ম্যাড়ম্যাড়ে প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধেও খেলা চলছিল ঢিমেতালে। অবশেষে সিটি ভক্তদের আনন্দে ভাসালেন রদ্রি। দ্বিতীয়ার্ধের ৬৮ তম মিনিটে দারুণ শটে জাল খুঁজে পেলেন সিটির স্প্যানিশ এই মিডফিল্ডার। পরমুহূর্তেই  যদিও সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল ইন্টার মিলান। তবে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় ইতালিয়ানরা।

ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে শনিবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল ম্যাচটি ১-০ গোলে জিতেছে ম্যানচেস্টার সিটি। প্রথমবারের মতো ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে ইউনাইটেডের পর দ্বিতীয় ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবলের রেকর্ড সিটির।

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ উড়ছে পেপ গার্দিওলার ইংলিশ চ্যাম্পিয়ন দলটি। প্রতিযোগিতাপূর্ণ প্রিমিয়ার লিগে তারা সব ক্লাবকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে। বলতে গেলে এই টাইটেলকে তারা পরিণত করে ফেলেছে ডালভাতে! ছয় মৌসুমের মধ্যে পাঁচবারই ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছে ম্যানচেস্টারের ক্লাবটি। এবারও লিগ শিরোপার পর তারা নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনাইটেডকে হারিয়ে এফএ কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

অন্যদিকে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সবশেষ ১১ ম্যাচের মাত্র একটিতে হেরেছে ইন্টার মিলান, জিতেছে বাকি দশটিতে। ইতোমধ্যে তারাও জিতেছে কোপা ইতালিয়া ও সুপারকোপা ইতালিয়ানা। ফলে সিটির মতো তাদের সামনেও ট্রেবল জয়ের সুযোগ ছিল।

হাই-ভোল্টেজ ফাইনালে দুই দলই শুরুটা করে দেখেশুনে। সময় যত গড়িয়েছে আক্রমণের ধার বাড়িয়েছে ম্যান সিটি। তবে মিলান গোলরক্ষককে খুব বেশি পরীক্ষার ফেলতে পারেনি হলান্ড-গুনদোয়ানরা।

ম্যাচের মাত্র ৫ম মিনিটেই দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন বার্নার্দো সিলভা। ডি বক্সে ঢুকে শট নিয়েছিলেন, কিন্তু টার্গেট মিস করে গেছেন। এরপর পাল্টা আক্রমণে উলটো বিপদেই পড়তে যাচ্ছিল সিটি। ২৫ মিনিটে বারেল্লার দূরপাল্লার শট অল্পের জন্য জাল ছোঁয়নি। তৈরি ছিলেন না সিটির গোলরক্ষক এডারসনও।

এরপর টানা কয়েকটি আক্রমণ চালিয়েও গোল পেতে ব্যর্থ হয় সিটিজেনরা। ইন্টার মিলানের জমাট রক্ষণ কিছুতেই ভাঙতে পারেনি হলান্ড-গ্রিলিশরা। প্রথমার্ধে সিটির জন্য বড় ধাক্কা কেভিন ডি ব্রুইনার চোট।

ম্যাচের ৩০ মিনিটে মাঠে পড়ে যান কেভিন ডি ব্রুইনা। সে সময় শুশ্রূষা নিয়ে ফের মাঠে ফিরলেও অস্বস্তি ছিল চোখে-মুখে। ৩৫ মিনিটে বড় ধাক্কা খায় ম্যানসিটি। অস্বস্তিতে ভোগা ডি ব্রুইনাকে মাঠ থেকে তুলে নেন গার্দিওলা। নামেন ফিল ফোডেন। অবাক করা তথ্য হচ্ছে, ২০২০-২১ মৌসুমের ফাইনালে চেলসির বিপক্ষেও ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন এই বেলজিয়ান প্লেমেকার।

দ্বিতীয়ার্ধের ৫৮ তম মিনিটে সিটির গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন লাওতারো মার্টিনেজ। পাল্টা আক্রমণে ওঠে আসে সিটি। সুফল পেতেও সময় লাগলো না। ৬৮ মিনিটে একটা সংঘবদ্ধ আক্রমণে বল পেয়ে দারুণ শটে গোল করলেন সিটির স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি। তার জোরালো শটের কোনো জবাবই ছিল না ইন্টারের গোলরক্ষক ওনানার কাছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন বল জালে জড়িয়ে যেতে।

পরের মিনিটেই গোল প্রায় শোধ দিয়েই ফেলেছিল ইন্টার। প্রতিআক্রমণে উঠে ঢুকে পড়েছিল সিটির রক্ষণভাগে। ডামফ্রির ক্রসে যে হেড নিয়েছিলেন ডিমারকো তা এডারসনকে পরাস্ত করলেও ফেরে ওপরের পোস্টে লেগে। ফিরতি বলে ফের ডিমারকো হেড নিয়ে বল দিয়েছিলেন লুকাকুকে। অবিশ্বাস্যভাবে সুযোগ নষ্ট করেন এই বেলজিয়ান। ৭৩ মিনিটে ফের সুযোগ নষ্ট করেন লুকাকু।

৭৮ মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন ফোডেন। কিন্তু ডিবক্সে ঢুকে বাঁ পায়ে যে শট নেন তা সহজেই নিজের আয়ত্তে নেন ওনানা।

৮৮ মিনিটে দারুণ সেভ করে দলকে বাঁচান সিটির গোলরক্ষক এডারসন। ম্যাচে সমতায় ফিরতে একের পর এক চেষ্টা করে গেছে ইন্টার। কিন্তু শেষের সময়টুকু দারুণভাবে রক্ষণ সামলেছে গার্দিওলার শিষ্যরা। শেষ বাঁশি বাজতেই ইতিহাস গড়ার আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন সিটির খেলোয়াড়রা।

এফআই/এমজেইউ