটবলারের পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাফুফের কোচেস প্যানেল প্রাথমিক তালিকা তৈরির পর ক্রীড়া সাংবাদিকদের ভোটে মামুনুল ইসলাম ও সাবিনা খাতুন যথাক্রমে সেরা পুরুষ এবং নারী ফুটবলার, হেমন্ত ভিনসেন্ট ও সানজিদা উদীয়মানের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।
২০১৫ সালের পর বাফুফে এমন আয়োজন আর করেনি। তাই বর্তমান প্রজন্মের অনেক ফুটবলারই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, ‘ফেডারেশনের কর্মকর্তারা প্রায় প্রতি বছরই ফিফা-এএফসির বর্ষসেরা অনেক অনুষ্ঠানেই যোগদান করে কিন্তু নিজেরা এমন উদ্যোগ গ্রহণ করে না। একটি লিগের সেরা ফুটবলার নির্বাচন এবং সর্বোচ্চ গোলদাতার স্বীকৃতি ফেডারেশনের অবশ্যই দেয়া উচিত।’
২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের শীর্ষ দুই পদে রয়েছেন কাজী সালাউদ্দিন ও আব্দুস সালাম মুর্শেদী। দুই জনই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন একাধিকবার। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম লিগেই ২৪ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন আবাহনীর কাজী সালাউদ্দিন। নয় বছর পর ১৯৮২ সালে ২৭ গোল করে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড করেন মোহামেডানের সালাম মুর্শেদী। বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী প্রিমিয়ার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন এক যুগের বেশি সময়। ২০০৯ ও ২০১৫ সালে দুই বার অনুষ্ঠান করে কিছু স্বীকৃতি দিলেও এরপর থেকে উধাও।
গত বছর লিগ কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন নিজেই। তবে কমিটির প্রায় সকল কাজই তত্ত্বাবধায়ন করেন কমিটির আহ্বায়ক ও ফেডারেশনের অন্যতম সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূইয়া মানিক। আসন্ন লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা সহ আরো কয়েকটি স্বীকৃতির প্রস্তাবনা সামনের লিগ কমিটির সভায় উথাপন হতে পারে বলে জানা গেছে।
এজেড/জেএ