জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগের দল সোল দা মায়োতে যোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ফুটবলার হিসেবে লাতিন আমেরিকার ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কীর্তি গড়েছেন তিনি। তবে জামালের আর্জেন্টিনায় গমন নিয়ে দেশের ফুটবলাঙ্গনে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। 

জামালের জাতীয় দল সতীর্থ তপু বর্মণ আর্জেন্টিনায় যাওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন, ‘আর্জেন্টিনা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেশ। সেই দেশের লিগে আমাদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন এটা অত্যন্ত ভালো বিষয়।’

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম ভারতের ফ্রাঞ্চাইজি ফুটবল লিগ আইএসএলে ছিলেন। তিনিও দেশের বাইরে খেলাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন, ‘একজন খেলোয়াড় দেশের বাইরে খেললে অন্য দশ জনের পথ খুলে।’

আরও পড়ুন >> জামাল এখন আর্জেন্টাইন ক্লাবের

দীর্ঘদিন ঘরোয়া লিগের দল সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবে খেলেছিলেন জামাল। ক্লাবটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিরউদ্দিন চৌধুরিও এ নিয়ে বলছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি তার স্কিল বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। জাতীয়ভাবে চিন্তা করলে সে আমাদের দেশের গর্ব, আর্জেন্টিনায় খেলবে।’

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে আর্জেন্টিনার শীর্ষ লিগের খেলোয়াড়রা খেলে থাকেন। মেসির এক সময়কার সতীর্থ হার্নান বার্কোস, বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলার ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস দেশের লিগে খেলছেন। সেখানে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক গিয়েছেন আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগের লিগে খেলতে। এই বিষয়ে দেশের অন্যতম তারকা ফুটবলার তপু বর্মণের মন্তব্য, ‘আপাত দৃষ্টিতে বিষয়টি এমন হলেও নিশ্চয়ই তার কাছে সেই লিগে যাওয়ার পেছনে যথেষ্ট কারণ ও যুক্তি রয়েছে।’

আরও পড়ুন >> এশিয়ান গেমসে অনিশ্চিত জামাল

জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার জাহিদ হাসান এমিলি অবশ্য তৃতীয় বিভাগে যাওয়ার পেছনে ভিন্ন কারণ মনে করছেন, ‘সত্যিকার অর্থে দুই-তিন বছর আগের জামালের সঙ্গে বর্তমান জামালের পার্থক্য অনেক। যতটুকু শুনেছি, দেশে ঘরোয়া লিগে ক্লাবগুলোর তার প্রতি চাহিদা কম ছিল। তাই হয়তো আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগের লিগকেই বেছে নিয়েছেন।’

জামাল গত মৌসুমেও শেখ রাসেলের হয়ে খেলেছেন। আসন্ন মৌসুমে শেখ রাসেলের সঙ্গে মৌখিক সম্মতি ও ক্লাবের প্যাডে চুক্তি করেছিলেন তিনি। এরপরও আর্জেন্টিনার ক্লাবে যাওয়ায় একটি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের ফুটবলারররা এক ক্লাব থেকে টাকা নিয়ে অন্য ক্লাবে খেলার ঘটনা অনেক। ইউরোপের পরিবেশে বেড়ে ওঠা এবং জাতীয় দলের অধিনায়ককে এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হওয়ায় বিব্রত এমিলি, ‘একজন জাতীয় দলের অধিনায়ককে নিয়ে এমন শোনাটা আমাদের জন্য অবশ্যই দুঃখজনক। সে আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানুষের অধিনায়ক। অধিনায়কের আচার-আচরণের ওপর আস্থাহীনতা তৈরি হওয়াটা মোটেও কাম্য নয়।’

কেবল এমিলিই নন, দেশের ফুটবলাঙ্গনের আরও অনেকেই এমন ধারণা পোষণ করেন।

জামালের আগে জাতীয় দলে দীর্ঘদিন অধিনায়কত্ব করেছেন মামুনুল ইসলাম। তিনি লিগ চ্যাম্পিয়ন দলেরই খেলোয়াড় ছিলেন সেই সময়। পাশাপাশি নিজের সময়ে দেশের সেরা ফুটবলারও ছিলেন। অধিনায়কত্ব নির্বাচন প্রসঙ্গে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুলের পর্যবেক্ষণ, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে দেখে আসছি লিগ চ্যাম্পিয়ন ও টপ তিন চার-জন ফুটবলারের মধ্যেই জাতীয় দলে অধিনায়কত্ব করতে। পারফরম্যান্সের পাশাপাশি জাতীয় দল ম্যানেজম্যান্ট কমিটির ইচ্ছা-পরিকল্পনাও একটা বিষয়। কোচ এবং ম্যানেজম্যান্ট কমিটি অধিনায়কের বিষয়টি ভালো বলতে পারেন।’ 

জামাল প্রায় অর্ধযুগ ধরে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক। জাতীয় দলের অধিনায়ক থাকাবস্থায় তার অধিকাংশ সময় কেটেছে লিগ টেবিলের মাঝামাঝি অবস্থানের দলগুলোতে। জামাল ও মামুনুল দুজনই প্রায় একই পজিশনের খেলোয়াড়। মামুনুল তার ক্যারিয়ারের পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি স্বরূপ ক্রীড়া লেখক সমিতি, বিএসজেএসহ নানা সংগঠনের বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ ও ফুটবলারের পুরস্কার পেয়েছেন। জামালের ক্যারিয়ার প্রায় শেষের দিকে হলেও এমন কোনো স্বীকৃতি নেই। জামালের অধিনায়কত্বের পেছনে ইংরেজী জানা এবং সামাজিক মাধ্যমের উপস্থিতি অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করেন ফুটবলসংশ্লিষ্ট অনেকেই।

আরও পড়ুন >> শেখ রাসেলকে কথা দিয়ে আর্জেন্টিনার ক্লাবে জামাল!

জাতীয় দলের শেষ কয়েকটি ম্যাচে জামাল ভূঁইয়া পুরো ৯০ মিনিট খেলতে পারেননি। খেলার মাঝপথে আর্মব্যান্ড বদল করতে হয়েছে বারবার। বিষয়টি একটু দৃষ্টিকটু মনে করেন দীর্ঘদিন জাতীয় দলে খেলা এমিলি, ‘জাতীয় দলের অধিনায়ককে ৯০ মিনিট মাঠে থাকা দরকার। পাশাপাশি অধিনায়ককে সেরা পারফরমারও হতে হবে। অধিনায়ক যদি প্রত্যাশিত মানের পারফরম্যান্স করতে না পারেন তাহলে অন্যরা উজ্জীবিত হবেন কিভাবে এবং অধিনায়কই নির্দেশনা দেবেন কিভাবে।’

জাতীয় দলে নেতৃত্ব দেয়ার মতো বিকল্পও দেখেন সাবেক এই জাতীয় তারকা ফুটবলার, ‘অনেকেই আছে দলে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো। বিশেষ করে তপু তো অসাধারণ, সে দারুণ পারফরমার এবং নেতৃত্ব গুণাবলিও ভালো। পাশাপাশি জিকোও দারুণ বিকল্প।’

এজেড/এএইচএস