৩ চিন্তায় ঘুম হারাম স্ক্যালোনির
সেই মাহেন্দ্রক্ষণের আর বেশি সময় বাকি নেই। হাতে আছে দেড় দিনেরও কম সময়, এরপরই বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা। তবে তার আগে রীতিমতো ঘুম হারাম হয়ে গেছে দলের কোচ লিওনেল স্ক্যালোনির। তা হওয়াটাই স্বাভাবিক অবশ্য।
ফাইনালের আগে বড় একটা চিন্তা মাথায় ঘুরছে আকাশি-সাদাদের কোচের। একটা বললে অবশ্য কমই বলা হয়ে যায়, মেসিদের গুরুর মগজে এখন খেলছে তিন মহা চিন্তা।
বিজ্ঞাপন
প্রথমটা অতি অবশ্যই কিলিয়ান এমবাপে অ্যান্ড কোং। প্রতিপক্ষ শিবিরে যখন এমবাপের মতো এক তারকা থাকেন, যিনি তুড়িতেই বদলে দিতে পারেন ম্যাচের ভাগ্য, তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা না হয়ে যায় কী করে? যদিও লিওনেল স্ক্যালোনি জানেন, ফ্রান্স দলে হুমকিটা কেবল এমবাপেই নন। উসমান দেম্বেলে, অ্যান্টোয়ান গ্রিজমান, অলিভিয়ের জিরুর মতো খেলোয়াড় আছেন যিনি আবার এই বিশ্বকাপে করে বসেছেন ৪ গোল। তাই স্ক্যালোনির চিন্তাটা ফরাসি আক্রমণভাগের পুরোটা নিয়েই।
সে চিন্তার একটা সমাধানও খুঁজে বের করার চেষ্টা দেখা গেছে ইতোমধ্যেই। ফ্রান্সের একগাদা ফরোয়ার্ডকে ঠেকাতে কোচ স্ক্যালোনি অনুশীলনে ৫ ডিফেন্ডারকে নিয়ে নিজের ৫-৩-২/৩-৫-২ ছকটা বাজিয়ে দেখেছেন, যে ছকে কোয়ার্টার ফাইনালে ঠেকিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসকে। সেটা হলে রাইট সেন্টারব্যাক ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো আর রাইটব্যাক নাহুয়েল মলিনা মিলে সামলাতে পারবেন এমবাপেকে, লেফট সেন্টারব্যাক লিসান্দ্রো মার্টিনেজ আর লেফটব্যাক মার্কোস আকুনইয়ার দায়িত্ব থাকবে উসমান দেম্বেলেকে থামানোর। আর নিকলাস অটামেন্ডির কাঁধে থাকবে অলিভিয়ের জিরু, গ্রিজমানসহ বাকি ফরোয়ার্ডদের থামানোর দায়িত্ব, তাকে সহায়তা করবেন এনজো ফের্নান্দেজ।
সে ছকে আক্রমণটা উইং দিয়ে শানাতে চায় আর্জেন্টিনা। প্রথাগত উইঙ্গার না থাকলেও দলে লিওনেল মেসি থাকাতে উইঙ্গারদের দিয়ে সুযোগ কাজে লাগাতে চান স্ক্যালোনি। মেসি একটু নিচে নেমে এসে মাঝমাঠে সংখ্যাগত আধিক্য এনে দেবেন আর্জেন্টিনাকে, যেটা হলে প্রতিপক্ষের ডাবল পিভোটকেও ব্যস্ত রাখতে পারবেন তিনি। মাঝমাঠে থাকা রদ্রিগো ডি পল আর অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের কাজ হবে উইং দিয়ে ইউলিয়ান অ্যালভারেজকে খুঁজে বের করা।
স্ক্যালোনির আরও একটা চিন্তা আছে মাথায়। সেটা তার নিজ দলেই। আনহেল ডি মারিয়াকে ছাড়াই আর্জেন্টিনা শেষ তিন ম্যাচে জিতেছে। নক আউটের প্রথম ম্যাচে তাকে চোটের কারণে পায়নি দল। তবে তাকে ছাড়াও খুব একটা ভোগেনি আর্জেন্টিনা। অস্ট্রেলিয়ার পর নেদারল্যান্ডস ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জয় নিয়ে চলে এসেছে ফাইনালে। শেষ দুই ম্যাচেও তাকে দেখা যায়নি খুব একটা।
ফাইনালের জন্য ডি মারিয়া পুরোপুরি ফিট। মঞ্চটা ফাইনাল বলেই ডি মারিয়াকে নিয়ে ভাবছেন কোচ স্ক্যালোনি। ডি মারিয়ার বড় মঞ্চে পারফর্ম করার ক্ষমতাই ভাবাচ্ছে তাকে। বেইজিং অলিম্পিকের ফাইনালে, এরপর গেল বছর কোপা আমেরিকার ফাইনালে, কিংবা চলতি বছর ফিনালিসিমা, সব ফাইনালের গোলস্কোরারের জায়গায় একটা নাম বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে, সেই নামটা আনহেল ডি মারিয়ার।
রোববার ফাইনালে যখন ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা, সেই ডি মারিয়াকে কাজে লাগানোর ভাবনা ভালোভাবেই ভাবাচ্ছে আর্জেন্টিনা কোচকে। তার জন্য আর্জেন্টিনার শুরুর ফরমেশনকেও বদলে দেবেন কি না, এ নিয়েও ভাবনা কম খেলে যাচ্ছে না তার মগজে।
তবে আর্জেন্টাইন সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, শুরুর একাদশে ডি মারিয়াকে আনার সম্ভাবনা ক্ষীণ। দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম বদলি হিসেবে মাঠে আসতে পারেন তিনি। তিনি মাঠে আসতেই ছকটা বদলে ৪-৩-৩ হয়ে যাবে আর্জেন্টিনার। তার সঙ্গে নামতে পারেন গনজালো মন্তিয়েল, তখন মাঠ থেকে উঠে যাবেন লিসান্দ্রো মার্টিনেজ আর নাহুয়েল মলিনা। ডি মারিয়াকে খেলতে দেখা যাবে দুই উইংয়ে মেসির সঙ্গে জায়গা অদল বদল করে খেলতে। তাতে আক্রমণের সুযোগ বাড়তে পারে আর্জেন্টিনার। আর রক্ষণে খানিকটা বাড়তি মনোযোগী মন্তিয়েলের ওপর দায়িত্বটা থাকবে এমবাপেকে আটকানোর।
সবশেষ অনুশীলনে কোচ স্ক্যালোনিকে ৪-৪-২ ছকেও অনুশীলন করাতে দেখা গেছে। তখন লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে ডি মারিয়ার জায়গায় দলে আনা হয়েছে। এই ছকেই ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা। তবে ফাইনালে এই ছকে আর্জেন্টিনাকে দেখা যাবে না, এটা মোটামুটি নিশ্চিতই।
প্রথম দুই চিন্তার মধ্যে কোনটাকে ফাইনালে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেন আর্জেন্টিনা কোচ, সেটাই এখন দেখার বিষয়। প্রথমটা হলে এমবাপেকে আর্জেন্টিনা রুখতে চেষ্টা করবে ৫-৩-২/৩-৫-২ ছকে, সঙ্গে এমবাপের জন্য খানিকটা বাড়তি দায়িত্ব থাকবে রদ্রিগো ডি পলের ওপরও। তাতে ডি মারিয়া থাকবেন বেঞ্চে, সেক্ষেত্রে দ্বিতীয়ার্ধের জন্য একটা বদলির বিকল্প থাকবে তার হাতে।
আর যদি দ্বিতীয়টাকে প্রাধান্য দেন স্ক্যালোনি, ফরাসি রক্ষণে শুরু থেকেই আক্রমণ করতে চান, তাহলে ডি মারিয়া আসবেন একাদশে। মেসি ও ডি মারিয়াকে সঙ্গে নিয়ে স্ক্যালোনির দল সরাসরি ও প্রথাগত আর্জেন্টাইন আক্রমণাত্মক ধাঁচে চমকে দেওয়ার চেষ্টা করবে ফ্রান্সকে।
এমবাপে আর ডি মারিয়াকে নিয়ে ভাবনা ছাড়াও আরও একটা ভাবনা ঘুম হারাম করে দিয়েছে স্ক্যালোনির। সেটা হচ্ছে বিশ্বকাপের শিরোপাটা। আর্জেন্টিনাকে তাদের তৃতীয় বিশ্বকাপটা এনে দিতে চান স্ক্যালোনি। সেটা যে কোনো মূল্যেই হোক।
এনইউ/এটি