পেপ গার্দিওলার শিষ্য আর্লিং হলান্ড মাঝের কয়েক ম্যাচে গোল পাননি। সব শোধ যেন তিনি এই ম্যাচের জন্য জমিয়ে রেখেছিলেন। গুণে গুণে এক হাত গোল করেছেন তিনি। অর্থাৎ, গোল সংখ্যায় ৫ আঙুলই পূরণ করেছেন। হলান্ডের এই দানবীয় নৈপুণ্যে লাইপজিগকে ম্যানচেস্টার সিটি ভাসিয়ে দিল ৭-০ গোলের জোয়ারে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগের ম্যাচে স্কোরলাইন ছিল ১-১। এরপর মজা করে ফিরতি লেগে ৯ স্ট্রাইকার খেলানোর কথা বলেছিলেন গার্দিওলা। তার কথাটাকে যেন একটু বেশিই সিরিয়াসলি নিয়ে নিলেন হলান্ড। আর মাঠে নেমেই জানিয়ে দিলেন, তিনি থাকতে অন্য কোনো স্ট্রাইকারের প্রয়োজন নেই!

ইতিহাদে ঘরের মাঠে ম্যাচের শুরু থেকেই জার্মান ক্লাবটির ওপর দাপট দেখাতে থাকে ম্যানসিটি। যার ফলে লাইপজিগের বিপক্ষে অনায়াসেই জয় এসেছে ম্যাচ শেষে। এদিন ম্যাচের ২২তম মিনিটে গোলের খাতা খুলেন নরওয়েজিয়ান হলান্ড। তবে গোলটিতে তারচেয়ে প্রতিপক্ষের অবদানই বেশি। ডি-বক্সে লাইপজিগ ডিফেন্ডার বেঞ্জামিন হেনরিকসের হাতে লাগলে ভিএআরের সহায়তায় পেনাল্টি দেন রেফারি। সেখান থেকে সফল স্পট-কিক নেন হলান্ড।

গোলবন্যার দিনে খাতা খুলেছিলেন গুনদোয়ানও 

মিনিট দুয়েক পর আবারও সফরকারীদের গোলপোস্টে কেভিন ডি ব্রুইনাদের হানা। সেই গোলটি এই বেলজিয়ান মিডফিল্ডারের হতে পারত। কিন্তু বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তার জোরালো শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল হেড দিয়ে জালে পাঠান হলান্ড। তার এই স্কোরের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ২৫ ম্যাচে হলান্ডের গোলসংখ্যা দাঁড়ায় ৩০-এ। যা সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে গোল করার রেকর্ড। এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল সাবেক ডাচ ফরোয়ার্ড রুড ফন নিস্টলরয়ের (৩৪ ম্যাচ) দখলে।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে হলান্ড ভাগ্যের ছোঁয়ায় হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন। ডে ব্রুইনার কর্নারে রুবেন দিয়াজের জোরালো হেড পোস্টে লেগে গোললাইনের ওপর দিয়ে চলে যায়। সেখান থেকে লাইপজিগের ডিফেন্ডারের ক্লিয়ারের চেষ্টায় বল চলে যায় হলান্ডের পায়ে। এরপর আর শট নিতে হয়নি, বলটি জালের ঠিকানা খুঁজে নেয়। ৩-০ গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় লাইপজিগ।

তবে হলান্ড যেন এই ম্যাচকে রেকর্ডবই ভাঙার পণ করে নেমেছিলেন! চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে প্রথমার্ধে একাধিক হ্যাটট্রিক করেন তিনি। এর আগে ১৯৯৬ সালে এসি মিলান ও ২০০০ সালে মোনাকোর জার্সিতে ইতালিয়ান ফুটবলার মার্কো সিমোনে একই কীর্তি গড়েছিলেন। এদিকে, হলান্ড ২০১৯ সালের অভিষেক চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সালসবুর্গের হয়ে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। এছাড়াও লিগটির নকআউট পর্বে হ্যাটট্রিক করা সিটির প্রথম খেলোয়াড়ও তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধে নেমে সিটি তাদের গোলমেশিন অব্যাহত রাখে। ৪৯তম মিনিটেই ব্যবধান বাড়ায় গার্দিওলার শিষ্যরা। এবার স্কোরশিটে নাম তুলেন জার্মান মিডফিল্ডার ইলকাই গুনদোয়ান। জ্যাক গ্রিলিশের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে ১৬ গজ দূর থেকে নেওয়া শটে তিনি গোলটি করেন। পরবর্তী ৮ মিনিটে আরও লাইপজিগের জালে আরও দু’বার বল পাঠান হলান্ড। নিজের চতুর্থ গোলের জন্য তার নেওয়া হেড ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক। এরপর জোরালো শটে তিনি লক্ষ্যভেদ করেন। তিন মিনিট বাদেই সতীর্থ আকিনজিকে গোলরক্ষক থামালেও আবারও সেখানে হাজির নরওয়েজিয়ান গোলমেশিন। ফিরতি বল পেয়ে তিনি জোরাল শট নেন।

এর মাধ্যমে তিনি নিজের পঞ্চম গোল এবং সিটির হয়ে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের (৩৬ ম্যাচে ৩৯ গোল) নতুন রেকর্ড গড়লেন। ভেঙে দিলেন টমি জনসনের প্রায় শতবর্ষী রেকর্ড। সাবেক এই ইংলিশ স্ট্রাইকার ১৯২৮-২৯ মৌসুমে ৩৮ গোল করে রেকর্ডটি গড়েছিলেন। এছাড়া, মাত্র তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এক ম্যাচে ৫ গোল করেছেন হলান্ড। ২০১২ সালে বার্সেলোনার হয়ে লিওনেল মেসি ও ২০১৪ সালে শাখতার দোনেৎস্কের হয়ে লুইস আদ্রিয়ানো এই নজির গড়েছিলেন।

হলান্ডের গোল সংখ্যা আরও বাড়তে পারত, কিন্তু তাকে ৬৩তম মিনিটে তুলে নেন গার্দিওলা। তার জায়গায় আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড জুলিয়ান আলভারেজকে নামানো হয়। যোগ করা সময়ে লাইপজিগের কফিনে সপ্তম পেরেক ঠুকে দেন ডে ব্রুইনা। ২৫ গজ দূর থেকে তার ডান পায়ের শটে বল ওপরের কোণা দিয়ে জালে জড়ায়।

এএইচএস