ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে জনপ্রিয় টুর্নামেন্টের একটি ফুটবল বিশ্বকাপ। যেখানে ক্ষুদ্র কোনো ঘটনাও আলোচনার বাইরে থাকে না। তবে সম্প্রতি মেয়েদের বিশ্বকাপ ফুটবলের পর্দা নামলেও, আলোচনার কেন্দ্রে বিতর্কিত চুমু-কাণ্ড। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান লুইস রুবিয়ালেস পদত্যাগ করছেন বলেও খবর বেরোয়। তবে সেই পথে না হাঁটার ঘোষণা দিয়েছেন রুবিয়ালেস। একইসঙ্গে এই ঘটনায় স্বপক্ষে লড়াই চালিয়ে যাওয়ারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

এর আগে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্পেন। যার বদৌলতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি লাইমলাইটে থাকার কথা স্পেনের মেয়েদের। তবে আলোচনায় আছেন দেশটির ফুটবল ফেডারেশন প্রধান রুবিয়ালেস। বিশ্বকাপ ফাইনালের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে তিনি বিশ্বজয়ী স্পেনের তারকা ফুটবলার জেনিফার হারমোসোর ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলেন। এরপর থেকেই যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ক্রমেই তার পদত্যাগের দাবিতে সোচ্ছার হচ্ছেন সাবেক ও বর্তমানের ফুটবল সংশ্লিষ্টরা।

এমন প্রতিবাদের বিপরীতে বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, শুক্রবার (আজ) পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন রুবিয়ালেস। কারণ এদিন এক জরুরি সভা ছিল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ)। সেখানে নিজের দায়িত্ব না ছাড়ার ঘোষণা দেন রুবিয়ালেস। তার দাবি, চুমুর ঘটনাটি পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছিল এবং এ নিয়ে নারীবাদীরা তাকে হত্যার চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন >> এক চুমুতে সব হারাচ্ছেন স্পেন ফুটবল প্রধান!

৪৬ বছর বয়সী রুবিয়ালেস বলছেন, ‘তুমি কি আসলেই সিরিয়াস যে এ ঘটনায় আমি সব ছেড়ে চলে যাব? স্প্যানিশ ফুটবলের ইতিহাসে আমিই সবচেয়ে সেরা ম্যানেজমেন্ট তৈরি করেছি। তোমাদের জানাতে চাই যে, ‘‘আমি পদত্যাগ করছি না (তিন বার)।’’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ওপর অনেক চাপ আসছে। সম্ভবত গত সোমবার আমাকে কেউ সরিয়েও দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের দেশে আইন আছে, একটি সংবেদনশীল চুমুর জন্য আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে? আমি শেষ পর্যন্ত নিজের লড়াই চালিয়ে যাব। আমি আশা করি যথাযথ আইনেরই প্রয়োগ ঘটবে এবং সেখানে আমাকে সরিয়ে দেওয়ার মতো কিছু ঘটবে না।’

বিতর্কিত সেই আচরণে দুজনেরই সম্মতি ছিল বলে দাবি আরএফইএফ প্রধান রুবিয়ালেসের, ‘কোনো অর্জনের পর আমি যেমন নিজের মেয়েকে চুমু দিতাম, এটিও তেমনই ছিল। এর বেশি কিংবা কম কিছু নয়। সবাই এই বিষয়টা বোঝে। এটি ছিল স্বতস্ফূর্ত কিস, পারস্পরিক, উচ্ছ্বাসপূর্ণ এবং সম্মতিপূর্ণ। সে (হারমোসো) সেদিন পেনাল্টি মিস করেছিল। সব ফুটবলারের সঙ্গেই আমার ভালো সম্পর্ক। যখন জেনি (জেনিফার) আমার কাছে আসল, সে জড়িয়ে ধরে আমাকে উপরের দিকে তুলে ফেলে। এরপর পুরস্কারের মঞ্চে যখন সে সামনে আসে তখন তাকে আমি পেনাল্টির বিষয়টা ভুলে যেতে বলি। জবাবে হারমোসো বলেছিল, ‘‘তুমি সত্যিই গ্রেট।’’ এরপর আমি বলি, ‘‘একটি কিস?’’ তখন সে বলে ‘‘হ্যাঁ’’।’

এর আগে চুমু-কাণ্ড আলোচনায় আসার পর আরএফইএফের মাধ্যমে স্প্যানিশ বার্তা সংস্থা ইএফই-কে পাঠানো এক বিবৃতিতে হারমোসো শুরুতে বলেছিলেন, ঘটনাটি ‘স্নেহ ও কৃতজ্ঞতার স্বাভাবিক প্রকাশ’ ছিল। তবে পরে পেশাদার নারী ফুটবলারদের সংগঠন ফুটপ্রো ইউনিয়ন ও নিজের এজেন্সির মাধ্যমে এক যৌথ বিবৃতিতে তিনি রুবিয়ালেসের ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’ চান।

এরপরই গত বৃহস্পতিবার রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে ফিফা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা দেয়। একইসঙ্গে তাদের আপত্তিকর আচরণ ও ফেয়ার প্লে আর্টিকেল ১৩ ধারা রুবিয়ালেস লঙ্ঘন করেছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখার কথাও জানায় ফিফা।

এএইচএস