গোল্ডেন বল ও বুটের দৌড়ে আলোচনায় থাকবেন যারা
রোববার রাত থেকে মাঠে গড়াবে ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ফুটবল বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের শিরোপা জেতা ছাড়াও বেশ কয়েকটি পুরস্কারের প্রতি দৃষ্টি থাকে সেরা খেলোয়াড়দের। সর্বোচ্চ গোলদাতা পান গোল্ডেন বুট আর টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার পান গোল্ডেন বল। ব্যতিক্রম ব্যতীত সেমিফাইনাল ও ফাইনালে পৌঁছানো দলগুলো থেকেই কেউ না কেউ জেতেন সম্মানজনক পুরস্কার দুটি।
এবারের টুর্নামেন্টে এই দুই পুরস্কারের দৌড়ে কারা এগিয়ে থাকছেন চলুন সেটা দেখে নিই এক নজরে।
বিজ্ঞাপন
লিওনেল মেসি
আর্জেন্টিনার ৩২ বছরের শিরোপা খরা ঘোচাতে ৩৫ বছর বয়সী লিওনেল মেসির জন্য সম্ভবত এটাই শেষ সুযোগ। টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত থাকা দলটি বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে এসেছে এবারের বিশ্বকাপে। আর্জেন্টিনার দলের প্রাণ ভোমরা এই লিওনেল মেসি। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও শিরোপা ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়নি মেসির। তবে ঠিকই জিতেছিলেন টুর্নামেন্ট সেরার গোল্ডেন বল পুরষ্কার। চলতি বছরেও ফর্মটা বেশ ভালই যাচ্ছে মেসির। জাতীয় দল এবং ক্লাব পর্যায়ে নিয়মিতই করছেন গোল।এছাড়া সতীর্থদের দিয়ে গোলও করাচ্ছেন সাত বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা। সেই বিবেচনায় এই বিশ্বকাপে যদি আর্জেন্টিনা সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালে পৌঁছাতে পারে তাহলে মেসির হাতে উঠতে পারে গোল্ডেন বল ও গোল্ডেন বুটের পুরষ্কার। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা কাপে মেসি গোল্ডেন বল ও গোল্ডেন বুট দুটিই পেয়েছিলেন। জাতীয় দলের হয়ে এ পর্যন্ত ১৬৪ ম্যাচে ৯০ গোল করেছেন মেসি। তাই শেষ বিশ্বকাপটা নিজের করে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবেন গ্রহের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার।
নেইমার
সম্প্রতি নেইমার বলেছেন- নিজের শেষ বিশ্বকাপ হিসেবেই এবারের বিশ্বকাপ খেলবেন তিনি। যদিও বয়স ৩০। আরেকটি বিশ্বকাপ খেলতেই পারেন। তবে ঘন ঘন ইনজুরি ও বির্তকিত কর্মকান্ডে নেইমারের স্বাভাবিক খেলায় বেশ ব্যাঘাত ঘটে। তবে সম্প্রতি চমৎকার ফর্মে আছেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। তাই এই বিশ্বকাপে বিশেষ কিছু করতে চান নেইমার। দলটিও বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। নেইমার জাতীয় দলের হয়ে ১২১ ম্যাচে ৭৫ গোল করেছেন। ব্রাজিলিয়ান এই তারকার এখনো বিশ্বকাপটা ছুঁয়ে দেখা হয়নি। তাই এবার হয়তো সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবেন তিনি। নিজে গোল করা ও সতীর্থদের দিয়ে অহরহ গোল করাতে পারদর্শী নেইমার এই বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বল পাওয়ার অন্যতম দাবিদার।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
বয়স প্রায় ৩৮ ছুঁই ছুঁই। এই বয়সে অন্যরা বুটজোড়া তুলে রেখে কোচিং বা অন্যদিকে নজর দেয়। কিন্তু সেখানে ব্যতিক্রম ৫ বার ব্যালন ডি’অর জয়ী পর্তুগাল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো । সুঠাম দেহের অধিকারি রোনালদোর গতি কিছুটা কমে গেলেও গোল করার ক্ষুধা এখনো কমেনি। নিয়মিত গোল করেই যাচ্ছেন। জাতীয় দলের হয়ে ১৯১ ম্যাচে তার মোট গোল ১১৭টি। বিপক্ষের গোলপোস্টে এখনো আতংকের নাম এই রোনালদো । দল যদি কোয়ার্টার কিংবা সেমিফাইনালে পৌছতে পারে তাহলে রোনালদো হয়ে উঠতে পারেন গোল্ডেন বুটের অন্যতম দাবিদার।
কিলিয়ান এমবাপ্পে
২৩ বছর বয়সী ফ্রান্সের এই ফরোয়ার্ড ২০১৮ বিশ্বকাপে চমক দেখিয়েছেন। তার দুরন্ত গতির কাছে হিমশিম খেয়েছে পৃথিবীর সেরা সেরা রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রাও। প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদও পেয়েছেন তরুণ বয়সে। এটা তার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়েও রয়েছেন ভালো ফর্মে। তাকে নিয়ে নিশ্চয়ই আলাদা ক্লাস করছেন বিপক্ষ দলের কোচ ও রক্ষণভাগ। দুরন্ত গতি, অসাধারণ স্কিল ও গোল করার চরম ক্ষুধাই এ বিশ্বকাপে তাকে আরও সাফল্য এনে দিতে পারে। গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে এমবাপ্পে থাকবেন বেশ জোরালোভাবেই। এমবাপ্পে ফ্রান্সের হয়ে ৫৯ ম্যাচে ২৮ গোল করেছেন।
ডি মারিয়া
৩৪ বছর বয়সী ডি মারিয়া মূলত ফরোয়ার্ড হলেও তিনি দলটির অন্যতম প্লে-মেকার। মিডফিল্ডেও রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কোপা আমেরিকা ও ফিনালিসিমা ট্রফি জয়ে ডি মারিয়া রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দুটি ম্যাচেই গোল করেছেন তিনি। কোপা আমেরিকায় ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন ডি মারিয়া। এই বিশ্বকাপেও মেসির পর ডি মারিয়াই আর্জেন্টিনার অন্যতম ভরসা। গোল করা ও গোল করাতে সহায়তায় ডি মারিয়া বেশ সফল। ডি মারিয়া জাতীয় দলের হয়ে ১২৪ ম্যাচে ২৭ গোল করেছেন। আর্জেন্টিনা যদি ফাইনালে ওঠে আর ডি মারিয়া যদি ইনজুরিতে না পড়েন তাহলে গোল্ডেন বলের অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠতে পারেন এই প্লে-মেকার।
হ্যারি কেইন
২৯ বছর বয়সী ইংল্যান্ড স্ট্রাইকারের এটা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে ৬ গোল করে জিতে নিয়েছিলেন গোল্ডেন বুট। এবারও তারকা ঠাসা ইংলিশদের অন্যতম ভরসা এই হ্যারি কেন। এই বিশ্বকাপেও গোল্ডেন বুটের দৌড়ে ভালভাবেই থাকবেন এই গোলমেশিন। ইংল্যান্ডের হয়ে ৭৫ ম্যাচে ৫১ গোল করেছেন এই স্ট্রাইকার।
লুকা মডরিচ
বয়সটা ৩৭, তবুও ক্রোয়েশিয়া এবং রিয়াল মাদ্রিদের মাঝমাঠের অন্যতম সেনাপ্রধান এই মিডফিল্ডার। গত বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়াকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু বিশ্বকাপ জয় অধরাই থেকে যায় মডরিচদের। তবে আসরের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল পেয়েছিলেন এই মিডফিল্ডার। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে ১৫৪ ম্যাচে ২৩ গোল করেছেন তিনি। এই আসরেও গোল্ডেন বল পাওয়ার লড়াইয়ে থাকবেন লুকা মডরিচ।
লাউতারো মার্টিনেজ
২৫ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার ইন্টার মিলান ও জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত গোল করে যাচ্ছেন। মেসি এবং ডি মারিয়ার বলের যোগান পেলে গোল করতে কাপর্ণ্য করেন না এই ফরোয়ার্ড। তিনি জাতীয় দলের হয়ে ৪০ ম্যাচে ২১ গোল করেছেন। জীবনের প্রথম বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুটের দৌড়ে ভালভাবেই থাকবেন লাউতারো।
লুইস সুয়ারেজ
৩৫ বছর বয়সী উরুগুয়ে স্ট্রাইকারের এটাই শেষ বিশ্বকাপ। বার্সা ও অ্যাথলেটিকোর সাবেক এই ফরোয়ার্ড এখনো বিপক্ষের গোলপোস্টে এক আতংকের নাম। শেষ বিশ্বকাপটা যে নিজের মত করে খেলতে চাইবেন এ স্ট্রাইকার, তাতে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। সুয়ারেজ জাতীয় দলের হয়ে ১৩৪ ম্যাচে ৬৮ গোল করেছেন। এবারের বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুটের অন্যতম দাবিদার সুয়ারেজ।
কেভিন ডি ব্রুইন
৩১ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার ম্যানসিটি ও বেলজিয়ামের মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা। বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডারও তিনি। জাতীয় দলের হয়ে ৯৩ ম্যাচে ২৫ গোল করেছেন এই প্লে-মেকার। এই বিশ্বকাপে বেলজিয়াম দলের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে ডি ব্রুইনের উপর। দলটির সবাই আছেন দারুণ ফর্মে। তাই সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনাল পর্যন্ত পৌছতে পারলে কেভিন ডি ব্রুইনের হাতে উঠতে পারে গোল্ডেন বলের পুরষ্কার।
রবার্ট লেওয়ানডস্কি
৩৪ বছর বয়সী পোল্যান্ড ও বার্সার এই স্ট্রাইকার বিগত কয়েক বছর ধরে নিজেকে গোল মেশিন রূপে তুলে ধরেছেন। জাতীয় দলের হয়েও ভাল ফর্মে রয়েছেন। ১৩৪ ম্যাচে করেছেন ৭৬ গোল। এই বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুটের রেসে প্রথম দিকেই থাকবেন লেভা।
এছাড়া নেদারল্যান্ডসের স্ট্রাইকার মেমফিস ডিপেই, ইংল্যান্ডের মিডফিল্ডার জুডে বেলিংহাম, স্ট্রাইকার ফিল ফোডেন, ওয়লেসের ফরোয়ার্ড গ্যারেথ বেল, ফ্রান্সের ফরোয়ার্ড উসমান দেম্বেলে, স্পেনের ফরোয়ার্ড আলভারো মোরাত্তা, বেলজিয়ামের ফরোয়ার্ড ইডেন হ্যাজার্ড, ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড রিচার্লিসন, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র চমক দেখাতে পারেন এবারের বিশ্বকাপে।