মাঠে নামলেই এখন গোল করা অনিবার্য হয়ে উঠেছে নরওয়েজিয়ান ফরোয়ার্ড আর্লিং হলান্ডের। তবে তার একক কর্তৃত্ব ছাড়াও পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি দুর্দান্ত পারফর্ম করে চলেছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পর তাদের সেই ফর্ম ধরে রেখেছে ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও। কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখকে ঘরের মাঠে সিটি এককথায় উড়িয়ে দিয়েছে। এদিন আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করেছেন হলান্ড। গড়েছেন প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোল করার কীর্তি।

মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাতে বায়ার্নের নতুন কোচ থমাস টুখেলের অধীনে বাভারিয়ানরা তাদের দ্বিতীয় ম্যাচে নামে। তবে হার দিয়ে অভিষেক শুরুর পর টানা দ্বিতীয় ম্যাচেও একই ফলের মুখোমুখি হতে হয়েছে টুখেলকে। সিটির কাছে তারা ৩-০ গোলে উড়ে গেছে। আগের ম্যাচে টমাস মুলাররা ফ্রেইবুর্গের কাছে হেরে জার্মান কাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল। 

সেই ধাক্কা সামলে এই ম্যাচ দিয়ে নতুন শুরু করতে চেয়েছিলেন টুখেল। এর আগে হুট করেই মৌসুমের মাঝপথে ইউলিয়ান নাগালম্যানকে ছাটাই করে টুখেলকে দায়িত্ব দেয় বায়ার্ন। তার দ্বিতীয় ম্যাচে ইতিবাচকভাবে শুরু করে শিষ্যরা। ম্যাচের শুরু থেকেই সিটির সঙ্গে বায়ার্নের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলে, এতে দু’পক্ষই সমান চাপ তৈরি করছিল। তবে বায়ার্নের চেয়ে ম্যান সিটির আক্রমণগুলোই ছিল অনেক বেশি গোছানো। সিটি খেলোয়াড়দের নিজেদের মাঝে বোঝাপড়াও ছিল দারুণ।

সিটির প্রথম লিড এনে দেওয়া রদ্রির গোলটি ছিল দুর্দান্ত

ম্যাচের প্রথম দিকে পরিকল্পনা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে বায়ার্নকে খুব কমই সুযোগ দিয়েছে সিটি। ৫ম মিনিটে হলান্ড শট নিলেও সেটি ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট। সিটির হাই প্রেসিংয়ের বিপরীতে বায়ার্নকে আক্রমণে যেতে সুযোগের অপেক্ষাতেই থাকতে হচ্ছিল। ১৪ মিনিটে সিটির প্রেসিংয়ে নাকাল হয়ে তাদের গোল প্রায় উপহার দিয়েই ফেলেছিল বায়ার্ন। সে যাত্রায় অবশ্য কোনোভাবে হলান্ডকে ঠেকিয়ে দেয় তারা। চাপ সামলে দ্রুত অবশ্য গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বায়ার্ন। সিটি যদিও অতিথিদের থিতু হওয়ার খুব একটা সুযোগ দিচ্ছিল না।

এরপর হলান্ড ২২ মিনিট ফের সম্ভাবনা জাগিয়ে গোল করতে ব্যর্থ হন। বায়ার্নের হয়ে দারুণ আক্রমণে ওঠেন জামাল মুসিয়ালা। ২৬ মিনিটে দারুণ নৈপুণ্যে তাকে ঠেকিয়ে দেন রুবেন দিয়াজ। এর এক মিনিট পরই লিড নেয় স্বাগতিকরা। ডি-বক্সের বাইরে থেকে রদ্রির বাঁ পায়ের বুলেট গতির বাঁকানো শটটি ছিল অনেকদিন মনে রাখার মতোই। এরপরও তারা আক্রমণের ধার ধরে রাখে। যার ধারাবাহিকতায় ৩৪ মিনিটে বায়ার্নের গোল অভিমুখে আরেকটি শট নেন ইকেই গুনদোয়ান। তবে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় সেটি ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক ইয়ান সোমার। ইতিহাদের দলটি সেই লিড নিয়েই বিরতিতে যায়। প্রথমার্ধে বল দখলে এগিয়ে ছিল বায়ার্ন। কিন্তু ৪টি শটের কোনোটিই গোলের লক্ষ্যে ছিল না।

দ্বিতীয়ার্ধে টুখেল শিষ্যরা অন্যরকম শক্তিমত্তার প্রদর্শন করতে থাকে। শুরু থেকেই তারা পরপর আক্রমণ শাণায়। প্রথমে লেরয় সানের শট ঠেকান সিটি গোলরক্ষক এডারসন। একটু পর আবারও তাদের আক্রমণ, সিটি এবারও বেঁচে যায়। এরপর ভুল করে বসে বাভারিয়ানরা। বল ক্লিয়ার না করে নিজেদের মাঝে দেওয়া নেওয়া করতে গিয়ে গোল খেতে খেতেও তারা বেঁচে যায়।

৫৩তম মিনিটে আবারও এডারসনের পরীক্ষা নেন সানে। তবে এবারও তিনি সফল হতে পারেননি। এরপর কয়েকটি আক্রমণে বায়ার্নকে চাপে ফেলার চেষ্টা করেও শেষ মুহূর্তে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছিল আক্রমণগুলো। তবে ৭০ মিনিটে বার্নার্ডো সিলভা দুর্দান্ত এক গোলে তিনি সিটিকে ২-০ ব্যবধান এগিয়ে নেন। তার আগেই জ্যাক গ্রিলিশের প্রেসিংয়ে নিজেদের পোস্ট থেকে ২৫ গজ দূরে বলের নিয়ন্ত্রণ হারান বায়ার্নের উপামেকানো। এরপর দারুণ এক ব্যাকহিলে সেই বল গ্রিলিশ বাড়িয়ে দেন হলান্ডকে। তিনি দুর্দান্ত এক ক্রসে অরক্ষিত সিলভার দিকে বল বাড়ালে হেডে সেটি লক্ষ্যভেদ করেন পর্তুগিজ তারকা।

এবার হলান্ডের চিরচেনা দৌড়। ৭৬তম মিনিটে দুর্দান্ত ক্রস থেকে জন স্টোনস হেডে বল বাড়ান হলান্ডের দিকে। নিঁখুত ফিনিশিংয়ে বল জালে জড়িয়ে দলকে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন এই নরওয়েজীয় তারকা। এর মাধ্যমে সিটির জার্সিতে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে নরওয়ের এই ফরোয়ার্ডের মোট গোল হলো ৪৫টি; যা প্রিমিয়ার লিগ যুগে প্রতিযোগিতাটির কোনো খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ। এরপরও গোল করার চেষ্টা থামায়নি গার্দিওলা বাহিনী। তবে আর কোনো গোল হয়নি। দ্বিতীয় লেগে বায়ার্নের মাঠে আতিথ্য নেওয়ার আগে বড় জয় নিয়ে তারা মাঠ ছাড়ে। দু’দল সেই ম্যাচে মুখোমুখি হবে আগামী বুধবার (১৯ এপ্রিল) রাতে।

এএইচএস