মাঠে শিষ্যরা লড়েন ঠিকই, কিন্তু এর পেছনে মূল কারিগর তো ডাগআউটে থাকা ওস্তাদরা। সর্বশেষ কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো লিওনেল স্কালোনি নামের ভারে অতটা পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরই জাতীয় দলের হয়ে পরপর কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপ জয় করেন। এটা ঠিক যে লিওনেল মেসিদের মতো তারকা ফুটবলারে ভর্তি আর্জেন্টিনা, কিন্তু ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে কৌশল সাজানো কিংবা পরিবর্তন করা কম গুরুত্বপূর্ণ। যা দিয়ে তিনি নজরও কেড়েছিলেন।

আলোচনাটা আর্জেন্টিনা দল নিয়ে নয়। মূলত আজ (১০ জুন) রাত ১টায় তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হবে ইউরোপসেরার আসর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল। যেখানে ট্রেবল জয়ের দৌড়ে থাকা ম্যানচেস্টার সিটি ও ইন্টার মিলান মুখোমুখি হবে। শিষ্যদের ছাপিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে আলোচনার জায়গা দখল করে নিতে পারেন দুই দলের কোচ। ম্যানসিটি কোচ পেপ গার্দিওলা খ্যাতিনামা হলেও, ইন্টার কোচ সিমোনে ইনজাগির নামটা সেভাবে আলোচনায় আসে না। কিন্তু ইতালির ফুটবলে তাকে ডাকা হয় ‘কাপের রাজা’ হিসেবে।

স্প্যানিশ কোচ গার্দিওলা ইতোমধ্যে সম্ভাব্য সব শিরোপাই জিতেছেনতিনটি লা লিগা, তিনটি বুন্দেসলিগা, পাঁচটি প্রিমিয়ার লিগ, দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ জিতেছেন ৩৪টি শিরোপা। চলতি মৌসুমেও প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা ও এফএ কাপ দুটোই জিতেছেন গার্দিওলা। বাকি শুধু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। এই শিরোপা জিতলে গার্দিওলা ছুঁয়ে ফেলবেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনকে। যিনি ১৯৯৯ সালে সিটির নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনাইটেডকে ট্রেবল জিতিয়েছিলেন। সেই ‍সুযোগ এবার এসেছে গার্দিওলার সামনে।

ইতোমধ্যে এই মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগে দুটি সেরা কোচের পুরস্কার জেতা গার্দিওলা সর্বকালের সেরা কিনা, সেটি হয়তো আলোচনার বিষয়। সেই সম্পর্কে স্পেন ও বার্সেলোনার কিংবদন্তি ডিফেন্ডার কার্লোস পুয়োল ইস্তাম্বুলে লরিয়াস স্পিরিট অব স্পোর্টসকে বলেছেন, ‘আমার মতে, গার্দিওলা যদি সর্বকালের সেরা না–ও হয়, নিশ্চিতভাবেই সেরা দুই-তিন কোচের একজন তিনি।’

আরও পড়ুন >> ম্যানসিটি-ইন্টারের ফাইনালে ট্রেবল জিতবে কারা?

অন্যদিকে, ২০২১ সালে ইন্টার মিলানে যোগ দেওয়ার প্রথম মৌসুমেই কোপা ইতালিয়া ও ইতালিয়ান সুপার কোপা জেতেন ইন্টার মিলান কোচ ইনজাগি। এই মৌসুমেও দুটি শিরোপাই তিনি ঘরে তুলেছেন। যার ধারবাহিকতায় ১৩ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তুললেন মিলানকে। এই ধাপটা পাড়ি দিতে পারলেই ইউরোপসেরা দল মিলান এবং ইউরোপসেরা কোচ ইনজাগি।

গত সাত বছরের ক্যারিয়ারে ইনজাগি অনেক কিছুই জিতেছেন। তিনি মিলানকে ফাইনালে নিয়ে এসেছেন অনেকটা ‘মৃত্যুকূপ থেকে। সি’ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলোয় উঠেছিল ইতালিয়ান ক্লাবটি। এই গ্রুপ থেকে ইন্টারের তিন প্রতিপক্ষ ছিল বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ ও ভিক্টোরিয়া প্লজেন। প্রথম ম্যাচেই সান সিরোয় ৭ সেপ্টেম্বর বায়ার্নের কাছে ২-০ গোলের হারে যাত্রা শুরু করেছিল ইন্টার। প্রথম ম্যাচে হারা সেই ইন্টার এখন চূড়ান্ত সাফল্য পাওয়ার অপেক্ষায়। আর মাত্র এক ধাপ বাকি তাদের। ইন্টার মিলান এখন পর্যন্ত তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতলেও, সেগুলো ছিল অন্য কোচের অধীনে। তাই তো ইনজাগি নিজের ক্যারিয়ারটা এই ম্যাচ দিয়ে পূর্ণতা দিতে চাইবেন।

ফাইনালের লড়াইয়ে নামার আগে ইন্টার কোচ ইনজাগি বলছেন, ‘ইন্টার মিলান শক্ত প্রতিপক্ষ। আর্লিং হলান্ডও দুর্দান্ত। তার ওপর আমাদের নজর আছে। হলান্ডের জন্য পরিকল্পনা করে রেখেছি। শুধু হলান্ড কেন, পুরো ম্যানচেস্টার সিটিকেই আমাদের থামাতে হবে। কী ধরনের ম্যাচ হবে, তা আমরা জানি, আমাদের করণীয়ও অজানা নয়। সিটি এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা দল। তারা কম সময়ই হেরেছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এই যাত্রাটা নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। তাই কোনো ধরনের ভুল করতে চাই না।’

এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য সব শিরোপা জিতলেও, ম্যানসিটি জিততে পারেনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি। তাই তো এই ম্যাচ জিততে মরিয়া গার্দিওলার দল। তার আগে এই স্প্যানিশ কোচ বলছেন, ‘এই প্রতিযোগিতায় ইতিহাসের দিক থেকে ইন্টার মিলান আমাদের চেয়ে এগিয়ে। আবার, এই ম্যাচে আমরাই ফেভারিট। তবে যেটা গুরুত্বপূর্ণ হলো, ইস্তাম্বুল সময় রাত ১০টায় আমাদের যতটা সম্ভব সেরা পারফরম্যান্স দেখানো এবং পার্থক্য গড়া।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কেবল জানি, এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। লোকের মতামত তো আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। আমার মনোযোগ থাকে স্রেফ আমাদের করণীয় কতুটুকু। ইন্টারের খেলা আমি দেখেছি এবং আমরা আমাদের মতো খেলার চেষ্টা করব। একটি ম্যাচেই সবকিছুর অবসান হবে এবং ৯৫ মিনিট ধরে যে দল ভালো খেলবে, তারাই জিতবে।’

এএইচএস