কাতার বিশ্বকাপে যা কিছু নতুন
আর মাত্র ৬ দিন বাদে কাতারের মাঠে গড়াবে ফুটবল বিশ্বকাপ। গ্রেটেস্ট শো অন আর্থখ্যাত বিশ্ব ফুটবলের এ আসরকে নিয়ে উন্মাদনার শেষ নেই ফুটবলপ্রেমীদের। ইতোমধ্যে কাতারে পাড়ি জমাতে শুরু করেছেন বিভিন্ন দেশের ভক্ত-সমর্থকরা। আগামী ২০ নভেম্বর কাতার-ইকুয়েডর ম্যাচের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠবে ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ ক্রিড়াযজ্ঞের।
উরুগুয়ের মাঠে ১৯৩০ সালের বিশ্বকাপ দিয়ে শুরু হয়ে ফুটবল বিশ্বকাপের। এরপর গত ৯২ বছরে আয়োজিত হয়েছে আরও ২০টি বিশ্ব আসর। ২০১৮ সালে রাশিয়ার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ ফুটবলের সর্বশেষ আসর। তবে সেবারের বিশ্বকাপ থেকে এবারের বিশ্বকাপ অনেকটা ভিন্ন। বেশকিছু পরিবর্তন কাতারের এ বিশ্ব আসরকে করে তুলেছে অনন্য ও বৈচিত্র্যময়।
বিজ্ঞাপন
মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের আয়োজক
কাতারের ফুটবল বিশ্বকাপই প্রথম কোনো বিশ্বকাপ, যা আয়োজিত হচ্ছে কোনো মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশে। ফুটবলের বিশ্ব আসরের আয়োজক দেশ হিসেবে কাতারকে নিয়ে সমালোচনার অন্ত ছিল না বিগত কয়েক বছরে। শুরুর দিকে পশ্চিমা অনেক দেশই মরুর দেশটিকে আয়োজক হিসেবে মেনে নিতে চায়নি। এমনকি ফিফার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটারও ছিলেন কাতারকে আয়োজক বানানোর ঘোর বিরোধী। কিন্তু কোনো সমালোচনাই থামাতে পারেনি কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজন। কটু কথায় কান না দিয়ে বিশ্ব আসরের সফল আয়োজনের দিকে একটু একটু করে এগিয়েছে মরুভূমির দেশটি।
অফসাইড টেকনোলজি
কাতার বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো থাকছে অফসাইড টেকনোলজি। সাইডলাইন রেফারির অফসাইড সিদ্ধান্তকে আরো বেশি দ্রুত ও যথার্থ করা লক্ষ্যে এবারই প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে সেমি-অটোমেটেড অফসাইড পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিফা। জুলাইয়ে এ সংক্রান্ত ঘোষনা দেয় বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বিশ্বকাপের সময় পরিবর্তন
ফুটবল বিশ্বকাপগুলো সাধারণত আয়োজিত হয়ে থাকে জুন-জুলাই মাসে। কিন্তু কাতারের এই বিশ্বকাপেই প্রথমবার টুর্নামেন্টটি আয়োজিত হবে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। মূলত জুন-জুলাই মাসের কোনো কোনো সময় মধ্যপ্রাচ্যের অনেক অঞ্চলের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিফা।
বদলি খেলোয়াড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি
সবশেষ রাশিয়া বিশ্বকাপে বদলি খেলোয়াড়ের সংখ্যা ছিল মোট তিনজন। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে পরিবর্তন আনা হয়েছে সে নিয়মেও। কাতারে অনুষ্ঠিতব্য এবারের বিশ্বকাপে একই দলের মোট পাঁচজন খেলোয়াড় বদলানো যাবে। শুধু তাই নয়, কোনো খেলা যদি অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় সেক্ষেত্রে আরও একজন খেলোয়াড় বদল করার সুযোগ পাবে দলগুলো। মূলত করোনাভাইরাসের পরবর্তী সময়ে পাঁচজন বদলি খেলোয়াড়ের নিয়মটি করেছিল ফিফা। নিয়মটিতে সুফল পাওয়ার কারণে এবারের ফুটবল বিশ্বকাপেও সেটি অব্যহত রেখেছে ফুটবল বিশ্বের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
স্কোয়াডে খেলোয়াড় সংখ্যা
ফুটবল বিশ্বকাপে সাধারণত স্কোয়াড হয়ে থাকে ২৩ জনের। কিন্তু কাতারের ফুটবল বিশ্বকাপে হঠাৎ করেই বাড়ানো হয়েছে সে সংখ্যা। এবারের ফুটবল বিশ্বকাপে ২৬ জনের দল নিয়ে কাতারে যাবে দলগুলো। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ও কাতারের আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিফা। ইতোমধ্যে দল ঘোষণা সম্পন্ন করে ফেলেছে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ দেশ।
প্রথমবার নারী রেফারি
কাতারের ফুটবল বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ৩৬ জন রেফারি। প্রথমবারের মতো সেই রেফারি প্যানেলে জায়গা পেয়েছেন তিনজন নারী রেফারি। এই তিনজন বাদে সহকারী রেফারি হিসেবে থাকছেন আরও তিনজন নারী রেফারি।
সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ আয়োজক
কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজনটা আসলেই অনেক বড় চমক। কারণ বিশ্ব আসরের মতো বিশাল এক টুর্নামেন্ট আয়োজক দেশের আয়তন মাত্র ১১ হাজার বর্গ কিলোমিটার, যা কিনা বাংলাদেশের চেয়েও প্রায় ১৩ গুণ ছোট! তবুও সফল টুর্নামেন্ট আয়োজনে বদ্ধ পরিখর কাতার। টুর্নামেন্টে যানজট সমস্যা এড়াতে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ চলাকালীন অফিসের সময়সূচি কমিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া বিশ্বকাপের সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষনাও দিয়েছে দেশটি।
এনইআর