‘দলে টোটালি কোয়ালিটির অভাব’
র্যাঙ্কিংয়ে সাত ধাপ পেছনে, দলের অনেকেরই জীবিকার প্রধান মাধ্যম ফুটবল নয়। এমন দল নিয়ে বাংলাদেশে প্রীতি ম্যাচ খেলতে এসেছিল সিশেলস। আর তাদের সঙ্গেই বাংলাদেশ নিজেদের মাটিতে হারের তিক্ত স্বাদ পেয়েছে। জামালদের এই হারে ফুটবলাঙ্গনে চলছে সমালোচনার ঝড়।
দেশীয় ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তী আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও প্রথম হ্যাটট্রিকম্যান চুন্নু যারপরনাই হতাশ এই পারফরম্যান্সে, ‘এই ফুটবল মানুষ দেখতে চায় না। খুবই দুঃখজনক। এমন দলের সঙ্গে এই পারফরম্যান্স নিয়ে বলতেও খারাপ লাগছে। বিশ্লেষণ করতে গেলে অনেক বিষয়ই ওঠে আসবে। একটাই মূল, টোটালি কোয়ালিটির অভাব।’
বিজ্ঞাপন
গতকাল প্রায় একই সময় সাফ অ-১৭ নারী ফুটবলে বাংলাদেশের ম্যাচ ছিল। সিনিয়র জাতীয় ফুটবলারদের চেয়ে তরুণীদের খেলায় মুগ্ধ বাংলাদেশের এই কিংবদন্তি। কথা বলেছেন সেই প্রসঙ্গেও, ‘সত্যি বলতে ছোট মেয়েদের খেলায় আমি মুগ্ধ। কয়েকজনকে দেখলাম বলের ওপর অসম্ভব দখল। যেটা মানসম্পন্ন ফুটবলারের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। দুঃখজনক হলেও সত্যি বাংলাদেশ সিনিয়র দলে (পুরুষ) এটি খুব অনুপস্থিত।’
আরও পড়ুন : হদিস নেই দেশের দুই ঐতিহাসিক ট্রফির!
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য্য কিছু দিন আগেও জাতীয় দলের কোচিং স্টাফ ছিলেন। স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়েরের গোলরক্ষক কোচ হিসেবে কাজ করেছেন বিপ্লব। সিশেলস ম্যাচের ব্যর্থতার পর এই সাবেক অধিনায়কের কাঠগড়ায়ও ফুটবলাররাই। ঘরোয়া লিগের পারফরম্যান্সের সঙ্গে জাতীয় দলের ম্যাচ পারফরম্যান্সের তারতম্য ধরা পড়েছে বিপ্লবের চোখে, ‘কোচ এবং ফেডারেশনের দোষারোপের সুযোগ নেই। ফেডারেশন যথেষ্ট সময় ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। আমি হ্যাভিয়েরের সঙ্গে ছিলাম। তার চেষ্টাও আন্তরিকতা দেখেছি। কোচরা কৌশল সাজিয়ে দেয়। মাঠে খেলতে হবে ফুটবলারদের। ফুটবলাররা দায়িত্ব না নিলে ফলাফল আসবে না।’
জাতীয় দলে সবচেয়ে বেশি ফুটবলার বসুন্ধরা কিংসের। বসুন্ধরা কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজন নিজেও বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন। সিশেলসের সঙ্গে এই হারে তিনিও অনেকটা ব্যথিত, ‘প্রথম ম্যাচটি আমি দেখেছি। দ্বিতীয় ম্যাচের সময় ক্লাবের অনুশীলন থাকায় দেখতে পারিনি। পরবর্তীতে সিশেলসের গোলের মুহূর্ত দেখলাম। বাংলাদেশ দল যে প্রস্তুতি নিয়েছে এবং দেশের মাটিতে এমন হার সমর্থকদের জন্য কষ্টকর।’
কিংসের কোচ রাখঢাক রেখে খানিকটা মন্তব্য করলেও দেশীয় শীর্ষ কোচদের অনেকেই মন্তব্য করা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন। ফুটবলাররা যোগ্যতা-সামর্থ্যের চেয়ে অনেক অর্থ পায় বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষক কোচ বিপ্লব অনুজদের প্রাপ্তি নিয়ে আপত্তি না জানালেও পারফরম্যান্স নিয়ে বলছেন, ‘আমরা জেন্টলম্যান এগ্রিমেন্ট, পুল প্রথায় থেকে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলাম। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ভালো অর্থ পাচ্ছে, এটা ইতিবাচক। সেই হিসেবে তাদের ক্লাব ও জাতীয় দলে ভালো পারফর্ম করতে হবে।’
আরও পড়ুন : ১৯৯ র্যাংকিংয়ের সিশেলসের সঙ্গে হারল বাংলাদেশ
অন্যদিকে, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও ফেডারেশন থেকে সদ্য পদত্যাগ করা সদস্য আরিফ হোসেন মুনের কাছে সিশেলস ব্যর্থতার ব্যাখ্যা ভিন্ন, ‘একটি ম্যাচ জিতেছি ১-০ গোলে, এই ম্যাচেও যদি কোনোভাবে জিততাম তাহলে কি বাংলাদেশের ফুটবল খুব এগিয়ে যেত? এটি এক-দুটি ম্যাচের বিষয় নয়, মূল বিষয় হচ্ছে সিস্টেম। জেলা পর্যায়ে ফুটবল নেই, তৃণমূলে খেলা নেই। খেলোয়াড়ও আসছে না। ফলে বর্তমানদের ওপরই জাতীয় দল নির্ভর করতে বাধ্য এবং যার মাধ্যমে ফলাফলও আসছে না।’
বাংলাদেশের ফুটবল অক্সিজেনের সাহায্যে চলছে বলে মন্তব্য তার, ‘জাতীয় দলের এই অবস্থা, এখন শুনছি একাডেমিও (কমলাপুর বাফুফে একাডেমি) বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাহলে ফুটবলাররা স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার অবস্থায় নেই। আমাদের ফুটবল আসলে কোনোমতে অক্সিজেন দিয়ে চলছে।’
ফুটবল ফেডারেশনে মুন নিজেও এক দশক ছিলেন। গত মাসে সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সাবেক এই জাতীয় ফুটবলার।
এজেড/এএইচএস