আর্সেনালের সামনে সুযোগ ছিল, নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের গায়ে নুনের ছিটা দিয়ে উৎসব করার। টটেনহামের মাঠে তাদেরকে হারাতে পারলেই যে পাঁচ মৌসুম পর আবারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফিরতে পারত তারা। আর তাতে করে টটেনহামের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ স্বপ্নও ধূলিসাৎ হয়ে যেত। তবে মিকেল আরতেতার দল সেটা করতে পারল না। টটেনহামের মাঠে তারা হেরে বসেছে ৩-০ গোলে, লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন দলটির ডিফেন্ডার রব হোল্ডিং। ‘নর্থ লন্ডন ডার্বিতে’ গত ৩৯ বছরে এর চেয়ে বাজেভাবে হারেনি আর্সেনাল।

টটেনহাম হটস্পার স্টেডিয়ামের গ্যালারীতে থাকা ৬২ হাজার সমর্থক জানতেন যেকোনো মূল্যে আর্সেনালকে ঠেকিয়ে দিতে পারলেই বেঁচে থাকবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আশা। তাই তো ম্যাচের শুরু থেকেই গ্যালারীকে রীতিমত উত্তাল করে তুলেছিলেন তারা। আর তাতেই নাভিশ্বাস উঠে গেছে আর্সেনালের।

প্রতিকূল পরিবেশে যদিও শুরুটা ভালোই করেছিল আরতেতার দল। প্রথম দশ মিনিটে বেশ কয়েকবার টটেনহামের বক্সে হানাও দিয়েছিল, তবে বলার মতো কোন সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। ২২ মিনিটে টটেনহাম উইঙ্গার দেজান কুলুসেভস্কির বাড়ানো ক্রসে হেড করতে লাফিয়েছিলেন হিউন মিন সন, তবে শূন্যে  থাকা অবস্থাতেই তাকে ফাউল করে বসেন আর্সেনাল ডিফেন্ডার সেদরিক সোয়ারেস। সেই ফাউলের ফলশ্রুতিতে পাওয়া পেনাল্টি থেকে টটেনহামকে এগিয়ে দেন হ্যারি কেইন।

সেই যে ম্যাচে এগিয়ে গেছে টটেনহাম, আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। বাকি ম্যাচ প্রতিপক্ষের উপর শুধু নিজেদের দাপটই দেখিয়ে গেছেন আন্তোনিও কন্তের শিষ্যরা। টটেনহামের সেই দাপটের কারণেই কিনা এরপর ম্যাচে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখাটা কঠিন হয় পড়ে আর্সেনাল খেলোয়াড়দের জন্য। একের পর এক ফাউল করতে থাকেন তারা। যার ফলে টটেনহাম ফরোয়ার্ড সনকে ঠেকাতে দুবার ফাউল করে সাত মিনিটের মধ্যে দুটি হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় আর্সেনাল ডিফেন্ডার হোল্ডিংকে।

দশজনের আর্সেনালকে এরপর আরও চেপে ধরে স্বাগতিক টটেনহাম। ৩৭ মিনিটে সনের নেওয়া কর্নার থেকে ভেসে আসা বলে টটেনহামের রদ্রিগো বেনতানকুর মাথা ছুঁইয়ে সেটা পাঠান দূরের পোস্টে দাড়িয়ে থাকা কেইনের উদ্দেশ্যে, সেখান থেকে নিচু হেডে বল জালে জড়িয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই স্ট্রাইকার। ৪৩ মিনিটে ম্যাচের একমাত্র ভালো সুযোগটি পায় আর্সেনাল। তবে সে যাত্রায় এডি এনকেতিয়াহর শট দারুণ দৃঢ়তায় ঠেকিয়ে দেন স্পার্স গোলরক্ষক হুগো লরিস।

প্রথম দুই গোলে পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখা সন দ্বিতীয়ার্ধের মিনিট দুয়েকের মধ্যেই নিজে গোল করে ম্যাচ আর্সেনালের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যান। আর্সেনাল ডিফেন্ডার গ্যাব্রিয়েল বক্সের মাঝে কেইনকে কোনোমতে রুখতে পারলেও বল ক্লিয়ার করতে পারেননি। দ্রুত প্রতিক্রিয়ায় সেই বল জালে পাঠিয়ে দেন সন। প্রিমিয়ার লিগে চলতি মৌসুমে এটি তার ২১তম গোল। গোল্ডেন বুটের দৌড়ে এখন লিভারপুলের মোহামেদ সালাহ’র চেয়ে এক গোল (২২ গোল) পিছিয়ে আছেন এই দক্ষিণ কোরিয়ান ফরোয়ার্ড।

ম্যাচের বাকি সময়ে ব্যবধান বাড়ানোর আরও সুযোগ পেয়েছিল কন্তের দল, তবে সেগুলো হেলায় হারিয়েছে তারা। এই জয়ে ৩৬ ম্যাচ থেকে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে এখনো চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে আর্সেনাল, আর সমান সংখ্যক ম্যাচ থেকে ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পাঁচে রয়েছে টটেনহাম। এই জয়ের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দৌড় আবারও জমিয়ে দিল কন্তের দল।

এইচএমএ