মৌসুম শেষে পিএসজি ছাড়বেন লিওনেল মেসি, সেটা অনুমিতই ছিল। তবে নাটকের সবটা বাকি ছিল তার দল বদলকে কেন্দ্র করে। যেটার পরতে পরতে এতটাই রোমাঞ্চ ছিল যে, আপনি চাইলে এই ঘটনা অবলম্বনে উপন্যাসের প্লট কিংবা নাটকের স্কিপ্ট লিখতে পারবেন!

শুরুতেই আলোচনায় ছিল, বার্সেলোনায় ফিরছেন মেসি। এরপর 'টাকার বস্তা' নিয়ে সেখানে আগমন আল হিলালের! এরফলে অর্থনৈতিকভাবে বাজে সময় পার করা বার্সার জন্য লড়াইয়ে টিকে থাকাটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে ক্লাবের প্রতি মেসির প্রেমই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় সম্বল। সেটা আঁকড়ে ধরে লিওকে পাওয়ার লড়াইয়ে নামে স্প্যানিশ জায়ান্টরা।

গণমাধ্যমের খবর বলছিল, টাকার কাছে শেষপর্যন্ত হেরে যাবে প্রেম! সৌদির ক্লাবের লোভনীয় প্রস্তাব আর একই সময়ে দেশটিতে মেসির ভ্রমণ, ব্যাপারটা কাকতালীয় হিসেবে দেখেননি কেউই। বরং দুইয়ে-দুইয়ে চার মিলিয়ে অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন মধ্য প্রাচ্যের দেশটিই হতে যাচ্ছে মেসির নতুন ঠিকানা।

এমন গুঞ্জন আরও শক্ত ভিত পায়, যখন বিশ্বাসযোগ্য একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে ওঠে আসে মেসির সৌদিতে পাড়ি জমানোর বিষয়টি। কেউ-কেউতো জোর দিয়েই বলে দিয়েছিল, সৌদিই মেসির নতুন ঠিকানা। তবে এমন সময় মেসির বাবা ও তার ঘনিষ্ঠজনদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আল হিলাল নয় বার্সাকেই বেশি প্রধান্য দিচ্ছেন মেসি। তাতেই যেন সৌদির ফুটবল ভক্তদের আশার গুড়ে বালি! অন্যদিকে মেসি বার্সায় ফেরার খবর শুনেই মেসি-ভক্তদের যেন তর সইছিল না। ক্যাম্প ন্যুতে বার্সার খেলা চলাকালে মেসির নামে সমর্থকদের উচ্ছ্বাসই সেটার প্রমাণ দেয়। 

আরও পড়ুন>>> যে কারণে বার্সেলোনায় গেলেন না মেসি

একদিকে কাড়ি-কাড়ি অর্থ অন্যদিকে ফেলে আসা পুরোনো প্রেম, দুইটা থেকে যেকোনো একটা যখন বেছে নেওয়ার কথা মেসির ঠিক তখনই চিত্রন্যাটে আরও একবার বাঁক! এবার পুরো ঘটনাই যেন ৩৬০ ডিগ্রী মোড় নিল। আল হিলাল আর বার্সার এই রেসে হঠাৎই আগমন ইন্টার মায়ামির। ব্যাপারটা থ্রিলার কোনো সিনেমার শেষ অংশের মতোই। আমেরিকান ক্লাবটি খুব একটা ফুটেজ পায়নি! অথচ কে জানতো যে, 'মেসির দল বদল নাটকের' সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রটাই এই ইন্টার মায়ামি!

গত ৭ জুন ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি প্রথমে জানায়, মেসি নাম লেখাচ্ছেন মায়ামিতে। এরপর ঘন্টা কয়েকের ব্যবধানে সেই তথ্য নিশ্চিত করেছেন মেসি নিজেও, 'আমি বার্সেলোনায় ফিরে যাচ্ছি না, আমি ইন্টার মায়ামিতে যাচ্ছি।'

এই যে গত দুই বছরে অসংখ্যবার মেসি বলেছেন, তার বার্সাপ্রীতির কথা, সেটা তাহলে ঠুনকো নাকি শুধু বলার জন্যই বলা? স্প্যানিশ ফুটবল প্রেমীদের মনে এমন প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক। সেটা হয়তোবা এই আর্জেন্টাই গ্রেট নিজেও বুঝতে পেরেছেন। তাইতো মায়ামিতে যাওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি বলেছেন, 'আমি আসলেই বার্সেলোনাতে ফিরতে চেয়েছিলাম এবং এটা নিয়ে খুবই শিহরিত ছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে বিদায়ের সময় যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছিল, সেই অবস্থার মধ্যে আবার পড়তে চাইনি; সামনে কী ঘটবে, তা দেখার অপেক্ষায় থাকতে এবং অন্যের হাতে নিজের ভবিষ্যৎ তুলে দিতে চাইনি।'

বছর দুয়েক আগে মেসি যখন বার্সা ছাড়েন তখন এক প্রকার বাধ্য হয়েই তা করতে হয়েছিল এই আর্জেন্টাইনকে। মূলত ক্লাবটির আর্থিক সমস্যার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। যেটা গতকালও মনে করিয়ে দিলেন মেসি, 'শুনেছিলাম (আমাকে আনার জন্য) বার্সেলোনাকে খেলোয়াড় বিক্রি করতে হবে বা খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক কমাতে হবে। সত্যি বলতে, আমি এই বিষয়গুলোর মধ্য দিয়ে যেতে চাইনি, কিংবা এইসব কিছুর দায় নিতে চাইনি।'

আরও পড়ুন>>> মেসিদের ম্যাচে টিকিটের আকাশচুম্বী দাম

মেসির এসব বক্তব্যই বলে দেয় বার্সার প্রতি তার প্রেম কতটা গভীর! তবে এবারও মেসি আর বার্সার প্রেমে দেয়াল হলো ক্লাবটির আর্থিক সমস্যা। অন্যদিকে আল হিলালও বিবেচনায় ছিল মেসির। তবে সেখানকার সামাজিক প্রেক্ষাপট আর ফুটবলের ইতিহাস-ঐতিহ্য খুব একটা টানেনি এলএমটেনকে। সবদিক বিবেচনা করে পুরোনো প্রেম আর 'টাকার বস্তা' রেখে মিয়ামিতেই নাম লেখালেন মেসি! 

এইচজেএস