ক্রিকেটার হালিমের ছেলের চোখ জাতীয় ফুটবল দলে
চলতি ফুটবল মৌসুমে বেশ ধারাবাহিক এবং চমক জাগানো দল পুলিশ ফুটবল ক্লাব। প্রিমিয়ার লিগে আগের রাউন্ডে অপ্রতিরোধ্য বসুন্ধরা কিংসের অপরাজিত থাকার রেকর্ড চূর্ণ করেছে। গতকাল লিগের তলানির দল আজমপুরকে ৭ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে। এই সাত গোলের মধ্যে একটি করেছেন সৈয়দ শাহ কাজেম কিরমানি। যিনি সাবেক তারকা ক্রিকেটার হালিম শাহ’র ছেলে।
সাত বছর বয়সে বাবার সঙ্গে কানাডায় যান কাজেম। কানাডা গিয়েই মূলত ফুটবলে ঝোকা কাজেমের, 'বাংলাদেশে একদম ছোটবেলায় ক্রিকেট, ফুটবল দুটোই খেলেছি। কানাডায় গিয়ে ফুটবলটা বেশি ভালো লেগেছে। স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রভিন্সেও খেলেছি।' কানাডা থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পর বাংলাদেশে এসেছেন পেশাদার ফুটবল খেলতে। গত মৌসুমে সাইফ স্পোর্টিংয়ে ট্রায়ালে টিকলেও পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র জটিলতায় খেলা হয়নি। এই মৌসুমে বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে খেলছেন। মিডফিল্ডার হয়ে স্বাধীনতা কাপে একটি ও লিগে এক গোল করেছেন। নিজে গোলের পাশাপাশি সতীর্থদের গোলের উৎস রচনাও করছেন।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ২৪ বছর বয়স্ক কাজেমের এটিই প্রথম মৌসুম। ধীরে ধীরে নিজেকে জাতীয় দলের জার্সি পড়ার জন্য প্রস্তুত করতে চান, 'প্রথম দিকে একটু গরম বেশি লেগেছিল। এখন অবশ্য আবহাওয়ার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়েছি। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাই।’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও জাতীয় দলের সহকারি কোচ হাসান আল মামুন কাজেমের মধ্যে সম্ভাবনা দেখছেন, 'সে যথেষ্ট প্রতিভাবান ও প্রতিশ্রুতীশীল খেলোয়াড়। হ্যাভিয়েরের ( জাতীয় দলের হেড কোচ ) পর্যবেক্ষণে সে রয়েছে।' কাজেম মৌসুমের শুরুর দিকে বেশ কিছু ম্যাচ একাদশে ছিলেন। সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে অবশ্য তাকে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি খেলাচ্ছেন পুলিশের বিদেশি কোচ।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের আলোচনা প্রায় পুরোটাই এখন জাতীয় দল ঘিরেই। ঘরোয়া লিগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেও সেভাবে আলোচনা হয় না। আশি-নব্বইয়ের দশকে ছিল উল্টো চিত্র। সেই সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম আলোচিত নাম ছিলেন হালিম শাহ। ইস্কাটন সবুজ সংঘ, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, মোহামেডানের হয়ে ব্যাট হাতে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন। লিগ শেষে থাকতেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় উপরের দিকেই। অনুর্ধ্ব ১৯, 'এ' দলে থাকলেও সিনিয়র জাতীয় দলে খেলা হয়নি কখনো হালিমের। জাতীয় দলে না খেলাদের মধ্যে সেই সময় অন্যতম তারকা ক্রিকেটার ছিলেন হালিম। নিজের অসম্পূর্ণ কাজটা ছেলেই পূর্ণ করবেন কানাডা থেকে এমন প্রত্যাশার কথাই জানালেন হালিম, 'জাতীয় দলে খেলার সকল সম্ভাবনাই ছিল আমার। কিছু কারণে হয়নি। আমার ছেলে ফুটবল খুব ভালোবাসে। প্রথম মৌসুম হলেও সে অনেকটা নিয়মিতই খেলছে। আশা করি আমার অপূর্ণতা সেই পূরণ করবে।'
ক্রিকেটের ব্যস্ততায় হালিমের উচ্চ শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়নি। তাই তার প্রথম চেষ্টা ছিল ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করার। কানাডার আলবার্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাজেম গ্র্যাজুয়েট হওয়ায় হালিম অনেকটাই তৃপ্ত, 'কানাডায় আসার পর আমার ছেলে ফুটবল নিয়ে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রভিন্সেও বেশ সাড়াও ফেলেছিল। এরপরও আমি পড়াশোনায় তাকে জোর দিতে বলেছি। সে নিজেও পড়াশোনা ভালোই করেছে। এখন তার ইচ্ছে পূরণে দেশে ফুটবল খেলতে পাঠিয়েছি।’ ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ার শেষ করার খুব অল্প সময়ের পরেই কানাডায় থিতু হন হালিম। প্রায় দুই দশক তিনি কানাডা প্রবাসী। প্রথম বছর টরেন্টো থাকলেও এখন আলবার্টায় বসবাস করছেন।
সাবেক ক্রিকেটার হলেও দেশের ফুটবলের খোজ-খবর ভালোই রাখেন হালিম। বাংলাদেশের ফুটবল সম্পর্কে তার পর্যবেক্ষণ,ক 'বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগের মান এখন বেশ ভালোই। উন্নত মানের বিদেশি ফুটবলার, কোচিং স্টাফের পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও ভালো মাঠ রয়েছে বিশেষ করে কুমিল্লার মাঠ অসাধারণ। জাতীয় ফুটবল দল একটু সাফল্য পেলেই আবার ফুটবলের উন্মাদনার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে সমাজে।'
সুদূর কানাডায় থাকলেও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনের সঙ্গে হালিমের যোগাযোগ প্রতিনিয়ত। দুই জন অনেকটা হরিহরাত্মা। ক্রিকেটের ব্যস্ততার মধ্যেও বন্ধুর সন্তানের খোজ-খবর রাখেন সুমন, 'নির্মাণ থেকে আমাদের ক্রিকেটের এক সঙ্গে পথচলা শুরু। আমরা এখন ভৌগলিকভাবে অনেক দূরত্বে বাস করলেও আত্নিক দিক থেকে আগের সেই অবস্থানেই রয়েছি। সন্তানের পছন্দকে অভিভাবকদের প্রাধান্য দেয়া উচিত। হালিম ক্রিকেটার হলেও কাজেমের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসাকে সহযোগিতা করছে এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। আশা করি কাজেম একদিন জাতীয় ফুটবল দলের জার্সি পড়ে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করবে।'
আরও পড়ুন >> এক যুগ পর আবাহনী-মোহামেডান ফাইনাল
কাজেমের কন্ঠেও ঝরল সুমনের প্রতি শ্রদ্ধা, 'সুমন আঙ্কেলকে ছোট থেকেই দেখছি। সব সময় আমার খোজ-খবর রাখেন। খেলাধূলা নিয়েও নানা পরামর্শ দেন।' হাবিবুল বাশার সুমনের পরিবার পুরোটাই ক্রীড়াঙ্গনে। জাতীয় দলের অন্যতম সফল অধিনায়কেরও ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা অনেক। তার প্রয়াত বড় ভাই তুহিন সত্তর দশকে ভিক্টোরিয়া ও মোহামেডানের তারকা গোলরক্ষক ছিলেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাতীয় ফুটবল দলে ফলাফল আশাব্যাঞ্জক না হলেও ঘরোয়া ফুটবলে ফুটবলার অনেক পারিশ্রমিক পান। বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনাময় ফুটবলার আর্থিক প্রলোভন সামলাতে না পেরে বড় ক্লাবে গিয়ে বেঞ্চে বসে ক্যারিয়ার নষ্ট করেছেন। কাজেম এবার মৌসুমে ভালো পারফরম্যান্স করায় ইতোমধ্যে দু’য়েকটি ক্লাবের নজরে পড়েছে। হালিম শাহ ও সুমন দুই সাবেক ক্রিকেটারই অর্থের চেয়ে কাজেমের খেলার সুযোগকেই এখন প্রাধান্য দেয়ার পক্ষে, 'আমরা চাই সে যে ক্লাবেই খেলুক সব সময় যেন একাদেশ খেলতে পারে। তাকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে আগে।'
এজেড/এইচজেএস