ফুটবল বিশ্বে চলছে সৌদিমুখী জোয়ার। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির সরকারের বড় অঙ্কের অর্থের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে এ পর্যন্ত অনেক নামী খেলোয়াড়ই ছেড়ে দিচ্ছেন ইউরোপিয়ান ফুটবল। সর্বশেষ এ তালিকায় নাম লিখিয়েছেন ব্রাজিল সুপারস্টার নেইমার জুনিয়র। এর আগে চলতি মৌসুমের শুরুতেই সৌদি প্রো লিগের ক্লাবে গিয়েছেন করিম বেনজেমা, এনগোলো কান্তে, ফাবিনহা, রবার্তো ফিরমিনো, রুবেন নেভেসের মত তারকারা। 

আরও পড়ুন: প্রেমিকার সঙ্গে থাকাসহ সৌদি ক্লাবকে যত শর্ত নেইমারের

শুরুতে ধারণা করা হচ্ছিল, সৌদি আরবের কঠোর শরীয়াহ আইন অনেক ফুটবলারকেই এমন চুক্তির ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করবে। কিন্তু যতই দিন গড়িয়েছে, সৌদি আরবের প্রতি ফুটবলারদের আগ্রহ বেড়েছে। আর সৌদি সরকারও নিজেদের শরীয়াহ আইন বদল করছে ফুটবলারদের কল্যাণে। 

সর্বশেষ নেইমার জুনিয়রের জন্য ‘লিভ টুগেদার’ এর নীতিও শিথিল করেছে মুসলিম অধ্যুষিত দেশটি। সৌদি আরবের ইসলামি শরীয়াহ আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিই অবিবাহিত অবস্থায় অন্য নারীর সঙ্গে দিনযাপন করতে পারবেন না। কিন্তু, সৌদি ক্লাব আল-হিলালের সঙ্গে চুক্তিতে সেই সুবিধাও পাচ্ছেন নেইমার। বান্ধবী এবং প্রেমিকা ব্রুনো বিয়ানকার্দির সঙ্গে সৌদি আরবে থাকতে তাই আর বাধা রইলো না তার।

আরও পড়ুন: টাকার জন্য সৌদিতে গেছেন রোনালদো

এর আগে এমন সুবিধা দেওয়া হয়েছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকেও। বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগেজকে বিয়ে না করেই সৌদিতে নিজের সময় পার করছেন পর্তুগিজ মহাতারকা। এমনকি, সৌদি নারীদের জন্য নির্ধারিত ‘আবায়া’ পোশাকের বাধ্যতা থেকেও মুক্ত থাকছেন ফুটবলারদের বান্ধবী কিংবা স্ত্রীরা। 

দেশটির আইন অনুযায়ী, কোনো নারীই ‘আবায়া’ নামের বিশেষ বোরখা ছাড়া বাইরে বেরোতে পারবেন না। স্বল্প-বসনের পোশাক একেবারেই নিষিদ্ধ সেখানে। তবে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ফুটবলারদের স্ত্রী কিংবা বান্ধবীদের জন্য সেই নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। স্টেডিয়ামের ভিআইপি গ্যালারিতে বেশ অনেকবারই স্বল্পবসনে দেখা গিয়েছে তাদের। 

আরও পড়ুন: ‘যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সৌদি লিগই ভালো’

সৌদি আরবে ক্রুশ বা খ্রিস্টধর্মের প্রতিকী প্রদর্শনীর ব্যাপারে কড়াকড়ি রয়েছে। মুসলিম বিশ্বের প্রধান কেন্দ্র হওয়ার সুবাদে এমন অলিখিত রীতি চালু আছে সেখানে। কিন্তু রোনালদো সম্প্রতি সৌদিতে গিয়ে গোল উদযাপনে ক্রুশ চিহ্ন বুকে এঁকেছেন। তবে তা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এক্ষেত্রেও শিথিল অবস্থানে যাচ্ছে দেশটির সরকার। 

আরব সাগর এবং লোহিত সাগর বেষ্টিত এই দেশটিতে এখনও সমুদ্র সৈকতে খোলামেলা চলাচল অনুমোদন করা হয়নি। তবে কোনো বিদেশি নাগরিক চাইলে আলাদাভাবে বিচ ভাড়া নিয়ে নিজেদের মত করে সময় পার করতে পারবেন। সৌদি সরকারের এমন নীতি যে ফুটবলের জোয়ারের কল্যাণে শুরু হয়েছে, সেটাও কারো অজানা নয়। 

অবশ্য অ্যালকোহল বা পার্টি নিয়ে এখনও নিজেদের শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে সৌদি আরব। ইসলামি ভাবধারার এই দেশে অ্যালকোহল পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এমনকি কোনো বিদেশীও সেখানে মদ উৎপাদন, বিতরণ ও পান করার সাথে যুক্ত হতে পারবেন না। পার্টি প্রিয় নেইমার সেখানে এ নিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়তেই পারেন। 

জেএ/এফআই