ফিফায় ‘প্রথম’ বাংলাদেশি
ফুটবলের পরিসর বৈশ্বিক। ১২০ গজের মাঠের খেলার সঙ্গে অর্থ, বাণিজ্য, রাজনীতি, কূটনীতিসহ সবকিছুই জড়িত। ফুটবল বিশ্বায়নের সব অংশে বাংলাদেশ সেভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে না। ফুটবল বিশ্বে ‘এজেন্ট’ খুব গুরুত্বপূর্ণ ও প্রচলিত একটি টার্ম। বাংলাদেশে ফিফা স্বীকৃত কোনো এজেন্ট ছিলেন না। সেই অভাব ঘুচিয়েছেন ২৬ বছরের তরুণ নিলয় বিশ্বাস। ফিফার এজেন্ট তালিকায় প্রথমবারের মতো তিনি বাংলাদেশের নাম তুলেছেন।
ফুটবলের বাজার বিশ্বজুড়ে। এই এজেন্টদের মাধ্যমে ফুটবলার-কোচরা বিশ্বের নানা প্রান্তে দৌড়ঝাঁপ করেন। ফিফার নিবন্ধিত এজেন্ট হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিলয় বলেন, ‘বসুন্ধরা, আবাহনী ও রহমতগঞ্জে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন ফুটবলার দিয়েছি। কাজ করেছি কলকাতা মোহামেডানে জামাল ভূঁইয়ার অংশগ্রহণের পেছনেও। এবার কাতার বিশ্বকাপের পর ফিফা এজেন্টদের জন্য নতুন রেগুলেশন্স করে। এরপর এজেন্টদের সাইটে রেজিস্ট্রেশন করি। পরীক্ষায় অংশ নিতে ফি দিয়েছি ৬০০ ডলার। এরপর বাফুফেতে একটি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছি।’
বিজ্ঞাপন
১৯ এপ্রিল একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফিফা এজেন্টদের এই পরীক্ষা নিয়েছে। সারা বিশ্বজুড়ে একই সময়ে ১ ঘণ্টার এই পরীক্ষায় ১৩৮ দেশ থেকে ৩৮০০ জন এজেন্ট অংশ নিয়েছিলেন। ২৭ এপ্রিল ফিফা প্রকাশিত ফলাফলে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৯৬২ জন। অংশগ্রহণকারীর মধ্য থেকে উত্তীর্ণের হার ৫২ ভাগ। বাফুফে ভবনে অনুষ্ঠিত সেই পরীক্ষায় বাংলাদেশে একমাত্র নিলয়ই অংশ নেন এবং তাতে পাশ করেন। এই সনদ এক বছর মেয়াদী। মেয়াদ শেষে আবার একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নবায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কম্পিটিশন ম্যানেজার জাবের বিন তাহের আনসারি। ২০০৮ সাল থেকে পেশাদার ফুটবলের সঙ্গে তিনি জড়িত। তার দেওয়া তথ্য বলছে, নিলয়ই বাংলাদেশের প্রথম ফিফা স্বীকৃত এজেন্ট। ফিফার নিবন্ধিত এজেন্ট হতে কিছু আনুষ্ঠানিকতা ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। জুলফিকার, নাইম ও আবিদরা এজেন্ট হিসেবে কাজ করলেও তারা ফিফার সনদ অর্জন করেননি।
ফিফার সনদ পাওয়ায় নিলয় সারা বিশ্বে খেলোয়াড়, কোচ ও ক্লাবের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবেন। এই সনদ তার নিজের একটা নিশ্চয়তা বলেও মনে করেন নিলয়, ‘অনেক সময় খেলোয়াড়-কোচ অথবা ক্লাব চুক্তিকৃত কমিশন দিতে চায় না। ফিফার নিবন্ধিত এজেন্ট না হলে সেই কমিশনের জন্য আপিলও করা যায় না। সামনে এ রকম সমস্যা সৃষ্টি হলে ফিফায় আবেদন করলে আমি এর প্রতিকার পাব।’
গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, এজেন্টদের কমিশন না দেওয়ার জন্য অনেক তারকা ফুটবলার তাদের পরিবারের সদস্যকে এজেন্ট হিসেবে কাজ করিয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর আর সেই সুযোগ থাকছে না। খেলোয়াড়-কোচ নিবন্ধনের সময় মাধ্যম থাকলে এজেন্টের নাম্বারও এন্ট্রি দিতে হবে। সেই এজেন্ট নিবন্ধিত হতে হবে ফিফায়।
ফিফার স্বীকৃতি পাওয়ায় বিশ্বের দুয়ার উন্মুক্ত হলেও বাংলাদেশি হিসেবে এজেন্টের পথচলায় অনেক চ্যালেঞ্জ দেখছেন নিলয়, ‘সারা বিশ্বে এজেন্টরা সমাদৃত হয় স্থানীয় খেলোয়াড়দের মাধ্যমে। আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড়দের চাহিদা বিদেশে তুলনামূলক কম। আবার তারা অনেক সময় বিদেশে যেতেও চান না। তাই দেশি ক্লাবগুলোর চাহিদার প্রেক্ষিতে বিদেশিদের দিকেই ঝুঁকতে হয় আমাদের।’
দেশের পুরুষ ফুটবলে খানিকটা সঙ্কট দেখলেও, নারী ফুটবলে সম্ভাবনা দেখছেন এই তরুণ, ‘আমাদের নারী ফুটবলাররা অত্যন্ত সম্ভাবনাময়ী। তাদের মান ও সামর্থ্য এশিয়া বা বিশ্বের অনেক দেশেও খেলার মতো। সাবিনা-কৃষ্ণাদের নিয়ে কাজের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।’
ফরিদপুরে বেড়ে ওঠা নিলয় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিলেন। স্বপ্ন ছিল ফুটবলার হয়ে মাঠ কাঁপাবেন। ইনজুরি তার সেই স্বপ্নের ইতি ঘটায়। তাই ভিন্নভাবে ফুটবলের সঙ্গেই থাকার চেষ্টা, ‘ইনজুরির জন্য ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া হয়নি, তাই বিকল্পভাবে ফুটবলের সঙ্গে রয়েছি। মাঝে কিছু ফুটবল ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত কোর্স করেছি। বাফুফে এবং সাফে কিছুদিন কাজও করেছি। বাংলাদেশের ফুটবলে এজেন্ট সেক্টর খানিকটা খালি। এদিকে কাজের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে তাই ঝুঁকে পড়লাম।’
এজেন্ট হিসেবে কাজের যেমন সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি শঙ্কা-ঝুঁকি রয়েছে; সেটিও অজানা নয় ফিফার তালিকায় বাংলাদেশের নাম ওঠানো এই তরুণের, ‘আগে এজেন্টদের কমিশন ছিল ১০ শতাংশ। নতুন রেগুলেশন্সে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে (এর মধ্যে কেউ থাকলে তাকে আবার ফিফটি পার্সেন্ট দিতে হবে)। অনেক অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি রয়েছে এই সেক্টরে। এই দিকেই যে প্রতিষ্ঠিত হতে পারব এর নিশ্চয়তা নেই। এরপরও কয়েক বছর চেষ্টা করব বাংলাদেশের ফুটবলে ভিন্ন কিছু দেয়ার।’
গতানুগতিক ধারায় না গিয়ে নিলয়ের মতো তরুণরা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন বলেই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নাম ওঠে!
এজেড/এএইচএস