রাজধানী দোহার শেষপ্রান্তে ও লুসাইল শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত কাতার বিশ্ববিদ্যালয়। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয় এখন আলোচনায় বিশ্বকাপ ফুটবলেও। কারণ দুই সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা এবং স্পেন এখানেই তাদের ক্যাম্প ও অনুশীলন করবে।

শুধু অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে নয়, সংস্কৃতি ও খেলাধূলা চর্চাতেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যথেষ্ট বড় অবকাঠামো। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি স্টেডিয়াম। দশ হাজার আসন বিশিষ্ট এই স্টেডিয়াম অলিম্পিকের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্মিত। আর্জেন্টিনা ও স্পেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুশীলন করবে বলে সাম্প্রতিক সময়ে এখানে তৈরি হয়েছে আলাদা ছয়টি মিনি স্টেডিয়াম।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে হোস্টেলে থাকতেন সেই মেল স্টুডেন্ট হাউজিংয়েই উঠবেন মেসিরা। এজন্য গত দুই মাস আগেই শিক্ষার্থীদের সেই হোস্টেল থেকে শিক্ষকদের হোস্টেলে সাময়িকভাবে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মেল স্টুডেন্ট হাউজিংয়ে ছিলেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন। সেখানকার সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ছিলাম তখনই হোস্টেলের মান ছিল পাঁচ তারকা হোটেলের মতো। সর্বাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাই ছিল। দুই মাসের মধ্যে নিশ্চয়ই আরো অনেক কিছুই সংযোজন ঘটেছে।’ বাংলাদেশের দুই শীর্ষ ও জনপ্রিয় ক্লাব আবাহনী এবং মোহামেডানেই জিম নেই। সেখানে কাতারের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হোস্টেলেই আছে সর্বাধুনিক জিম, সুইমিং পুল সহ আন্তর্জাতিক মানের সকল কিছুই। 

আর্জেন্টিনা-স্পেন দলের জন্য আলাদা দু’টি হোস্টেল ছাড়তে হয়েছে ছাত্রদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও গত দুই মাসে নিজেদের সাবেক আবাসস্থলে যেতে পারেননি শিক্ষার্থীরা। জায়গাটা সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বলয়ে বেষ্টিত। ফলে সেখানে জনসাধারণ তো বটেই, বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদেরও প্রবেশাধিকার নেই সেভাবে।

কাতার  বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামীকালই শেষ কর্মদিবস। বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এই সময়ে শিক্ষার্থীরা হোস্টেলে থাকতেও পারেন আবার চাইলে অন্যত্রও যেতে পারেন। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও অনেক শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে থাকবেন যদি মেসিদের সামনে থেকে এক নজর দেখা যায়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হলে-হলে বিশ্বকাপ নিয়ে তুমুল আড্ডা চলে। এখানে সবার মধ্যে ফুটবল নিয়ে আন্তরিকতা থাকলেও উন্মাদনা বাংলাদেশের মতো নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে আর্জেন্টিনা-স্পেনের ক্যাম্প করাকে অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে দেখছেন আরাবিক ফর নন নেটিভ স্পিকারস সেন্টারের শিক্ষক ঈমান ফৌজান আবু শিহাব, ‘বিগত কোনো বিশ্বকাপে কোনো দল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অনুশীলন ও আবাসন করেছিল কিনা জানা নেই। নিঃসন্দেহে এটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীদের জন্য আজীবন স্মরণ করে রাখার মতো একটি ব্যাপার হবে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ও সেজেছে বিশ্বকাপের আমেজে। রাস্তাগুলোতে ঝুলছে বিশ্বকাপের বোর্ড। স্টুডেন্টস এক্টিভিটিজ রুমে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর ছোট পতাকাও ঝুলছে। 

সুবিশাল ক্যাম্পাস। পুরো ক্যাম্পাস পরিদর্শন করতে একদিন পুরো সময় প্রয়োজন। আর্জেন্টিনা-স্পেনের আগমন উপলক্ষ্যে ক্যাম্পাসের অনেক জায়গা সংরক্ষিত। নিরাপত্তা বলয়ের নির্দেশনার মধ্যে থেকে স্বল্প সময়ে লাইব্রেরি, ক্যাফে, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ সহ বেশ কিছু স্থাপনা পরিদর্শিত হয়েছে। সব কিছুই পরিপাটি।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী। নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি। একটি বিভাগ ছাড়া বাকি সব বিভাগেই নারী-পুরুষ পৃথক ক্লাস। অ্যাকাডেমিক পৃথক ক্লাসের মতো নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা মাঠ, জিমনিশিয়াম, সুইমিংপুলও রয়েছে। বাংলাদেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলই অকেজো, সেখানে নারীদের আলাদা ব্যবস্থা তো আকাশ-কুসুম বিষয়।

বিশাল ক্যাম্পাসে রয়েছে বেশ কয়েকটি পার্কিং স্টেশন। প্রতিটি বিভাগের জন্যই আলাদা পার্কিং। শিক্ষক, অফিসারদের গাড়ি তো রয়েছেই, অনেক শিক্ষার্থীও আসেন গাড়ি নিয়ে। হোস্টেল থেকে বিভাগের দূরত্ব এবং ক্যাম্পাসের বৈকালিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে কাতারি ও নন-কাতারি উভয় শিক্ষার্থীই গাড়ি ব্যবহার করেন। স্বল্প-সময়ের পরিদর্শনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক বেশ মধুরই দেখা গেল। এক সিনিয়র নারী শিক্ষক নিজ হাতেই বিদেশি এক শিক্ষার্থীকে কফি বানিয়ে আপ্যায়ন করালেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা অনেকটা বিরল দৃশ্যই। 

বাংলাদেশের চার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম। আয়তন, অবকাঠামোগতভাবে এই চার সায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে এগিয়ে। সত্তর-আশির দশকে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পড়াশোনা-গবেষণার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও রেখেছিল অবদান। ১৯৭৮ সালে যুব এশিয়া কাপ ফুটবলে বাংলাদেশ দলের ক্যাম্প হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে। বাংলাদেশ ও সফরকারী বিদেশি ফুটবল দলও অনুশীলন করতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন আর সেই চর্চা নেই। অ্যাকাডেমিক র‍্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে, তেমনি ক্রীড়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি খুব একটা হচ্ছে না।

এজেড/এনইআর