‘বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে চাই’
সিরিজ শেষে গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতেই টিম হোটেল ছেড়েছেন কোচিং স্টাফসহ অনেক খেলোয়াড়। যার গোলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ সিরিজ ড্র করেছে, সেই শেখ মোরসালিন অবশ্য ম্যাচের পরও টিম হোটেলেই ছিলেন। আজ সকালে নিজ বাড়ি ফরিদপুর যাওয়ার আগে ঢাকা পোস্টের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার আরাফাত জোবায়েরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে তার। সেখানেই আফগান সিরিজ এবং ক্যারিয়ারসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ফুটবলের উঠতি তারকা শেখ মোরসালিন।
বিজ্ঞাপন
আপনার গোলেই দল সমতায় ফিরল এবং সিরিজ ড্র করল।
মোরসালিন : গোল করে ভালো লাগছে। তবে ম্যাচ এবং সিরিজ জিততে পারলে অবশ্যই আরও ভালো লাগত।
মোরসালিন : প্রথম ম্যাচের সুযোগটিতে অবশ্যই গোল করা উচিত ছিল। ম্যাচ চলাকালে অতটা খারাপ লাগেনি। শেষ হওয়ার পর থেকে খারাপ লাগা শুরু।
আপনার এই গোল হাতছাড়া করার কারণে সাধারণ দর্শক ও ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে অনেক সমালোচনা তৈরি হয়। কোচিং স্টাফ-সতীর্থরা কিছু বলেছিল আপনাকে?
মোরসালিন : যেকোনো খেলা বিশেষত ফুটবলের প্রাণ দর্শকরা। তারা গোল দেখতেই মাঠে আসেন। গোল মিস হলে তাদের খারাপ লাগবে স্বাভাবিক। সাধারণ দর্শকরা দেখেন একভাবে, কোচ বা খেলোয়াড়রা অবশ্য অন্যভাবে দেখেন। কোচিং স্টাফ ও আমার সতীর্থরা কেউ কোনো চাপ দেয়নি ওই মিসের জন্য।
আপনার সেই মিস নিয়ে আফগানিস্তানের কোচ বলেছিলেন আপনি ৫০ মিটার দৌড়ে এসে সরাসরি শট নেওয়ায় মিস করেছেন। আপনার কি মনে হয় এটাই কারণ?
মোরসালিন : তিনি প্রতিপক্ষ কোচ হয়েও ভালো বিশ্লেষণ করেছেন। মিস মিস-ই, আমি এর পেছনে কোনো অজুহাত বা কারণ দাঁড় করাব না।
আরও পড়ুন >> মোরসালিনের গোলে সিরিজ ড্র বাংলাদেশের
জাতীয় দলে এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচে আপনি তিন গোল করেছেন। জাতীয় দলের জার্সিতে কত গোল করতে চান?
মোরসালিন : যেকোনো ফুটবলারেরই দেশের জার্সিতে গোল করা-ই মূল লক্ষ্য। আমি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে চাই।
নিজের ভালো গুণ সম্পর্কে মোরসালিন বলেন, অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে গতি ও শ্যুটিং প্রয়োজন। আল্লাহর রহমতে আমার সবই আছে। তবে নিজের কাছে মনে হয় থ্রু-পাস দেয়ার সামর্থ্য আমার বেশি। যা আমার সতীর্থ এবং কোচরাও স্বীকার করেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নুর ১৭ গোলই সর্বোচ্চ (শেখ মো. আসলামের বাংলাদেশের জার্সিতে আরও বেশি গোল থাকলেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ম্যাচে কম)। আপনি সেটা অতিক্রম করতে পারবেন?
মোরসালিন : কাজী সালাউদ্দিন, আশরাফউদ্দিন চুন্নুসহ আরও অনেকে বাংলাদেশের ফুটবলের কিংবদন্তি। তাদের অবদান এবং কীর্তি শুধু গোলসংখ্যা দিয়ে বিচার করা যাবে না। অনেক ক্ষেত্রে তাদের অনেক কিছুই অতিক্রম করার মতোও না। আমার পারফরম্যান্স ও ফিটনেস থাকলে আশা করি আরও অনেকদিন জাতীয় দলে খেলতে পারব। ইনশা-আল্লাহ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে ক্যারিয়ার শেষ করতে পারব এমন আত্মবিশ্বাস রয়েছে। এর পাশাপাশি আরেকটি লক্ষ্য রয়েছে, তা হলো বিদেশি লিগে খেলা।
আরও পড়ুন >> ‘দেশি কোচদের মূল্য নেই’
আপনাকে নিয়ে মিডিয়া এবং সামাজিক মাধ্যমে অনেক আলোচনা। এটা কি আপনার জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করে?
মোরসালিন : মানুষ ফুটবল ভালোবাসে। আর মিডিয়া ফুটবলের বড় অংশীদার। খেলোয়াড়দের নিয়ে সব মহলেই আলোচনা-সমালোচনা হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে আমার পূর্ণ মনোযোগটা খেলা-তেই রাখি।
রবিউল, জাফর ইকবাল আরও অনেক ফুটবলার সম্ভাবনা জাগিয়েও পূর্ণ বিকশিত হতে পারেননি। ঝরে না পড়ার বিষয়ে আপনি কতটুকু সচেতন?
মোরসালিন : এই ব্যাপারে আমি শতভাগ সচেতন। ইনজুরি ছাড়া অন্য কোনো কারণে আমি ঝরে পড়ব না, সেটা আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি। আমি একজন শিক্ষিত ফুটবলার হতে চাই। পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে চাই খেলার পাশাপাশি।
মোরসালিনের আশা, যেকোনো ফুটবলারেরই দেশের জার্সিতে গোল করা-ই মূল লক্ষ্য। আমি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে চাই।
জাতীয় দলের মতোই ক্লাব ফুটবলেও আপনার গোলসংখ্যা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি একটু অন্যরকম নয় কী?
মোরসালিন : আসলে আমি ক্লাবে যে পজিশনে খেলি সেই পজিশনে বিদেশি খেলোয়াড় রয়েছে। সে হিসেবে ক্লাবে আমি একটু কম সুযোগ পাওয়ায় গোলসংখ্যাও কম।
আরও পড়ুন >> ফুটবলের ৫০ বছর : প্রথম দলের ১৭ জনের কে কোথায়?
আপনার মতো এরকম অনেকেই রয়েছেন যারা ক্লাবে সুযোগ পান না, এজন্য জাতীয় দলেও ডাক পান না তারা। আবার জাতীয় দলের স্কোয়াডে থেকেও খেলতে পারেন না কেউ কেউ। তারা সুযোগ পেলে কি জাতীয় দলে ভালো করবে?
মোরসালিন : এটা আসলে কোচের বিষয়। আর গোলের বিষয়ে বলব এটা অনেক সময় ভাগ্যও লাগে।
জাতীয় দলের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার প্লেয়িং ফরমেশন আপনার গোল পাওয়ার অন্যতম উপলক্ষ...
মোরসালিন : এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার প্লেয়িং ফরমেশনের সঙ্গে আমি মানিয়ে নিয়েছি।
কোচদের ওপর খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স নির্ভর করে। বিশেষ করে বাংলাদেশে কোচরা দুই-তিন বছরের বেশি স্থায়ী হন না। হ্যাভিয়ের না থাকলে আপনার এই পজিশন এবং গোলের ধারাবাহিকতায় প্রভাব পড়তে পারে...
মোরসালিন : আমার ক্যারিয়ার মাত্র শুরু। সময়ের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা এবং পরিপক্বতা বৃদ্ধি পাবে। পরবর্তী সময়েও আশা করি সেই সমস্যা হবে না।
আরও পড়ুন >> ‘বাংলাদেশের সবই এগিয়েছে, ফুটবল ছাড়া’
জাতীয় দলে গোল করে আপনি তারকা খ্যাতি পেয়েছেন। ফুটবলাঙ্গনে আপনার পরিচিতি কিন্তু মোহামেডানের জার্সিতে বসুন্ধরার বিপক্ষে গোলটির মাধ্যমে
মোরসালিন : আমার এই উত্থানের পেছনে মূল অবদান দিতে চাই কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান স্যারকে। তিনি আমাকে তৃতীয় বিভাগ থেকে সরাসরি কিংসে সুযোগ দিয়েছেন। জাতীয় দলের তারকা ফুটবলার এবং বিদেশি বড় মানের খেলোয়াড়ের মধ্যে আমার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না, এটাই বাস্তবতা। আমার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি মোহামেডানে আমাকে লোনে পাঠান। মোহামেডানের প্রতিও আমার কৃতজ্ঞতা। মোহামেডান আমাকে খেলার সুযোগ না দিলে আমি নিজেকে মেলে ধরতে পারতাম না।
ফুটবলার হিসেবে নিজের কোন গুণটি আপনার সেরা মনে হয়?
মোরসালিন : অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে গতি ও শ্যুটিং প্রয়োজন। আল্লাহর রহমতে আমার সবই আছে। তবে নিজের কাছে মনে হয় থ্রু-পাস দেয়ার সামর্থ্য আমার বেশি। যা আমার সতীর্থ এবং কোচরাও স্বীকার করেন।
আরও পড়ুন >> ক্রীড়াসঙ্গীত আছে, ক্রীড়াসঙ্গীত নেই!
আপনার তিন গোলের দুটিরই যোগানদাতা বিশ্বনাথ ঘোষ...
মোরসালিন : বিশ্ব-দার সঙ্গে আমার দারুণ বোঝাপড়া। বিশ্ব-দা, রাকিব ভাইসহ সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
জাতীয় দলের সিরিজ শেষ, এখন আবার ক্লাবের ব্যস্ততা। সামনের মাসে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্লে অফ...
মোরসালিন : পরশু বাড়ি থেকে ফিরে ক্লাবে যোগ দেব। এএফসি কাপে আমরা এবার পরের রাউন্ডে উঠতে চাই। সুযোগ পেলে ক্লাবের হয়েও আন্তর্জাতিক গোল করতে চাই। সামনের মাসে মালদ্বীপের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মূল মঞ্চে নেওয়ার শতভাগ চেষ্টাই থাকবে।
এজেড/এএইচএস