বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আগে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ছিল। ফিফার অর্থায়নে মতিঝিল-আরামবাগ আলাদা ভবন নির্মাণ করে। প্রায়  দেড় যুগ বাংলাদেশের ফুটবলের প্রধান কার্যালয় মতিঝিল আরামবাগস্থ। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাফুফের ঢাকা মহানগরী লীগ কমিটির অফিস রয়ে গেছে। এক কিলোমিটারের মধ্যে বাফুফের দু'টি অফিস কার্যক্রম করছে সেটাও প্রায় দেড় যুগ। 

ঢাকা মহানগর ফুটবল লিগ কমিটি বাফুফের একটি স্ট্যান্ডিং কমিটি হলেও দীর্ঘদিন এই কমিটির অধীনে দেশের ঘরোয়া ফুটবল চলে আসায় এর একটা স্বাতন্ত্র্য জায়গা তৈরি হয়েছে। এই কমিটির আলাদা ব্যাংক হিসাবও রয়েছে। যেই হিসাবের মাধ্যমে মহানগরের আওতাধীন ক্লাবগুলোর লেনদেনও হয়। এত দিন এভাবে চললেও সর্বশেষ বাফুফের ফিন্যান্স কমিটির সভায় এই হিসাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনায় মহানগর লিগ কমিটির লেনদেনগুলো বাফুফের কেন্দ্রীয় হিসাবের আওতায় আনার কথা হয়েছে। এতে বিপত্তি দেখছেন বাফুফে নির্বাহী সদস্য ও পাইওনিয়ার লিগ কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান মহিদুর রহমান মিরাজ,‌  ফিন্যান্স কমিটির সভায় এ রকম একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে শুনেছি। এ রকমটি হলে মহানগর লিগ কমিটির কাজের আওতা অনেকটা কমে যাবে। এই কমিটির ভবিষ্যতও বড় শঙ্কার মধ্যে পড়বে।'

মহানগর লিগ কমিটির বর্তমান হিসাবে কোনো সমস্যা দেখছেন না নির্বাহী সদস্য ও মহানগর লিগ কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান ইলিয়াস হোসেন,‌ বেশ সুন্দরভাবে পাইওনিয়ার লিগ সমাপ্ত হয়েছে। ক্লাব, রেফারি, গ্রাউন্ডসম্যান কারো কোনো অর্থ বকেয়া নেই। সব কিছুই সুন্দরভাবে পরিশোধিত হয়েছে। ' বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে রেফারিরা য়েখানে বকেয়ার জন্য আন্দোলন করছেন সেখানে পাইওনিয়ারে রেফারিদের অর্থ পরিশোধ করে দারুণ নজির স্থাপন করেছে মহানগর লিগ কমিটি।

কিছু দিন আগে সমাপ্ত হওয়া পাইওনিয়ার লিগে এন্ট্রি ফি ছিল ১০ হাজার। পাইওনিয়ারের এন্ট্রি ফি বাবদ বাফুফের ব্যাংক হিসাবে জমা আছে ছয় লাখ টাকার উপরে। নিয়ম অনুসারে যে টাকা মহানগর লিগ কমিটিতে থাকার কথা। এই বিষয়ে পাইওনিয়ারের ডেপুটি চেয়ারম্যান মেরাজ বলেন,‌ পাইওনিয়ারের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় এবং ক্লাবগুলো খেলতে খুব উৎসাহী ছিল। এজন্য ফেডারেশন এন্ট্রি আহ্বান করেছিল এবং সেখানে অর্থ জমা হয়েছে। আমরা এখনো সেই অর্থ পাইনি'। মহানগর লিগ কমিটির পক্ষ থেকে ফেডারেশনের কাছে সেই অর্থ চাওয়া হয়েছে। অন্য দিকে মহানগর লিগ কমিটির অফিস ও হিসাব আলাদা হলেও এই অফিসের বেতনভুক্ত স্টাফদের বেতন আবার বাফুফের হিসাব থেকেই হয়। অনেক সময় মহানগর লিগ কমিটি স্পন্সর জোগাড় করতে ব্যর্থ হলে বাফুফে থেকেই জুনিয়র ডিভিশনের খেলা চালানো হয়।

মহানগরী লিগ কমিটির ব্যাংক হিসাব আলাদা দীর্ঘদিন থেকেই। মহানগর ফুটবল লিগ কমিটির চেয়ারম্যান যিনি হন তিনি ও কো চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন হয়। বর্তমানে মহানগর লিগ কমিটির ব্যাংক হিসাবে স্বাক্ষরের অধিকার রয়েছে কমিটির চেয়ারম্যান ও বাফুফে সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান, নির্বাহী সদস্য ও মহানগরের কো-চেয়ারম্যান ইলিয়াস হোসেন ও আমের খানের। এই তিন জনের যে কোনো দুই জনের স্বাক্ষরে অর্থ উত্তোলন হয় মহানগর লিগ কমিটি থেকে। আর ফুটবল ফেডারেশনে চেকে স্বাক্ষর করেন অন্য দুই জন। একই প্রতিষ্টানে ভিন্ন ভিন্ন স্বাক্ষরদাতা থাকায় খানিকটা জটিলতাও রয়েছে। 

ফুটবল ফেডারেশনে এ রকম হিসাব সংক্রান্ত জটিলতা নতুন কিছু নয়। স্কুল ফুটবল কমিটির এক সময় আলাদা হিসাব ছিল। এ নিয়েও অনেক সমস্যা হয়েছে। এখন আকস্মিকভাবে মহানগরের হিসাব নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাফুফের নির্বাহী কমিটির একজন বলেন, ফুটবল ফেডারশেনের কিছু ইস্যু উঠলেই ফিফা-এএফসির কথা শোনা যায়। মহানগর লিগ কমিটির আলাদা হিসাব দীর্ঘদিন এতদিন সমস্যা না হলে এখন ফিফা-এএফসি'র কথা বলা হচ্ছে কেন। পাইওনিয়ার লিগের আগে এই মহানগর লিগ কমিটির অধীনে তৃতীয় বিভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তখন এই প্রসঙ্গ আসেনি কেন। 'প্রাতিষ্ঠানিক দিক থেকে একটি সংস্থার একটি হিসাব ও একই স্বাক্ষরদাতা থাকা শ্রেয়।

২০০৭ সাল থেকে পেশাদার লিগ শুরু হয়েছে। পেশাদার লিগ কমিটির অধীনে এই লিগ পরিচালিত হচ্ছে। সত্তর-আশির দশকে জমজমাট লিগ পরিচালিত হতো ঢামফার মাধ্যমে ঢাকা মহানগরী ফুটবল কমিটি। ঢামফার টিকিটের অর্থ দিয়েই মূলত ফেডারেশন পরিচালিত হতো সেই সময়। ফুটবল ফেডারেশন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ছেড়ে গেলেও ঢামফা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই রয়ে গেছে। কয়েক বছর আগে ঢাকা মহানগর ফুটবল লিগ কমিটি সুসজ্জিতকরণও হয়েছে। 

বাফুফে সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান ঢাকা মহনাগর ফুটবল লিগ কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর একটি তৃতীয় বিভাগ লিগ এবং পাইওনিয়ার সম্পন্ন করেছেন। দ্বিতীয় বিভাগ লিগের কার্যক্রম চলছে। সমাপ্ত দু'টি লিগেরই পৃষ্ঠপোষক ছিল তার প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। দ্বিতীয় বিভাগেও বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় হওয়ার কথা। 

বসুন্ধরা কিংসের সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান বাফুফে সহ-সভাপতি হিসেবে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে নেই। তার বিনা সম্মতিতে মহানগর লিগ কমিটি হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি সেই কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি করেন। ফেডারেশনের আরো অনেক বিষয়ে তিনি অজ্ঞাত। আবার তিনিও অনেক সময় কমিটির সভায় অনুপস্থিত থাকেন। ৭ জুলাই অনুষ্ঠিত ফিন্যান্স কমিটির সভায় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। নির্বাহী কমিটির সভাতেও তিনি অনুপস্থিত থাকেন প্রায়। ইমরুল হাসানের সঙ্গে বাফুফের খানিকটা দূরত্ব সেটা স্পষ্টত দৃশ্যমান। মহানগর লিগ কমিটির হিসাব বিলুপ্ত হয়ে বাফুফের হিসাবে অর্ন্তভূক্ত হলে সেই দূরত্ব আরো বেড়ে নতুন সংকট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে। 

এজেড/