ফাইল ছবি

সারা বিশ্বে ফুটবলার তৈরির কাজ করে স্থানীয় ক্লাবগুলো। বাংলাদেশে অবশ্য ভিন্ন প্রেক্ষাপট। শিরোপার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও ক্লাবগুলোর খেলোয়াড় তৈরিতে মনোযোগ নেই। তাই বাফুফে একাডেমি থেকে খেলোয়াড় চেয়েছে তিন ক্লাব। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে বাফুফের ডেভলপমেন্ট কমিটি একাডেমির ফুটবলারদের উন্মুক্ত নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

আজ (শুক্রবার) ছুটির দিনেও বাফুফে ভবনে ছিল ব্যস্ততা। সভা শেষে কমিটির চেয়ারম্যান ও বাফুফের অন্যতম সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক বলেন, ‘আমাদের কাছে শেখ রাসেল, মোহামেডান ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন খেলোয়াড় চেয়ে চিঠি দিয়েছে এবং নিজেদের মতো একটি বিনিময়মূল্যও উল্লেখ করেছে তারা। আমরা খেলোয়াড়দের উন্মুক্ত বিডিংয়ে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা সর্বোচ্চ মূল্য দেবে তারাই খেলোয়াড় পাবে।’ 

গত বছর এলিট একাডেমির ফুটবলারকে দশ লাখ টাকা দিয়ে নিয়েছিল মোহামেডান। এবার মোহামেডানের পাশাপাশি চিঠি দিয়েছে শেখ রাসেলও। এই দুই ক্লাবের দেখাদেখি ব্রাদার্স ইউনিয়ন চেয়েছিল এলিটের ফুটবলারদের দিয়েই দল গড়তে। তারা ১০-১২ জন ফুটবলারের জন্য ফুটবল ফেডারেশনকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কও প্রস্তাব দিয়েছিল। এই প্রস্তাবে সম্মত হলে সমালোচনার মধ্যে পড়তে পারত ফুটবল ফেডারেশন। কারণ ব্রাদার্সের কর্মকর্তাদের মধ্যে তিন জন বাফুফের নির্বাহী কমিটিতে রয়েছেন।

বাফুফে একাডেমির খেলোয়াড় পেতে তিন ক্লাব চিঠি দিলেও আসন্ন বিডিং অন্য সকল ক্লাবের জন্যও উন্মুক্ত থাকছে, ‘তিন ক্লাব আনুষ্ঠানিক চিঠি দিলেও বাকি ক্লাবগুলো আগ্রহী থাকলে বিডিংয়ের দিন অংশগ্রহণ করতে পারে। নিলামটি খুব শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হবে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে’, বলেন ডেভলপেমন্ট কমিটির চেয়ারম্যান।

নিলাম প্রক্রিয়ায় খেলোয়াড়দের প্রাথমিক মূল্য নির্ধারিত থাকে। নিলামের ঘোষণা দিলেও এই বিষয়টি এখনও ফেডারেশন চূড়ান্ত করেনি বলে উল্লেখ করেন মানিক, ‘বেস প্রাইস ও আরো কিছু বিষয় নিয়ে আমরা কয়েক দিন কাজ করব। এরপর একটি নির্দিষ্ট দিনে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।’

এলিট একাডেমির সঙ্গে খেলোয়াড়দের ২০২৫ সাল পর্যন্ত চুক্তি। একাডেমির ফুটবলারদের পেছনে বাফুফের বিনিয়োগ রয়েছে। নিলামে ক্লাব থেকে প্রাপ্ত অর্থ ফেডারেশন এবং খেলোয়াড় কে কত শতাংশ পাবে, আবার বাফুফে একাডেমির কয়েকজন খেলোয়াড় বিকেএসপির শিক্ষার্থীও; এ সকল ইস্যুতে সবার স্বার্থে একটি গাইডলাইন তৈরি করবে ডেভলপমেন্ট কমিটি। 

কাজী সালাউদ্দিনের আমলে বিগত সময়ে একাডেমি চালু করেও বন্ধ হয়েছিল। সহ-সভাপতি এবং ডেভলপেমন্ট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে মানিক একাডেমি দেখাশোনা করছেন। তিনিও বারবারই আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথা বলেন। ধারে ক্লাবগুলোর কাছে খেলোয়াড় বিক্রি করেও সেই অর্থ সংকট কাটে না বলে জানালেন বাফুফের এই কর্মকর্তা,‌ ‌‘আমাদের এখনও আর্থিক সংকট রয়েছে। এর মাধ্যমে হয়তো কিছুটা সহায়ক হতে পারে।’

এর আগে বাংলাদেশের ফুটবলে কখনও নিলাম হয়নি। প্রথমবারের মতো তাদের নিলামে তোলার মাধ্যমে নতুন দিগন্তের সূচনা হচ্ছে। নতুন পথে হাটতে গিয়ে আলোচনা না সমালোচনা কোনটা বেশি হয় সেটাই দেখার বিষয়। 

২০২১ সালে শুরু হওয়া বাফুফের এলিট একাডেমিতে এখন পর্যন্ত ৬৩ জন ফুটবলার রয়েছেন। নিলামে বিশ জনের মতো ফুটবলার উঠলেও এলিট একাডেমির বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ খেলতে সমস্যা দেখছেন না কমিটির চেয়ারম্যান, ‘চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ খেলার মতো ফুটবলার আমাদের রয়েছে। নতুন খেলোয়াড় সন্ধানের জন্য আমরা ইতোমধ্যে একটি রুটিন করেছি। খুব শিগগিরই এলিট একাডেমিতে নতুন ব্যাচ প্রবেশ করানো হবে।’

বাফুফের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ডেভলপমেন্ট কমিটির বিন্যাস চেয়ারম্যান, ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং সাতজন সদস্য। আজকের সভায় কমিটিতে উপস্থিত ছিলেন গঠনতন্ত্রের নির্দেশনার চেয়ে দ্বিগুণ। ডেভলপমেন্ট কমিটিতে কোচ, সংগঠক, সাবেক ফুটবলারদের পাশাপাশি সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাও রয়েছেন। ফুটবল ফেডারেশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডিং কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান সাবেক এক শীর্ষ আমলার সন্তান। ফুটবল অনুরাগী এই কর্মকর্তারা অবশ্য ফুটবল উন্নয়নে নিজস্ব অবস্থান থেকে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেন।

এজেড/এএইচএস