ফিফা বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। বাফুফের আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে ৫১ পাতার প্রতিবেদনও প্রকাশ করে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। সেটার আলোকে বাফুফে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি পর্যবেক্ষণ-সুপারিশসহ ৩০ জুলাই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কিন্তু চার সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো নির্বাহী সভায় উঠেনি।

৩০ জুলাই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বাফুফের অন্যতম সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ তদন্ত প্রতিবেদন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কাছে পেশ করেন। এই প্রতিবেদন নির্বাহী সভায় আলোচনা-পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত আসবে। নির্বাহী সভা এখনো না হওয়ায় বিষয়টি এখনো অসমাপ্ত রয়েছে।

গত এক মাসে নির্বাহী সভা না হওয়ায় বাফুফের অনেক কর্মকর্তাই বিস্মিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, 'তদন্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যেই মিটিং হওয়া উচিত ছিল। এই অধ্যায় শেষ করে আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়া উচিত।’ সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতিদের অনেকে উপস্থিত থাকতে পারেন এমন দিন বিবেচনা করেই সাধারণত সভাপতি নির্বাহী সভা ডাকেন। সাধারণ সম্পাদক সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে সভার আলোচ্যসূচি চূড়ান্ত করে চিঠি ইস্যু করেন।

ফেডারেশনের একাংশের মত, ফিফার প্রতিবেদনে বাফুফের কয়েকজন স্টাফের নামের মধ্যে অন্যতম দুই জন প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন ও অপারেশন্স ম্যানেজার মিজান ফেডারেশন থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই সভার গুরুত্বও কমেছে তাদের মতে।

আগস্ট মাসে বাফুফের তেমন কর্মব্যস্ততা ছিল না। কয়েক দিনের প্রস্তুতিতে ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিলাম আয়োজন করেছে বাফুফে। সেখানে একটি নির্বাহী সভার উদ্যোগ কোনো নেই। সামনের সেপ্টেম্বরে ফুটবলে অত্যন্ত ব্যস্ত সময়। সিনিয়র, অনুর্ধ্ব, অলিম্পিক দল সহ নানা খেলা রয়েছে। প্রায় প্রতিটি দলের সঙ্গেই বাফুফের নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা জড়িত। এত ব্যস্ততার মধ্যে নির্বাহী সভার সময় কবে নির্ধারণ হয় সেটাই দেখার বিষয়।

১৪ এপ্রিল ফিফা বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে নিষিদ্ধ করে। এর দুই দিন পরেই বাফুফে জরুরি নির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এই বিষয়ে অধিকতর তদন্তর জন্য। কমিটি গঠনের এক সপ্তাহ পরেই দুই সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূইয়া মানিক ও মহিউদ্দিন আহমেদ মহী কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন।

১৭ এপ্রিলের সভায় এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদনের ডেডলাইন থাকলেও ২ মে নির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হয় তদন্ত কমিটির প্রথম সভা থেকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার। ৭ মে তদন্ত কমিটি প্রথম সভা করে। ৭ মে থেকে ৩০ কর্ম দিবস শেষ হওয়ার আগেই তদন্ত কমিটি আরো ১৫ কর্মদিবস বৃদ্ধির জন্য আবেদন করে। ১৭ জুলাই পুনরায় সময় বৃদ্ধি করে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার ডেডলাইন পুনঃনির্ধারণ করে। ৩০ জুলাই তদন্ত কমিটির সাত জন সদস্যের স্বাক্ষরে (বাফুফে সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান সব সভায় অনুপস্থিত ছিলেন এবং প্রতিবেদনেও স্বাক্ষর করেননি) প্রতিবেদন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কাছে জমা হয়।

ঘটনাপ্রবাহ-

১৪ এপ্রিল: ফিফার বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে ২ বছরের নিষেধাজ্ঞা। ৫১ পাতার প্রতিবেদন।

১৭ এপ্রিল: বাফুফের জরুরি নির্বাহী সভায় ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন ও এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদনের সময়সীমা।

২৬ এপ্রিল : তদন্ত কমিটির দুই সদস্যের পদত্যাগ।

২ মে : নির্বাহী সভায় পুনঃসিদ্ধান্ত- তদন্ত কমিটির প্রথম সভা থেকে ৩০ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন।

৭ মে: তদন্ত কমিটির প্রথম সভা।

১৩ জুন: তদন্ত কমিটির ১৫ কর্মদিবস সময় বৃদ্ধির আবেদন।

১৭ জুলাই : তদন্ত কমিটির পুনরায় সময় বৃদ্ধির আবেদন।

৩০ জুলাই: ফেডারেশন সভাপতির কাছে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল।

২৮ আগস্ট: চার সপ্তাহ অতিক্রান্ত হওয়ার পরও নির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়নি।

এজেড/এইচজেএস