স্বাভাবিক সময় হলে এই মাসেই বেজে যেত ফুটবল বিশ্বকাপের দামামা। তবে এবার বিশ্বকাপের ভেন্যু মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে হওয়ায় তুলনামূলক শীতের সময় নভেম্বরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ফুটবলের বিশ্বআসর। এই আসরকে আরও একটা কারণেও বিশেষ হিসেবে ধরা হচ্ছে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসির মতো মহাতারকারা পৌঁছে গেছেন ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে। ধারণা করা হচ্ছে এটাই তাদের শেষ বিশ্বকাপ।

দুই মহাতারকার কেউই অবশ্য এ নিয়ে কিছু বলেননি এখনো। মেসি জানিয়েছেন বিশ্বকাপের পর সবকিছু ঠিক করবেন। রোনালদো মুখই খোলেননি। তবে মেসিকে আরও একটা বিশ্বকাপে দেখতে তার সতীর্থ লিয়ান্দ্রো পারেদেস নিজের জায়গাটাও ছেড়ে দিতে রাজি, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন পিএসজি মিডফিল্ডার।

সম্প্রতি আর্জেন্টাইন সংবাদ মাধ্যম রেডিও লা রেডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আশা করছি এটাই মেসির শেষ বিশ্বকাপ হবে না। চার বছর পর আরও একটা বিশ্বকাপে খেলাটা কঠিন। তবে এক কাজ করা যায়, মেসিকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার বানিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে আমি আরও একটু নিচে খেলব। হা হা হা।’

‘মেসির জন্য বিশ্বকাপ/কোপা আমেরিকা জিততে চাই’ – এমন একটা কথা আগে কান পাতলেই শোনা যেত আর্জেন্টিনা শিবিরে। পারেদেস ঠিক সে বাক্যটা না বললেও, জানালেন বিশ্বকাপ জিতলে নিজের চেয়ে বেশি খুশি হবেন মেসির জন্যই। তার কথা, ‘যদি আমরা বিশ্বকাপ জিতি, তাহলে আমি নিজের চেয়ে বেশি মেসির জন্য খুশি হবো।’

তবে সেজন্যে তো আগে বিশ্বকাপটা জিততে হবে। সে বিষয়ে পারেদেস বললেন, ‘বিশ্বকাপে সবাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ পাবে। আমরা চেষ্টা করবো।’

আসছে বিশ্বকাপের জন্য আর্জেন্টিনাকে ধরা হচ্ছে হট ফেভারিট। বর্তমানে দল যে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তার জন্য ব্রাজিলের বিপক্ষে দুটো ম্যাচকে বড় করে দেখছেন পারেদেস। দুটো ম্যাচের প্রথমটা ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকায়, সেবার সেলেসাওদের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল আলবিসেলেস্তেরা। পরেরটা গেল বছরের কোপা আমেরিকায়, মারাকানার সেই ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে ২৮ বছরের খরা কাটিয়েছিল মেসির দল। 

পিএসজি মিডফিল্ডারের ভাষ্য, ‘ব্রাজিলের কাছে হেরে ২০১৯ কোপা আমেরিকা থেকে যখন বিদায় নিয়েছিলাম, এরপর থেকেই আমাদের দল ধীরে ধীরে আরও শক্তিশালী হয়েছে, ফলাফলগুলো আমাদের সাহায্য করেছে। মারাকানায় জেতাটা আমাদের বেশ আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। এরপর তো দেখাই গেছে, আমাদের খেলা আরও ভালো হয়েছে। অনেক বড় হাঁফ ছেড়ে বেঁচে ছিলাম আমরা।’

ব্রাজিলের বিপক্ষে এই দুই ম্যাচের দলে অবশ্য কয়েকটা জায়গা ছাড়া বড় পরিবর্তন ছিল না আর্জেন্টিনা দলে। তবু পারেদেস বলছেন, মেসি ছাড়া এই দলে জায়গা পাকা নয় আর কারো। বললেন, ‘(কোচের) সমর্থনটা আমি অনুভব করি, তবে দলে নিজের জায়গা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। এই দলে কেবল একজনেরই জায়গা পাকা, লিও মেসির। বাকিদের প্রমাণ করতে হবে নিজেকে। দিবু (এমিলিয়ানো মার্টিনেজ), কুটি (ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো), রদ্রি (ডি পল), জিও (লো চেলসো), লাওতারো (মার্টিনেজ) সবাই অনেকদিন ধরেই ভালো খেলছে, তবে এখন পর্যন্ত কেবল মেসিরই জায়গা পাকা।’

দলকে এমন পর্যায়ে এনে দিতে কোচ স্ক্যালোনির অবদানটাও কম নয়। সেটাও মনে করিয়ে দিলেন মেসির পিএসজি সতীর্থ, ‘শুরু থেকেই স্ক্যালোনির ওপর অনেক ভরসা করেছিলাম আমরা। একইভাবে তিনিও আমাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। এখন যে দলটা আছে, সেটাকেই তিনি রেখে দিয়েছিলেন। স্ক্যালোনি খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস দেন। তিনি খুবই কাছাকাছি থাকেন, প্রচুর কথা বলেন, কোনো সমস্যা থাকলে সমাধান দেন।’

সবশেষ ইতালি ও এস্তোনিয়ার বিপক্ষে দুই জয় নিয়ে টানা ৩৩ ম্যাচ অপরাজিত আছে আর্জেন্টিনা। যা দলটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ম্যাচ না হারার রেকর্ড। এর আগে আলফিও বাসিলের অধীনে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ৩৩ ম্যাচে অপরাজিত ছিল দলটি। সেই রেকর্ডেই ভাগ বসিয়েছেন মেসিরা। 

তবে আর্জেন্টিনা দলে এ কীর্তি অবশ্য পাত্তা পাচ্ছে না খুব একটা, ‘অপরাজিত থাকাটা ইতিহাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, তবে আমরা এ নিয়ে ভাবছি না। যদি আমরা এ নিয়ে ভাবি, তাহলে আমরা যখন হারব, তখন আমাদের অনেক বেশি ভুগতে হবে।’

টানা ম্যাচ না হারার রেকর্ড গড়েও অবশ্য স্বস্তি ছিল না দলে। সবশেষ ইউরোপীয় দলের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতাটা যে ছিল সেই ২০১৯ সালে। সে কারণে কোচ স্ক্যালোনিও জানিয়েছিলেন ইউরোপীয় দলের বিপক্ষে নিজেদের বাজিয়ে দেখার অভিপ্রায়ের কথা। সেটা ঘুচেছে চলতি মাসে। ইতালি আর এস্তোনিয়ার বিপক্ষে নিজেদের শক্তিসামর্থ্যের প্রমাণ আলবিসেলেস্তেরা দিয়েছে ভালোভাবেই। 

এই দুই ম্যাচ নিয়ে পারেদেসের মূল্যায়ন, ‘আর্জেন্টিনায় অনেক কথা হচ্ছিল ইউরোপীয় দলের বিপক্ষে নিজেদের পরীক্ষা করা নিয়ে। আমরা সেটা ভালোভাবেই করেছি। আমরা ম্যাচে ইতিবাচক ছিলাম, সেটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

এনইউ