বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনের তারকা ফুটবলার জেনিফার হারমোসোকে তার সম্মতিতে চুমু দিয়েছেন বলে দাবি করেছিলেন দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) প্রেসিডেন্ট লুইস রুবিয়ালেস। তবে তাতে মোটেও সম্মতি ছিল না জানিয়েছেন হারমোসো। একইসঙ্গে রুবিয়ালেসের পদত্যাগের দাবিতে বিশ্বকাপজয়ী দলের ২৩ সদস্যসহ ৮০ ফুটবলার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তবে তাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে আরএফইএফ। এক বিবৃতিতে তারা রুবিয়ালেসের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি দাঁড় করিয়েছে।

এর আগে শুক্রবার আরএফইএফের জরুরী সভায় নিজের পক্ষে সাফাই গাইলেন অভিযুক্ত রুবিয়ালেস। একইসঙ্গে পদত্যাগ করা তো দূরে থাক, তিনি পাল্টা লড়াই চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন। সেখানে বিতর্কিত চুমুকে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। প্রথমে বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিলেও পরে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হারমোসো। বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা ফরোয়ার্ড নিজ দেশের ফুটবল প্রধানের কড়া শাস্তি দাবি করেছেন। একই দাবিতে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে পুরো স্পেন দলই।

আরও পড়ুন >> স্প্যানিশ ফুটবলে ঝড় চলছেই

এক বিবৃতিতে ফুটবলাররা জানিয়েছে, সভাপতি রুবিয়ালেস পদত্যাগ না করলে পুরো বিশ্বকাপজয়ী দলই অবসর গ্রহণ করবে। বিশ্বকাপের ২৩ সদস্যের নারী ফুটবল দলসহ এই বিবৃতিতে সম্মতি জানিয়েছে স্পেনের ৮১ জন নারী ফুটবলার। এছাড়া পুরুষ দলের কিংবদন্তি ফুটবলাররাও এই ঘটনায় সোচ্চার হয়েছেন। স্পেনের সাবেক গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়া লিখেছেন, ‘আমার কান থেকে রক্ত ঝরছে।’

ফুটবলারদের এমন দাবির বিপরীতে এক বিবৃতিতে আরএফইএফ বলছে, এই ঘটনার বিষয়ে ফেডারেশন সর্বপ্রথম জেনেছে ফুটপ্রো (পেশাদার নারী ফুটবলারদের সংগঠন) ইউনিয়নের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে। নিয়ম অনুযায়ী এই বিষয়টি আরএফইএফ-এর সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। যেখানে রুবিয়ালেস বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পরবর্তীতে সেটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে সব গণমাধ্যম।

এছাড়া অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে হারমোসোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তিনি সাড়া দেননি বলে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। আরএফইএফ-এর দাবি, পুরো ফুটবল সমাজ রুবিয়ালেসের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অথচ সেদিন কী ঘটেছিল তা স্পষ্ট ও সহজভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন >> লড়াইয়ের ঘোষণা দিলেন ‌‘চুমু-কাণ্ডে’ অভিযুক্ত কর্মকর্তা

বিবৃতিতে চারটি ছবিও সংযুক্ত করে দেয় আরএফইএফ। সেখানে হারমোসোকে উদ্ধৃত করে রুবিয়ালেস বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এসব ছবিতে দেখা যাচ্ছে আমার সম্মতি ছাড়াই সে আমাকে চুমু দিয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও তুলিনি। কেউ আমার কথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলে সেটি আমার সহ্য হয় না। এমনকি আমি বলিনি এমন কোনো শব্দও যেন আমার ওপর আরোপ না করা হয়।’

পরবর্তীতে সেসব ছবির প্রতিটির নিচে ব্যাখ্যাও জুড়ে দেয় আরএফইএফ। যেখানে রুবিয়ালেসকে প্রথমে হারমোসো জড়িয়ে ধরেন এবং এরপর তাকে ওপরের দিকেও তুলে ধরেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

অন্যদিকে, চুমু-কাণ্ডের ঘটনায় রুবিয়ালেসকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্পেন সরকার। দেশটির ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিলের প্রধান ভিক্টর ফ্রাঙ্কোস বলেছেন, ‘সরকার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যাতে রুবিয়ালেস ক্রীড়া আদালতে তার কৃতকর্মের ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হন। আদালত যদি একমত হয় তাহলে এটা নিশ্চিত করছি যে রুবিয়ালেসকে আমরা নিষিদ্ধ করব।’

এএইচএস