মাকড়সা নিয়ে এই গল্পটা আমরা কমবেশি সবাই শুনেছি। রবার্ট ব্রুস একাধিকবার স্কটিশদের ঐক্যবদ্ধ করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু বারবার তিনি পরাজিত হতে থাকেন। এক পর্যায়ে সবকিছু হারিয়ে একটি গুহায় আশ্রয় নেন। সেখানে দেখেন একটি মাকড়সা প্রবল বাতাসের মুখে একশত বার চেষ্টা করার পর জাল বুনতে সক্ষম হলো। ক্ষুদ্র মাকড়সার জাল বোনা দেখে তিনি উপলব্ধি করেন, সফল হতে হলে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই।

‘আমি দরজায় আছি, হয়তো আরেকটু কষ্ট করলে দলে ঢুকতে পারি। কষ্ট করা ছেড়ে দিলে ছিটকে যাব।’- সপ্তাহ দুয়েক আগে এভাবেই বলেছিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার ইয়াসিন আলী রাব্বি। রবার্ট ব্রুস আর রাব্বি গল্পটা হয়তো এক নয়, তবে যে ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে এখনো নিজেকে সামলে রেখেছেন রাব্বি, সেটি আর পারেই বা কজন?

অনেকেই বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে অবহেলিত ক্রিকেটারের নাম ইমরুল কায়েস। তারা রাব্বি ক্ষেত্রে কি বিশেষণ ব্যবহার করবেন? প্রায় আড়াই বছর ধরে জাতীয় দলের ভাবনায়, একাধিকবার ডাক পেয়েছেন তিন ফরম্যাটের দলে, তবে ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ছিল না তার। অবশেষে আসলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকের হাত থেকে অভিষেক ক্যাপটি মাথায় তুললেন।

সেই ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের দল দিয়ে শুরু। এরপর গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের প্রাথমিক স্কোয়াডেও জায়গা হয় ইয়াসির আলী রাব্বির। করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রত্যাবর্তন সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে থেকেও জায়গা মিলেনি চূড়ান্ত স্কোয়াডে। ছিলেন টেস্ট সিরিজেও। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি।

রাব্বির ভাগ্যের শিকে ছেড়েনি এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা সফরেও। ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ডাক পেয়েও ব্রাত্য ছিলেন। ছিলেন চলতি বছরের মাঝামাঝি জিম্বাবুয়ে সফরের টেস্ট দলেও। বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ডাক পান। আবার উপেক্ষিত এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

অবশেষে সাগরিকার পাড়ে দুদণ্ড স্বস্তির নিঃশ্বাস ২৫ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়া রাব্বি জাতীয় দলের কাঙ্ক্ষিত ক্যাপটি মাথায় তোলার সুযোগ পেলেন ঘরের মাঠ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। রাব্বির অভিষেকের চাপ অনুভূত করছে তার পরিবারের সদস্যরা।

রাব্বির চাচা সাবেক ক্রিকেটার কায়সার আলী চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বললেন, ‘সরাসরি মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে দেখলে ওর মধ্যেই যেমন চাপ অনুভূত হবে তেমনি আমাদের চাপ থাকবে। তবে যেহেতু আমরা সবাই এমুহূর্তে চট্টগ্রামে আছি, ওর ব্যাটিংয়ের সময় হয়তো চলে আসতে পারি।’

দীর্ঘদিন জাতীয় দলের সঙ্গে থেকেও উপেক্ষিত রাব্বিকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে দেয়নি তার পরিবার। এজন্য রাব্বির চট্টগ্রামের বাড়িতে তার সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করতেন না কেউই। সে বাড়িতেই আজ (২৬ নভেম্বর) উৎসবের আমেজ।

কায়সার বললেন, ‘বলার অপেক্ষা রাখে না এটা যে অসাধারণ অনুভূতি। আপনাদের মাধ্যমে সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি সে যেন পারফর্ম করে জাতীয় দলের জায়গা ধরে রাখতে পারে। তাকে নিয়ে সবাই আশাবাদী। কোচ, ক্রিকেটাররা, ম্যানেজমেন্ট, নির্বাচকদের ধন্যবাদ জানাই।’

সঙ্গে যোগ করেন কায়সার, ‘নিজে যে মাঠে খেলে বড় হয়েছে সে মাঠে অভিষেক, অবশ্যই ভালো ব্যাপার। সবারই একটা স্বপ্ন থাকে পরিচিত পরিবেশে যেন অভিষেক হয়। চট্টগ্রামেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হচ্ছে, সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে আমি মনে করি এটা রাব্বির জন্য ইতিবাচক দিক। হয়তো তার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। এজন্যই চট্টগ্রামে অভিষেক হলো।’

এখনো পর্যন্ত ৫৭ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে রাব্বির রান ৫০.৩৭ গড়ে প্রায় ৪ হাজার (৩৯৮০)। ৯ সেঞ্চুরির সাথে আছে ২৪ ফিফটি। ৭৭ টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ৩৪.৭৭ গড়ে রান ১৮৭৮। ৫৪ স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ১২৩.৫৮ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১১৫৮ রান।

টিআইএস