করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক দুরবস্থা বার্সেলোনাকে ভোগাচ্ছে বেশ। প্রায় ১০০০০ কোটি টাকার ঋণ ঝুলছে মাথার ওপর। আয়ের পথ বন্ধ অনেকটাই, ফলে লা লিগার নিয়মানুসারে আশংকাজনকভাবে নেমে গেছে দলটির ব্যয়ের সীমাও, যার মানে দাঁড়াচ্ছে ঋণ নিয়ে হলেও খেলোয়াড়দের বেতন, ক্লাবের ব্যয়, দলবদলের বাজারে নামতে পারবে না ক্লাবটি। এই কারণে গেল গ্রীষ্মকালীন দলবদল মৌসুমে ক্লাবের সবচেয়ে বড় তারকা লিওনেল মেসিকেও নতুন চুক্তি দিতে পারেনি ক্লাবটি। এমন ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি থেকে ক্লাবকে বাঁচাতে এখন ৫০০০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানালেন ক্লাবের সহ-সভাপতি এদুয়ার্দ রোমেউ। 

দলটির কাছে দুটো ঋণের প্রস্তাব ছিল। একটা ছিল সিভিসি ক্যাপিটাল পার্টনার্সের পক্ষ থেকে। সেই চুক্তিটা হয়ে গেলে বার্সেলোনা এককালীন ঋণ পেত ২৭০০ কোটি টাকা, যা যোগ হতো ক্লাবের আয় হিসেবে, যে কারণে ব্যয়ের সীমা বেড়ে যেত ক্লাবটির। 

তবে সে চুক্তির অসুবিধাটা হচ্ছে, এর ফলে টিভিস্বত্বের ১০ শতাংশ ভাগ দিতে হতো প্রতিষ্ঠানটিকে, তাও আবার ৫০ বছর ধরে। যার ফলে অন্তত ৮২৫০ কোটি টাকা দিতে হতো তাদের। ২৭০০ কোটি টাকার বিপরীতে এই পরিমাণ অর্থ দেওয়ার প্রস্তাবকে ‘বাজে’ বলেই আখ্যা দিয়েছেন রোমেউ। এই চুক্তিতে সইও করবে না বার্সা, এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন তিনি।

এদুয়ার্দ রোমেউ/ফাইল ছবি

ক্লাবটি ইতোমধ্যেই সাবেক চেলসি ডিফেন্ডার আন্দ্রেয়াস ক্রিশ্চিয়ানসেন আর এসি মিলানের ফ্র্যাঙ্ক কেসির সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে সম্মতিতে পৌঁছেছে। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় তাদেরও নাম নিবন্ধন করাতে পারছে না ক্লাবটি।

সম্প্রতি স্পোর্তকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বার্সা সহ-সভাপতি এর পেছনে দায় দিলেন ক্লাবের ঋণাত্মক মূলধনকে। বললেন, ‘এই সংখ্যাটা যে ক্ষতিটা সবচেয়ে বেশি করছে, তা হলো আমাদের এটা সম্পদের ভারসাম্যহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের ঋণাত্মক মূলধন এখন ৫০ কোটি ইউরোর (প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা)।’

এখানেই শেষ নয়, এ নিয়ে যদি এখনই পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে বার্সেলোনার ক্ষতি বেড়ে যেতে পারে আরও ১৫০০ কোটি টাকা। বার্সেলোনা কর্তার ভাষ্য, ‘চলতি মৌসুমে ক্ষতির খাতায় আরও ১৫ কোটি ইউরো যোগ হবে, যদি আমরা কিছু না করি।’ 

এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে কী চাই বার্সার? রোমেউর উত্তর, ‘আমি আগেও বলেছি, কেউ যদি আমাদের ৫০ কোটি ইউরো দেয়, সেটাই কেবল বার্সাকে বাঁচাতে পারে।’

আয় কমে যাওয়ার কারণে ক্লাবের ব্যয়ের সীমাও কমে গেছে, যার সঙ্গে দলের ব্যয়কে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে বার্সেলোনার সিনিয়র বেশ কয়েকজন তারকা বেতন কমাতে সম্মত হয়েছেন। কারো কারো চুক্তি আবার নতুন করে ঢেলে সাজাতে হয়েছে। 

এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে এখন বার্সার বিপুল অর্থ প্রয়োজন। বার্সার মতো না হলেও লা লিগার বাকি সব ক্লাবও বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে করোনাকালে। সিভিসি লা লিগার ক্লাবগুলোকে সেই অর্থ দেওয়ারই প্রস্তাব দিয়েছিল। লা লিগার প্রায় সব ক্লাব তা মেনে নিলেও বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদ তা মানেনি। বরং সিভিসি ও স্প্যানিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগও তুলে বসেছে।

এই চুক্তি প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে রোমেউ বলেন, ‘যে চাপ আমরা সহ্য করেছি, আর যে ‘ফেয়ার প্লে’র ভাবনা সবসময় আমাদের মাথায় থাকে, তা আমলে আনলে এটা বেশ বাজে একটা চুক্তি হতো। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেও এটা এমনই মনে হচ্ছে, আর আমি মনে করি আমাদের সভাপতিও এই বিষয়ে বেশ পরিষ্কার।’

এনইউ