মাঠে বর্ণবাদী আক্রমণের ঘটনায় তুমুল হইচই চলছে ফুটবল অঙ্গনে। রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে রোববার গ্যালারি থেকে প্রতিপক্ষ ভ্যালেন্সিয়ার সমর্থকরা বর্ণবাদী মন্তব্য করেন। ওই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে গ্যালারির দিকে ছুটে গিয়ে প্রতিবাদ জানান তিনি। পরবর্তীতে ভিনিসিয়াসের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ। তাদের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রদানের পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার কোচ জাভি হার্নান্দেজসহ অনেককেই পাশে পেয়েছেন। তবে তার সঙ্গে পাল্টাপাল্টি মন্তব্যে জড়িয়েছেন লা লিগা প্রধান হাভিয়ের তেবাস। যার জবাবে এবার ভিনিসিয়াস তার প্রতি করা একটি বর্ণবাদী আচরণের ভিডিও প্রকাশ করেছেন।

মায়োর্কা, রিয়াল ভায়াদোলিদ, অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ, বার্সেলোনার পর ভ্যালেন্সিয়া—লা লিগার এবারের মৌসুমে এ নিয়ে পাঁচবার প্রতিপক্ষের মাঠে বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হলেন ভিনিসিয়াস। মাঠে বারবারই এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে মুখে জবাব দিলেও, ব্রাজিল তারকা চোখের অশ্র সংবরণ করতে পারেননি। যা নিয়ে ফুটবল তারকা ও কোচ থেকে সংশ্লিষ্ট অনেকেই কথা বলছেন।

আরও পড়ুন >> ‘ব্রাজিলিয়ানদের কাছে বর্ণবাদী দেশ স্পেন’

লা লিগার ম্যাচে বর্ণবাদের শিকার হওয়া ভিনিসিয়াস ম্যাচ শেষে প্রতিবাদ জানিয়ে ‍টুইটারে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘এটা প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার নয়। লা লিগায় বর্ণবাদ স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোদ কর্তৃপক্ষ ও স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন এটা মনে করে এবং সমর্থকদের দলগুলো সাহস জোগায়। বলতে বাধ্য হচ্ছি, স্পেন আজ ব্রাজিলিয়ানদের কাছে বর্ণবাদী দেশ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে।’

ভিনিসিয়াসের বক্তব্যের পর লা লিগার পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটন করতে ম্যাচের সব ছবি ও ভিডিও নিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্ত শেষে ঘৃণিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে নেওয়া হবে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা।’

তবে লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস ভিনিসিয়াসের দিকেই উল্টো তোপ দাগেন। তার মতে, দর্শকদের এমন আচরণের পেছনে ভিনিসিয়াসেরও দায় আছে। তিনি বলেছিলেন, ‘লা লিগার দিকে আঙুল তোলার আগে নিজের দিকে তাকাও ভিনিসিয়াস। বর্ণবাদ নিয়ে লা লিগার করণীয় বিষয়ে আপনার কাছে আমাদের ব্যাখ্যা করা উচিত, সেহেতু আমরা সেই চেষ্টা করেছি। কিন্তু এর আগে দুই দফা আপনি দিনক্ষণ দিয়েও উপস্থিত হননি। সমালোচনা এবং লা লিগাকে অপমান করার আগে যথাযথভাবে নিজেকে জানাতে হবে। অন্যের দ্বারা পরিচালিত হবেন না।’ সঙ্গে সঙ্গেই তার জবাব দেন ভিনিসিয়াসও, ‘আপনার আচরণ রেসিস্টের সমতুল্য। আমি আপনার বন্ধু নই যে বর্ণবাদ নিয়ে আলোচনা করব। আমি যথাযথ ব্যবস্থা ও শাস্তি চাই।’

সেই রেশ ধরেই এবার দর্শকদের তোলা বর্ণবাদী সুরের একটি ভিডিও নিজের ফেসবুক পেইজে শেয়ার করেছেন ২২ বছর বয়সী এই উইঙ্গার। সেখানে তিনি কিছু মুষ্টিমেয় দর্শক এবং একটি গ্রুপের প্রতি আঙুল তুলেছেন। ওই ভিডিওতে ভিনিসিয়াসকে উদ্দেশ্য করে ‘বানর’ এবং ‘যাও-মরো’ মন্তব্য করতে দেখা যায় কিছু দর্শককে। যার ক্যাপশনে ব্রাজিল ফরোয়ার্ড লেখেন, ‘ঘরের বাইরের প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি। তার মধ্যে চলতি সিজনেই সবচেয়ে বেশি। মৃত্যু কামনা, ফাঁসিতে ঝুলাও এবং আরও অশ্রাব্য চিৎকার- সবই রেকর্ড করা আছে।’

আরও পড়ুন >> বর্ণবাদের শিকার হওয়ার পর লাল কার্ড দেখলেন ভিনি

ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে ম্যাচের ৭০তম মিনিটে একটি আক্রমণ শানাতে প্রতিপক্ষের সীমানায় থাকা ভিনিসিয়াসের দিকে গ্যালারি থেকে আরেকটি বল ছুড়ে মারা হয়। ভালেন্সিয়া ডিফেন্ডার এরাই কুমার্ট আবার সেই বলটি মেরে বসেন ব্রাজিলিয়ানের দিকে। ওই ঘটনার জন্য কুমার্টকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে রিয়ালকে ফ্রি কিক দেন রেফারি। বিপত্তির শুরু সেখান থেকেই।

ফ্রি কিক নেওয়ার প্রস্তুতির সময় হঠাৎ ভ্যালেন্সিয়ার গোলবারের পেছনে গ্যালারির এক দর্শকের দিকে উত্তেজিতভাবে ছুটে যান ভিনিসিয়াস। তার সঙ্গে যোগ দেন রিয়ালের আরও কয়েকজন ফুটবলার। ভিনিসিয়াস পরে রেফারির কাছে গিয়ে দেখিয়ে দেন গ্যালারির সেই অংশের দর্শককে। ১০ মিনিট বিরতির পর খেলা পুনরায় শুরু হয়। ম্যাচের শেষ দিকে আবারও মাঠে হাতাহাতিতে জড়ায় দু’দল। সেই ঘটনায় এক পর্যায়ে লাল কার্ড দেখেন ভিনিসিয়াস। ম্যাচে রিয়াল ১-০ গোলে হেরে যায়।

এএইচএস