মেসি-রোকুজ্জোর ভালোবাসায় দেয়াল হয়েছিল যে যুবক
গত ডিসেম্বরে লুসাইলের সেই ফাইনালের পর ছবিটি নিশ্চয়ই মনে আছে? পরিবারের সঙ্গে বসে আছেন মেসি। একদিকে ট্রফি নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে সন্তানদের। অন্যদিকে মেসি-রোকুজ্জো চুপচাপ পাশাপাশি বসে আছেন। যেন এ মুহূর্তেরই অপেক্ষায় ছিলেন দুজন, বছরের পর বছর ধরে। যখন নিন্দুকেরা বলে বেড়াতো ক্লাবের হয়েই শুধু পারেন রোজারিওর সেই খুদে জাদুকর। কথাগুলো কানে যেত রোকুজ্জোরও। তবে একপ্রান্ত থেকে ভালোবাসার মানুষটাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন অনিঃশেষ। নিন্দুকের সব সমালোচনা থামিয়ে মেসির হাতে যখন শোভা পেল বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি, তখন ক্যামেরা বারবার খুঁজে ফিরেছে রোকুজ্জোকে।
‘লাকি চার্ম’! বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়-এমন কিছু, যা সৌভাগ্য বয়ে আনে। ভক্ত-সমর্থকরা মনে করেন, আর্জেন্টাইন বিশ্বকাপজয়ী লিওনেল মেসির জীবনে সেই ‘এমন কিছু’ হলেন আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো। তার শৈশবের প্রেমিকা। জীবনসঙ্গীনী তথা মনের মানুষ! অনেকে বলেন, মেসি ক্যারিয়ারজুড়ে অতসব সাফল্যের দেখা পেতেন না যদি রোকুজ্জো পাশে না থাকতেন! কথায় আছে, সব সফল পুরুষের পেছনে থাকেন একজন নারী। মেসির জীবনেও সেই নারী রোকুজ্জো।
বিজ্ঞাপন
দু’জনই একই শহরের। বন্ধুর ছোট বোন। পরিচয়টা আগেই ছিল। তবে তাকে প্রেমিকা করার চিন্তাটা অনেক পরে মাথায় এসেছে মেসির। আর্জেন্টিনার রোজারিও ছেড়ে তিনি তখন বার্সেলোনার বাসিন্দা। ন্যু ক্যাম্পের ক্লাবে তার প্রতিভার যত্ন-আত্তি চলছে। এভাবেই একসময় বার্সার মূল দলে উঠে আসলেন। তাকে চিনতে শুরু করল ফুটবল বিশ্ব। আর মেসি বুঝতে শুরু করলেন জীবনে তার বসন্ত এসেছে।
এরই মধ্যে বার্সেলোনা আর রোজারিওতে আসা-যাওয়া চলতে থাকল। কোন ফাঁকে যে বন্ধুর বোনটিকে ভালোবেসে ফেললেন টেরই পাননি। ভালোবাসা বুঝি এভাবেই আসে, নীরবে, গোপনে! তবে গোপন কথাটি গোপন থাকেনি। ২০০৮ সালে ক্রিসমাসের ছুটি পেয়েই ছুটলেন দেশে। পরিকল্পনা করলেন এবার আন্তোনেল্লাকে ভালোবাসার কথা বলেই ছাড়বেন। যে প্লেমেকার প্রতিপক্ষের ফুটবলারদের কাছে রীতিমতো আতঙ্ক তিনিই কি না নার্ভাস। বুঝতে পারছিলেন না কী করে বলা যায় মনের কথা। কী করে বলা যায়-‘টে আমাও’। মানে ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’।
শৈশবের বান্ধবী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোকে ২০১৭ সালে বিয়ে করেন মেসি। ২০১২ সালে তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। প্রথম সন্তান থিয়াগোর জন্মের তিন বছর পর দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেন আন্তোনেল্লা। তার নাম মাতেয়োর। আর ২০১৮ সালে জন্ম নেয় মেসিদের কনিষ্ঠ সন্তান সিরো। ফুটবলের বাইরে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
কিন্তু অন্য কারও সঙ্গে মেসির সম্পর্কে জড়ানোর কথা শোনা না গেলেও সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন রোকুজ্জো। ওই যে কথায় আছে, দৃষ্টির বাইরে কেউ দীর্ঘদিন থাকলে তিনি মানুষের স্মৃতিতেও ধূসর হতে থাকেন। সেটাই ঘটেছিল মেসির ক্ষেত্রে।
মেসির সঙ্গে রোকুজ্জোর সম্পর্ক ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু মেসি ছোট বয়সেই আর্জেন্টিনার রোজারিও গ্রাম ছেড়ে বার্সেলোনার একাডেমিতে যোগ দিতে চলে যান স্পেনে। ফলে আন্তোনেল্লাও দীর্ঘদিন একা হয়ে যান। ফুটবলের জন্য আর্জেন্টিনায় খুব একটা আসতেও পারতেন না মেসি। যোগাযোগ থাকলেও দীর্ঘ দিন দেখা না হওয়ায় মেসির প্রতি আকর্ষণ স্বভাবতই কমে যায় আন্তোনেল্লার। আর সেইসময় এক স্বদেশি যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় আন্তোনেল্লার। তারপর সেই থেকে প্রেমও চলতে থাকে।
ঘটনাটি ২০০৭ সালের। মেসির কানে এ খবর পৌঁছালে তিনি চিঠিও লেখেন ছোট বেলার বন্ধু তথা আন্তোনেল্লার ভাই লুকা স্কাগলিয়াকে। লুকার মাধ্যমেই অন্যজনের সঙ্গে প্রিয়তমার প্রেমের বিষয়টি জানতে পারেন।
আন্তোনেল্লার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে যুবক একবার লিখেছিলেন, ‘আমাদের মধ্যে সম্পর্ক থাকলেও আন্তোনেল্লার ওপর কোনো রাগ নেই। সে মেসির জন্য আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। আর সেটি সে ঠিকই করেছে। একদিন আমার কাছে এসে একটি ফোন ব্যাগ থেকে বের করে বলেছিল, এটা মেসি তাকে দিয়েছে। আমি বুঝে যাই, তাদের দু’জনের মধ্যে পুরনো সম্পর্ক আবার জোড়া লেগেছে। তাই আমিও দূরে চলে যাই।’
আর্জেন্টিনার একটি সংবাদপত্রে ২০১০ সালে আন্তোনেল্লার সম্পর্ক নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই যুবকই আন্তোনেল্লার সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা প্রকাশ করেছিলেন। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় কষ্ট পেলেও মেনে নিয়েছিলেন। ততদিনে অবশ্য মেসির সঙ্গে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন আন্তোনেল্লা। সেই যুবক অবশ্য নিজের নাম গোপন রেখেছেন।
এফআই