মারাকানা স্টেডিয়ামে সেদিন দর্শক ছিল মোটে ৫ হাজার। তাতে আর্জেন্টাইন সমর্থক খুব বেশি ছিল না। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের মাঠে কোপা আমেরিকার ফাইনাল খেলতে নেমেছিল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষ সেই ব্রাজিলই। এই মাঠ মেসির কাছে খুব ভালোভাবেই চেনা। এখানেই ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির কাছে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল খুদে ফুটবল জাদুকরের। 

এরপরের গল্পটা সবারই জানা। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার গোলে ২৮ বছরের শিরোপাখরা ঘুচিয়েছিল আর্জেন্টিনা। এর আগেও কোপা আমেরিকার অনেক শিরোপা জিতেছে আকাশী-সাদা বাহিনী। তবে, ২০২১ সালের এই শিরোপার মাহাত্ম্য হয়ত অন্য যে কোনো আসরের চেয়ে বেশি। 

কারণটা একজনই। লিওনেল মেসি। ২০০৫ সালে অভিষেকের পর থেকে ফুটবলের সবকিছুই জেতা হয়েছিল এই আর্জেন্টাইনের। ক্লাব ফুটবলে বার্সেলোনার হয়ে জিতেছিলেন সম্ভাব্য সব শিরোপা। ব্যক্তিগত অর্জনেও ছিলেন অনন্য। ৬ বার বর্ষসেরা ফুটবলারও হয়েছেন ততদিনে। কিন্তু, জার্সি যখন আর্জেন্টিনার, মেসি তখন হতাশার এক উদাহরণ। 

ডি মারিয়ার যে গোলে শিরোপা নিশ্চিত করেছিল আর্জেন্টিনা! 

ক্যারিয়ারের শুরুতে ২০০৭ সালে ব্রাজিলের কাছেই কোপা আমেরিকায় হার। এরপর ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কোপার ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ। সবমিলিয়ে আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসি মানেই হতাশা। সব হিসেব অবশ্য বদলে যায় সেদিন। ব্রাজিলের ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে ফাঁকা গ্যালারির সামনে আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম শিরোপা পেয়েছিলেন তিনি। অলিম্পিক বাদ দিলে, ম্যারাডোনা পরবর্তী যুগে এটিই ছিল আর্জেন্টিনার প্রথম শিরোপা। 

ফাইনালের মঞ্চে গোল অ্যাসিস্ট না পেলেও পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ ছন্দে ছিলেন মেসি। পুরো টুর্নামেন্টে ৪ গোল আর ৫ অ্যাসিস্ট করে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি। 

আর্জেন্টিনার বদলে যাবার শুরুটাও হয়েছিলো ওই কোপা আমেরিকা থেকেই। দীর্ঘদিনের গোলরক্ষক সমস্যার ইতি ঘটিয়ে সেবারই এসেছিলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। সেমিফাইনালে টাইব্রেকার আর ফাইনালের মহারণে যিনি নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন। 

ডিফেন্সে তরুণ রোমেরোর সাথে ছিলেন অভিজ্ঞ ওটামেন্ডি। মার্কাস আকুনা, মন্টিয়েল, ডি পলদের প্রত্যেকেই খেলেছিলেন পরিণত ফুটবল। সেদিনের পর থেকেই এক অন্য আর্জেন্টিনাকেই দেখেছিলো বিশ্ব। 

কোপা আমেরিকার পর ইউরোপ সেরা ইতালির সাথে ফিনালিসসিমার দাপুটে জয় আকাশী-নীল শিবিরে এনেছিল বাড়তি অণুপ্রেরণা। টানা ১৬ বছর ট্রফিশুন্য থাকা মেসি দুই বছরে বুঝে পেয়েছিলেন দুই শিরোপা। আর চক্রপূরণের শেষটা করেছেন কাতারে, ২০২২ সালে। যেদিন লুসাইল স্টেডিয়ামে জিতেছিলেন বহু আরাধ্য বিশ্বকাপ। 

মেসি নিজেও মনে রেখেছেন ঐতিহাসিক এই দিনটিকে। ইন্সটাগ্রামে ট্রফি উঁচিয়ে ধরার পূর্ব মুহূর্তের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন ‘২ বছর’। এমন দিনকে স্মরণ না করে উপায় কি! আর্জেন্টিনাও শিরোপা জিততে জানে, এমন বিশ্বাসের শুরুটা হয়েছিল সেদিনই। 

আত্মবিশ্বাসী সেই আর্জেন্টিনা পরে জয় করেছে বিশ্বকাপটাও। মেসিও প্রমাণ করেছিলেন আর্জেন্টিনার জার্সিতেও তার সফল হওয়া সম্ভব। 

জেএ